Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
কুদ্দুস পরিবারের হাতে তছরুপ ২০০ কোটি টাকা [ অনলাইন ] 16/04/2024
কুদ্দুস পরিবারের হাতে তছরুপ ২০০ কোটি টাকা
নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে গ্রাহকদের প্রিমিয়ামের ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা তছরুপ করেছেন সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাত পরিচালক। বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র নিয়োগ করা অডিট ফার্ম হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি সম্প্রতি তাদের তদন্তে এ অনিয়ম-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপরই গত ৪

এপ্রিল অর্থ তছরুপসহ পরিচালকদের নানা অনিয়ম নিয়ে কোম্পানির বক্তব্য জানতে চায় সংস্থাটি। পাশাপাশি সন্তোষজনক জবাবে ব্যর্থ হলে প্রশাসক নিয়োগের কথাও জানিয়েছে আইডিআরএ। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের কাছে পাঠানো আইডিআরএ’র এ চিঠি প্রতিদিনের সংবাদের হাতে এসেছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, বিমা গ্রাহকদের প্রিমিয়ামের ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস পরিবারের সাতজন, যারা সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক। যেসব খাত দেখিয়ে এ পরিচালকরা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন, সেসবের বিস্তারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কোম্পানির এফডিআর জামানত রেখে ঋণ নিয়ে পরিচালকদের শেয়ারের মূল্য পরিশোধ : চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির জন্য উদ্যোক্তা পরিচালকরা ১ কোটি ৫ লাখ শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নগদ অর্থের মাধ্যমে শেয়ার ধারণের শর্তে শেয়ার ইস্যুর এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। কিন্তু পরিচালক নূর-ই-হাফজা, ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের পক্ষে ফজিলাতুননেসা, শাফিয়া সোবহান চৌধুরী ও শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলের কাছ থেকে কোনো টাকা না নিয়েই তাদের ৯১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে যার মোট মূল্য ৯ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে কোম্পানির এফডিআর লিয়েন রেখে সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওই ব্যাংকে কোম্পানির সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকাসহ ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। পরে ব্যাংকটিতে কোম্পানির আরেক হিসাব নম্বরে সেই টাকা জমা করে প্রতিষ্ঠানটি। এ টাকা উল্লিখিত পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের মূল্য হিসেবে দেখানো হয়। এর মাধ্যমে পরিবারের সাতজন সদস্য কোম্পানির বোর্ডে পরিচালক রেখে পারিবারিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে সোনালী লাইফের অর্থ : চিঠি থেকে জানা গেছে, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্যুনিকেশন লিমিটেড, ড্রাগন সোয়েটার লিমিটেড, ইম্পেরিয়াল সোয়েটার লিমিটেড ও ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডকে বিভিন্ন সময়ে ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। আইডিআরএ’র অনুমোদনের আগে এ ধরনের টাকা পরিশোধ ‘অবৈধ’। প্রকৃতপক্ষে কোম্পানির ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে প্রদান করা হয়। জমি/ভবন ক্রয়ের অগ্রিম হিসেবে বৈধতা দেওয়ার অপপ্রয়াস নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি ‘মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, ল্যান্ড ওনার’ শিরোনামে, ‘অ্যাডভান্স অ্যাগেইন্সট ল্যান্ড’ শিরোনামে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর, ‘সোনালী লাইফ টাওয়ার’ শিরোনামে একই বছরের ১ অক্টোবর এসব টাকা অগ্রিম প্রদান করা হয়। তখন পর্যন্ত এ নিয়ে সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ ও মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মধ্যে কোনো সমঝোতা চুক্তি হয়নি। সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ে ও অর্থ প্রদানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার লিখিত অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেসব নিয়মণ্ডনীতির তোয়াক্কা করেনি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ। পারিবারিক কর্তৃত্ব থাকায় বোর্ড অব ডিরেক্টরস থেকেও কোনো দ্বিমত আসেনি।

অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে সোনালীর টাকা নিজের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লোপাট : কোম্পানির তহবিল থেকে ২০২১-২৩ মেয়াদে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ড্রাগন সোয়েটার লিমিটেডকে সোয়েটার ক্রয় বাবদ ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ইম্পেরিয়াল স্যুটস অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারকে আপ্যায়ন বাবদ ১ কোটি ৭৮ লাখ ৬২ হাজার ৫৯২ টাকা এবং ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্যুনিকেশন লিমিটেডকে ইআরপি মেইনটেনেন্স ও সোয়েটার ক্রয় বাবদ ৩ কোটি ৪২ লাখ ৬ হাজার ২২৫ টাকা অর্থাৎ ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৭ টাকা অবৈধভাবে প্রদান করা হয়।

পরিচালক হয়েও প্রতি মাসে নিতেন বেতন : চিঠিতে বলা হয়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিজে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা ও তার পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে বড় মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, ছোট মেয়ে তাসনিয়া কামরুন অনিকা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকা, ছেলের বউ শাফিয়া সোবহান চৌধুরী প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা, স্ত্রী ফজিলাতুননেসা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা ও ছোট মেয়ের জামাই শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা এবং আরেকজন সাবেক চেয়ারম্যান নুর এ হাফজা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে ৮ পরিচালক অবৈধভাবে বেতন ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। যা নগদ উত্তোলন করে তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছে।

কোম্পানির টাকায় বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় : বিমা আইন অনুসারে, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মধ্যে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইওর গাড়ি কেনার নির্দেশনা থাকলেও শুধু চেয়ারম্যানের জন্যই ১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় ২০১৮ সালের ৬ মে ‘অডি’ ব্র্যান্ডের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ- ১৭-৩৬৯৫০) কেনা হয়। এ ছাড়া গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২০২১-২৩ মেয়াদে ২১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা খরচ করা হয়। অথচ এ বিষয়ে কোম্পানির বোর্ডের কোনো অনুমোদন ছিল না। এমনকি অর্ধবার্ষিক সভায় বা এজিএমেও এ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি।

পরিবারের সদস্য পরিচালকদের অতিরিক্ত লভ্যাংশ প্রদান : ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য যথাক্রমে ৫, ১০, ১০, ১৫ ও ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য নিরীক্ষকদের চাহিদা অনুসারে ভাউচার ও অন্যান্য ডকুমেন্টস সরবরাহ করেনি সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ। এ লভ্যাংশের বাইরেও অতিরিক্ত ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা রুপালী ইন্স্যুরেন্সকে এবং সাবেক চেয়ারম্যান নূর ই হাফজাকে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ ১ কোটি ৬০ লাখ ১১ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

গ্রাহকের অর্থে পরিচালকদের ব্যক্তিগত চিকিৎসা, শিক্ষা ও ভ্রমণ : আইডিআরএ’র চিঠি থেকে জানা যায়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অবৈধভাবে কোম্পানির তহবিল থেকে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ২৮০ টাকা ব্যয় করেছেন। এর মধ্যে বিদেশে অবস্থান করে নিজের চিকিৎসা বাবদ ১ কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা, ভ্রমণ ও শপিং বাবদ ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮০ টাকা এবং মেয়ের বিদেশে পড়ালেখার ব্যয় বাবদ ৪৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়।

গ্রুপ বিমা পলিসি থেকে ছোট জামাতাকে অবৈধভাবে কমিশন প্রদান : ছোট মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকার স্বামী ও কোম্পানির পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল গ্রুপ বিমার পলিসি থেকে অবৈধভাবে ৯ লাখ টাকা কমিশন নেন। আবার যখন পরিচালক ছিলেন না, সে সময় ১১টি বোর্ড সভায় অবৈধভাবে অংশগ্রহণ করে ৮৮ হাজার টাকা সম্মানী নেন। এ ছাড়া পরিচালক না হয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সিগনেটরি হয়ে সিইওর সঙ্গে যৌথভাবে চেক স্বাক্ষর করেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। নমুনা হিসেবে দেখা যায়, তার যৌথ স্বাক্ষরে বিভিন্ন তারিখের ১১টির চেকের মাধ্যমে ৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং এসব অর্থই মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে।

কোম্পানির অর্থে ব্যক্তিগত ব্যাংক ঋণ, এসি ও কোরবানির গরু ক্রয় এবং বিদেশ ভ্রমণ : মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ব্যক্তিগত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ, গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএকে অনুদান, ছোট মেয়ের জন্য এসি ক্রয়, বিবাহবার্ষিকীর উপহার, সোনালীর সিইওর জন্মদিন উদযাপনের ডেকেরেশন-ডায়মন্ড রিং ক্রয়, কোরবানির জন্য গরু ও এতিমখানার জন্য গরু ক্রয়, পরিবারের চিত্ত-বিনোদন ও বিদেশ ভ্রমণেও গ্রাহক প্রিমিয়ামের অর্থ ব্যয় করেছেন। চিঠি থেকে জানা যায়, ব্যক্তিগত ঋণ সমন্বয় বাবদ ২০১৬-১৮ সালে দুই বছরে ১১টি ভাউচারে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে ৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৯ টাকা নিয়েছেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান মনে করছে, এই টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস সরাসরি নিয়েছেন ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিজিএমইকে অনুদান ৫২ হাজার ৫০০ টাকা, এসি ক্রয় ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা, বিবাহবার্ষিকীর উপহার ১৫ লাখ টাকা, সিইওর জন্মদিন উদযাপনে ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, চেয়ারম্যানের কোরবানির গরু ও এতিমখানার জন্য গরু ক্রয়ে ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা, পারিবারিক বিনোদনে ব্যয় ৩ লাখ ৪২ হাজার ২৪০ টাকা, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বিদেশ ভ্রমণে ব্যয় ৪ কোটি ৯৮ লাখ ১৪ হাজার ৩৬১ টাকা, আইপিও ব্যায়ের নামে অতিরিক্ত ১ কোটি টাকা, পলিসি নবায়ন উপহার বাবদ ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকাসহ ৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা অবৈধভাবে ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

অফিস ভাড়ার নামে ড্রাগন আইটিকে অর্থ প্রদান : কোম্পানির অফিসের জন্য মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ইম্পেরিয়াল ভবনের ২০১৩ সালে ৫টি, ২০১৪ সালে ৭টি, ২০১৫ সালে ৯টি ও ২০১৬ সালে ১০টি এবং ২০১৭ সালে ১৬টি ফ্লোর ভাড়ার চুক্তি দেখিয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভাড়া বাবদ ১১ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার ১৭ টাকা অবৈধভাবে ড্রাগন আইটিকে প্রদান করা হয়েছে। অডিট প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসির মতে, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি নতুন কোম্পানির জন্য অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় পরিমাণ ফ্লোর স্পেস ভাড়া দেখিয়ে অবৈধভাবে এসব টাকা নেওয়া হয়েছে।

একই ভবনে অন্য অফিস থাকলেও পুরো ভবনের ইউটিলিটি বিল সোনালীর অর্থে পরিশোধ : আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়েছে, ইম্পেরিয়াল ভবনে ইম্পেরিয়াল ক্যাফে, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইম্পেরিয়াল স্যুটস অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার, স্টার্লিং স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ইম্পেরিয়াল হেলথ ক্লাব (জিম) রয়েছে। শুধু ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়া অন্য অফিসগুলোর ভাড়া-সংক্রান্ত কোনো তথ্য অডিটরকে সরবরাহ করা হয়নি। অথচ পুরো ইম্পেরিয়াল ভবনের বিদ্যুৎ ও ওয়াসার বিল সোনালী লাইফ থেকে অবৈধভাবে পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিপিডিসির প্রাপ্ত ৩৪টি বিল ও ঢাকা ওয়াসার প্রাপ্ত দুটি বিলের মাধ্যমে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ২২৩ টাকা পরিশোধ করেছে সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ।

সোনালীর টাকায় ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিংয়ের কর পরিশোধ : কোম্পানির সিস্টেম জেনারেটেড ভাউচার থেকে দেখা যায়, ড্রাগন সোয়েটার ও ড্রাগন স্পিনিং লিমিটেডের ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়েছে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর উপ-কর কমিশনার, সার্কেল-২২৮, জোন-১১ অনুকূলে পরিশোধ করা হয়েছে। অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তদন্ত কার্যক্রম সীমিত রেখে নমুনাভিত্তিক যাচাইয়ের ফলে সব অনিয়মের তথ্য প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। এজন্য কোম্পানিটির বিস্তারিত নিরীক্ষা প্রয়োজন। মূলত অসম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য গোপন, অস্বচ্ছ হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোল সিস্টেমের অনুপস্থিতির কারণে অর্থ আত্মসাতের সহায়ক অবস্থা তৈরি করেছে। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ব্যাংক সিগনেটরিরা প্রায় সবাই একই পরিবারের সদস্য, যার ফলে তাদের স্বাক্ষরিত চেকের মাধ্যমে বেশির ভাগ অবৈধ লেনদেন হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বিমাকারী ও বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে বিমা আইনের ৯৫ ধারা অনুসারে কোম্পানির বোর্ডকে সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে আইডিআরএ’র চিঠিতে। তবে এর আগে এসব অনিয়মের বিষয়ে কোম্পানির কোনো বক্তব্য থাকলে তা ১৭ এপ্রিলের মধ্যে লিখিতভাবে আইডিআরএকে জানানোর কথা বলা হয়েছে। তবে আইডিআরএ’র তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।

অভিযুক্ত কোম্পানির বক্তব্য : ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আপনারা যেভাবে লেখেন, সমস্যা নেই। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। আর এমনতো নয় যে, আপনারা আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন না। আপনাদের সঙ্গে আমাদের কাজ তো আছেই। এ ছাড়া আমরা এমন কিছু বিষয়ে নেগোসিয়েশনের মধ্যে আছি যে, এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ কম। এমনিতেই এখন আমাদের সার্ভাইভ করতে হবে, যেহেতু আমরা আমানত নিয়ে কাজ করি।

১৮৬ কোটি টাকার বিপরীতে যে বিশাল পরিমাণ বিমা কভারেজ রয়েছে, সেগুলো কীভাবে সামাল দেবেন- এমন প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত সিইও বলেন, এসব ঘটনা (অনিয়মগুলো) আসলেই হয়েছে কি না, সেটা তো তদন্ত করা দরকার। আইডিআরএ’র তদন্তে উঠে আসা মানেই তো ফাইনাল কিছু না। এখানে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। সেসবের ব্যাখ্যাও আমাদের সঙ্গে আছে। এখানে ১৭টি বিষয়ের ওপর অডিট হয়েছে, ওভার অলতো আর হয়নি।

আইডিআরএ মুখপাত্র যা বললেন : সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক সিইওর অভিযোগের পূর্বে অনিয়ম ধরতে না পারাটা আইডিআরএ’র ব্যর্থতা কি না- এমনটা জানতে চাওয়া হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে। সংস্থাটির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আইডিআরএ’র প্রচেষ্টা ও সফলতার কারণেই এই অনিয়মগুলো উদঘাটিত হয়েছে।

রাশেদ বিন আমানের অভিযোগের পূর্বে আইডিআরএ’র এক্সটার্নাল অডিটে এসব অনিয়মের তথ্য উদঘাটিত হয়নি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সব ধরনের মানুষ সমান এক্সপার্ট নয়। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা এসব তথ্য তৈরি করেন তারা এমবিএ করা, এফসিএ ডিগ্রি বা আরো বড় ডিগ্রিধারী। ফলে তারা যেভাবে তথ্য গোপন বা উন্মোচন করতে পারেন, সেটা অন্যরা পারেন না। আইডিআরএ’র দক্ষ লোকবলের অভাব আছে।

সেক্ষেত্রে যাদের মাধ্যমে অডিট হয়, তারা কেন সমস্যা উদঘাটন করতে পারেনি, এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট অডিট প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো হয় কি না- এমন প্রশ্নে বলেন, সার্বিক বিষয়ের ওপর সাধারণত অডিট হয় না। আমরা যেকোনো নির্দিষ্ট বিষয়, যেমন- ব্যবস্থাপনা ব্যয় বা বিমা দাবি নিষ্পত্তি নিয়ে অডিট করি। ফলে অডিটরের ফোকাস শুধু ওই বিষয়গুলোর ওপরেই থাকে। বাকি বিষয়গুলোয় হয়তো তাদের ফোকাস করার সুযোগ হয় না।

তিনি বলেন, আইডিআরএ’র লোকবল সংকট রয়েছে। বিমা বাজার অনুসারে ন্যূনতম ১ হাজার লোক দরকার, কিন্তু হিসেব করলে ১০০ জন লোকও নেই। ফলে একজন ব্যক্তিকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যে কারণে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর দক্ষতা গড়ে ওঠার সুযোগ হয় না।

আত্মসাৎ করা টাকা উদ্ধারে আইডিআরএ কোনো পদক্ষেপ নিবে কি না- জানতে চাইলে তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সাধারণত এসব ক্ষেত্রে আমরা পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে থাকি। তা ছাড়া টাকা ফেরত আনার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমাদের প্যানেল আইনজীবী আছেন, তাদের মতামত নিয়ে তারা যেভাবে নির্দেশনা দেন, সেভাবে আইডিআরএ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। গ্রাহকের বিমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে বা আর্থিক তহবিলের ঘাটতি হলে কোম্পানির বিক্রয়যোগ্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বিক্রি করে গ্রাহকের দাবি নিষ্পত্তি করা হবে।

নিরীক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী সোনালী লাইফে বিশদভাবে অডিট করার কোনো ব্যবস্থা আইডিআরএ নেবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইডিআরএ অডিট রিপোর্ট বিচার-বিশ্লেষণ করে এবং ম্যারিট যাচাই করে যদি পরে আবারও অডিট দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে, তবে হয়তো আরো বৃহত্তর পরিসরে অডিট দেবে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved