Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
হাতে হাতে যাচ্ছে ব্যাংকের টাকা [ Online ] 19/04/2024
হাতে হাতে যাচ্ছে ব্যাংকের টাকা
আস্থাহীনতাই দায়ী

ঋণের সুদের হার বাড়ানো সত্ত্বেও বাড়ছে না ব্যাংকের আমানত। বরং টানা চার মাস ধরে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা ধরে রাখছে মানুষ। ব্যাংক খাতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, ঋণ জালিয়াতিসহ নানা ধরনের খবর প্রকাশিত হওয়ায় ব্যাংক খাতে মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অতি সম্প্রতি ব্যাংক মার্জারের ঘটনা। সংস্কারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জ) করে দিচ্ছে। এতে এসব ব্যাংকের আমানতকারীরা আতঙ্কে আমানত তুলে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে দফায় দফায় ঋণের সুদের হার বাড়ানো হলেও ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা আমানত হিসেবে ব্যাংকে ফেরানো যাচ্ছে না।

ব্যাংক থেকে মানুষ টাকা তুলে নেওয়ার পর যা আর জমা হয়নি, তা-ই ব্যাংকের বাইরে রাখা টাকা হিসেবে পরিচিত। এই টাকা মানুষ নিজের কাছে রাখছেন, খরচ করছেন অথবা কোনো সমিতিতে রাখছেন। এভাবে টাকা মালিকের নিজের হাতে কিংবা এক হাত থেকে অন্য হাতে ঘুরলেও ব্যাংকে ফিরছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, সবশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকের বাইরে ছিল ২৭৯ কোটি টাকা। এর আগে গত নভেম্বরে ব্যাংকের বাইরে ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বরে সেটি আরও বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে কিছুটা কমে ২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ছিল। এত পরিমাণ অর্থ ব্যাংকের বাইরে রেখে কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, অন্যান্য দেশে নগদ অর্থের লেনদেন কমলেও বাংলাদেশে অনিয়ম ও দুনীতি বাড়ায় নগদ অর্থের লেনদেনও বাড়ছে। মূলত নির্বাচনের কারণেই নভেম্বর মাস থেকে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ অর্থ রাখার প্রবণতা বেশি হতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকটি ব্যাংকের সাম্প্রতিক তারল্য সংকট ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত নেতিবাচক খবর মানুষের মনে ব্যাংকের প্রতি অনাস্থার জন্ম দেয়। এ ছাড়া সম্প্রতি মার্জার আতঙ্কও মানুষের মধ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। ফলে তারা ব্যাপক হারে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনে ঘরে জমা রাখে। আবার বাংলাদেশের বর্তমান বাজার ব্যবস্থায়ও নগদ অর্থের চাহিদা ব্যাপক। যে কোনো ডিজিটাল লেনদেনের ওপর করারোপ করা হয়। ফলে সাধারণ মানুষ নগদ টাকায় কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। গুটিকয় শপিংমল আর হোটেল-রেস্টুরেন্ট বাদ দিলে দেশের কোথাও ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা নেই। দোকানিরাও চান লেনদেন নগদে হোক। তা ছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ হস্তান্তর করলে তার ওপর শুল্ক দিতে হয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতিটি লেনদেনে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এ কারণে সাধারণ মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে এবং নগদ লেনদেন করছে। অসাধু ব্যবসায়ী, অসৎ কর্মচারী এবং চোরাকারবারিরাও ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে আগ্রহী নয়। এ কারণেও ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়ছে। এর ফলে অবারিত হচ্ছে ছায়া অর্থনীতির দ্বার। সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক যে মুদ্রানীতির কথা বলছে, সেটি কোনোভাবেই বাস্তবায়ন হবে না। কারণ একশ্রেণির মানুষ প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকা ধরে রেখেছে। এ অবস্থায় সুদহার বাড়িয়ে কিংবা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে এখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোনো দেশে দুর্নীতি বাড়লে সেখানে নগদ অর্থের চাহিদাও বাড়ে। বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রেই ঘুষ, দুর্নীতিসহ কালো টাকার দৌরাত্ম্য বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে এই ধরনের লেনদেনই নগদ টাকায় হচ্ছে। এ কারণে এখানে নগদ অর্থের চাহিদা কমছে না, বরং বাড়ছে। সরকারি কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালীরা নগদ অর্থই ঘরে স্তূপ করে রাখছেন। তারা নগদ টাকা দিয়েই কোটি কোটি টাকার লেনদেন করছেন। তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্বেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ায় নগদ অর্থের চাহিদা কমে আসছে। কিন্তু আমাদের দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ব্যাংক খাতের ব্যাপ্তি অনেক বড় হলেও নগদ টাকার চাহিদা কমছে না। এটি অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক খাতের ব্যর্থতা। বিশ্বব্যাপী মানুষ এখন কার্ড কিংবা প্লাস্টিক মানিতে লেনদেন করছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও মানুষ বাজার-সদাই করার ক্ষেত্রে কার্ড ব্যবহার করছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সেটি হয়নি। দেশের বড় পাইকারি বাজারগুলোয় এখনো নগদ লেনদেন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, মুদ্রা অবমূল্যায়নের কারণেও ব্যাংকের বাইরে টাকা বেশি থাকতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ কোনো উৎসব এবং অনুষ্ঠান উপলক্ষেও নগদ টাকার চাহিদা বাড়তে পারে। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচন এবং ঈদ কেন্দ্র করেও নগদ টাকার চাহিদা কিছুটা বেড়ে থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু নীতির কারণে সেই টাকা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। যার ফলে ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকের আমানতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। নীতি সুদহার বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে আমানতের সুদহারও বাড়ছে। এ কারণে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহিত হচ্ছেন। ইস্যুকৃত নোট বাড়লেও সেটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা, যা আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে রয়েছে ২৭৯ কোটি টাকা। এর আগে জানুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে ছিল ২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে ছিল ৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসেও ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর আগে গত মে মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮২৯ কোটি। জুনে ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯১ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসেই ব্যাংকের বাইরে চলে যায় ৩৬ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, যা সর্বোচ্চ। এত পরিমাণ টাকা ব্যাংকের বাইরে থাকার পরিপ্রেক্ষিতেই গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকেই ঋণের পাশাপাশি আমানতের সুদহারও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। এর পর থেকে ব্যাংকের বাইরে টাকা রাখার প্রবণতাও কমে আসছিল। সুদহার বাড়ানোর ফলে জুলাইতে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ কমে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকায় নেমে আসে। তা আগস্টে আরও কমে হয় ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ নেমে আসে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৫ কোটিতে, যা অক্টোবরে আরও কমে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকায় নামে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved