Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
এবার বেসিক ব্যাংকের মালিকানায় ধূম্রজাল [ পাতা ১ ] 19/04/2024
এবার বেসিক ব্যাংকের মালিকানায় ধূম্রজাল
বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরুর আগেই বেসিক ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। আর এই ধূম্রজালে ঘি ঢেলেছে গণমাধ্যমে আসা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি বক্তব্যে। আর্থিক খাতের এই অভিভাবক বলছে- বেসিক ব্যাংক সরকারের কোনো ব্যাংক অর্ডারের দ্বারা স্থাপিত ব্যাংক নয়। অর্থাৎ ব্যাংকটির শতভাগ শেয়ারের মালিকানা সরকারের হাতে থাকলেও এটি কোনো আইন বা আদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ কারণে বেসিক ব্যাংককে সরকারি বলতে নারাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে বেসিক ব্যাংক সরকারি, নাকি বেসরকারি তা নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন পর্যবেক্ষণে জনমনে নেতিবাচক ধারণা ও গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ সংবলিত বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। এতে কীভাবে বেসিক ব্যাংক শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক হলো, তা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে।

এদিকে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংক বেসরকারি মালিকানায় চলে যাচ্ছে- এমন খবর গণমাধ্যমে আসার পর থেকে ব্যাংকটি থেকে আমানত তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। এরই মধ্যে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থায়নের জন্য ১৯৮৮ সালে কোম্পানি আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় বেসিক ব্যাংক। বিসিসি ফাউন্ডেশনের ৭০ শতাংশ ও সরকারের ৩০ শতাংশ মালিকানা নিয়ে ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। পরে বিসিসি ফাউন্ডেশন অকার্যকর হয়ে পড়ায় ১৯৯২ সালে বেসিক ব্যাংকের শতভাগ মালিকানা গ্রহণ করে সরকার। এর পর থেকে সরকারি মালিকাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে সরকারি আর্থিক সেবা প্রদান করে আসছিল, যা ২০১৫ সালে পুরোপুরি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে রূপান্তরিত হয়।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য হলো- সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালীর মতো বেসিক ব্যাংক কোনো ব্যাংক অর্ডার দ্বারা স্থাপিত হয়নি। অর্থাৎ বেসিক ব্যাংক কোনো আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সরকার যেমন অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ধারণ করে, তেমনি বেসিকেরও শেয়ার ধারণ করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমে এমনই বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংক আর বেসিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- সরকার যেটি রেভিনিউ থেকে দেয় সেটিই সরকারি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে সরকারের বাণিজ্যিক কাজের জন্য প্রতিষ্ঠিত করা। বেসিকও তেমন একটি প্রতিষ্ঠান। বেসিক বিশেষায়িত একটি ব্যাংক ছিল, যেটি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল। এটি কিন্তু ব্যাংক হিসেবে সরকারের আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়। সোনালী ব্যাংকের যেমন ব্যাংক অর্ডার আছে, বেসিকের তেমন নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্রের এমন পর্যবেক্ষণের পর জনমনে নেতিবাচক ধারণা ও গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে গতকাল নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি প্রতিবাদ বিবৃতি পাঠিয়েছে বেসিক ব্যাংক। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গেজেট, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিপত্রের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংককে শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তা ছাড়া আদালতের রায়ে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে সরকারি কর্মচারী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। বর্তমানে দেশে কার্যরত রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলো যে বিধিমালা ও নীতিমালার আওতায় পরিচালিত হচ্ছে, শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকও একই বিধিমালা ও নীতিমালার আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বিডিবিএল যে সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় (অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত) পরিচালিত হচ্ছে, শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডও একই সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় (অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত) পরিচালিত হচ্ছে।

নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে সরকারি নথিপত্রও সরবরাহ করেছে বেসিক ব্যাংক। এটি দেখা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ব্যাংকিংনীতি শাখা-১ হতে জারিকৃত পত্রে (নম্বর অম/অবি/ব্যা. নী. শাখা-১/১১(৩৯)/৯৭/অংশ-১/২১৩ তারিখ : ৩০.০৮.২০০৩) বেসিক ব্যাংকের প্রকৃত স্ট্যাটাস উল্লেখ করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের ১০০ ভাগ মালিকানা সরকারের এবং ব্যাংকটি কোম্পানি আইনে নিবন্ধনকৃত। সুতরাং বেসিক ব্যাংক সাধারণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে প্রশাসনিক, আর্থিক ও ব্যবসায়িক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, সেটিই যুক্তিসংগত। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের তালিকায় বেসিক ব্যাংকের নাম রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটেও রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের তালিকায় বেসিক ব্যাংকের নাম রয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে মেসেজ পাঠিয়ে বক্তব্য চাওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি আবু মো. মোফাজ্জল আমাদের সময়কে বলেন, আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই- আগে কে কী ছিল সেটি মুখ্য নয়; বরং বর্তমান স্ট্যাটাস কী সেটিই মুখ্য বিষয়। যেমন- আগে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক-এই চারটিকে ন্যাশনালাইজড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা এনসিবি বলা হতো। এখন ওই চারটিসহ মোট ছয়টি ব্যাংকে স্টেট-ওনড কমার্শিয়াল ব্যাংক (এসওসিবি) বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক বলা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার খবর বের হওয়ার পর আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও অনাস্থা কাজ করছে। এরই মধ্যে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার আমানত তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগামীতে আরও আমানত তুলে নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গত বুধবার বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত এমডি বলেন, যেহেতু বেসিক ব্যাংকের মালিক সরকার, সে জন্য পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের আলোকে এ বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ চেয়ে আজ (গতকাল) অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চাচ্ছেন না বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর পরিবর্তে সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই দাবিতে অর্থ মন্ত্রণালয়েও স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved