Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোন পথে? [ অনলাইন ] 20/04/2024
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোন পথে?
টেকসই উন্নয়নের ধারণা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রচার লাভ করে মূলত ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলন অব্যবহিত পর। সহজাত কারণেই মানুষ উন্নয়নপ্রত্যাশী এবং এ উন্নয়নের নেশায় নিজের অস্তিত্বের জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন তাকেও বিপর্যস্ত করতে দ্বিধাবোধ করে না। উন্নয়ন যখন সবকিছুর ওপরে স্থান করে নিয়েছে তখন দেখা গেল উন্নয়ন ঘটাতে গিয়ে মানুষ তার চারপাশকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলেছে। বিত্ত-বৈভব, আরাম-আয়েস এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য মানুষ তার চারপাশের প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাটি, পানি, বাতাস সবকিছুকে করে তুলছে বিষাক্ত। বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং পরিবেশ দূষণের বিরাট চক্রে পৃথিবী দিন দিন জীবের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং এর পেছনে রয়েছে অপরিকল্পিত উন্নয়ন। অপরিকল্পিত উন্নয়নে কার্যত উন্নয়ন টেকসই হচ্ছে না, বরং বাড়ছে দারিদ্র্য, বৈষম্য। তাই নিজের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই মানুষকে উন্নয়নের লাগাম টেনে একে টেকসই উন্নয়নে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন একটি নীতি, যার মূল লক্ষ্য মানব উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে সক্ষম করে মানুষের প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বাস্তুতান্ত্রিক তথা ইকোসিস্টেম সেবা প্রদান করা। টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষ তার জীবনধারণ এবং প্রয়োজনে প্রাকৃতিক সম্পদ এমনভাবে ব্যবহার করতে চায়, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট সম্পদ থাকে এবং ধরিত্রীর স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। টেকসই উন্নয়ন কার্যত অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক কল্যাণের মধ্যে একটি স্থিতিস্থাপক ভারসাম্য রক্ষা করে। ১৯৮৭ সালে ব্রান্ডল্যান্ড কমিশন টেকসই উন্নয়নকে অনেকটা সহজভাবে প্রকাশ করেছে, যার মতে টেকসই উন্নয়ন হলো ‘উন্নয়ন যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা মেটাতে সক্ষমতার সঙ্গে আপস না করে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে’।

পৃথিবীর মানুষ অপরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবেশ-প্রতিবেশে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, সে কারণেই টেকসই উন্নয়নের ধারণাটিকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয় এবং এটিকে বাস্তবায়নের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। যেটা শুরুতে বলেছিলাম, ধরিত্রী সম্মেলনে ১৯৯২ সালে টেকসই উন্নয়নের যে ধারণা ও প্রতিশ্রুতি ব্যাপ্তি লাভ শুরু করে তারই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০১৫ থেকে ২০৩০ সাল মেয়াদে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ঘোষণা করা হয়। মূলত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ঘোষণা আসে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে একীভূত এবং অবিভাজ্য বিষয়টির ব্যাখ্যাও প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের বৈঠকে ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে দারিদ্র্য, বৈষম্য, পরিবেশগত অবক্ষয়, শান্তি এবং ন্যায়বিচারসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা অন্যতম। ১৭টি অভীষ্ট ও ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা এবং ১৩৩টি নির্ধারক নিয়ে ‘সবার জন্য একটি ভালো এবং টেকসই ভবিষ্যৎ’ স্লোগানসমৃদ্ধ টেকসই উন্নয়নের এ ঘোষণা বিশ্ববাসীর জন্য আশাজাগানিয়া বটে।

এখানে টেকসই (সাসটেইনেবল) এবং টেকসইতা বা স্থায়িত্ব (সাসটেইনেবিলিটি) শব্দ দুটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। টেকসইতা বা স্থায়িত্ব একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, যেখানে অধিকতর টেকসই বিশ্বকে চিন্তা করা হয় আর টেকসই উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া যা টেকসইতা বা স্থায়িত্ব অর্জনের একটি পথ দেখায়। টেকসই উন্নয়ন নিয়ে যেমন অনেক কর্মযজ্ঞ, গবেষণা হচ্ছে তেমনি এটি নিয়ে সমালোচনারও অভাব নেই। অনেকে এটিকে একটি আপাতবিরোধী (প্যারাডক্সিক্যাল) ধারণা বলেও মনে করেন। বিশ্লেষকদের অনেকে আবার টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি নিয়েও হতাশ। বড় যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেটি হচ্ছে ‘টেকসই’-এর সংজ্ঞায়নটি ধারাবাহিক নয়। স্থান, কালভেদে এর সংজ্ঞায়নকে ভিন্নতা পেতেও দেখা যায়।

টেকসইতা বা স্থায়িত্ব সরলার্থে একটি সামাজিক লক্ষ্যও বটে, যা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ দীর্ঘকাল ধরে পৃথিবীতে সহাবস্থান করতে চায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ লক্ষ্য পরিবেশগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক এ তিন স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে একটির সঙ্গে অন্যটির রয়েছে গভীর সংযোগ। অনেকে আবার একে মানুষ, পৃথিবী ও লাভ—এ তিনের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলেও মনে করেন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্ব কতটা সামনে এগোল এবং তা পরিবেশ প্রতিবেশ সংরক্ষণে কী ভূমিকা রাখছে সেটা বিশ্লেষণ এখন সময়ের দাবি। বৈশ্বিক মহামারী, দেশে দেশে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত জরুরি অবস্থা, ভঙ্গুর অর্থনীতি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথকে দিন দিন কঠিন করে তুলছে। বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো কখনো এককভাবে কখনো সমন্বিতভাবে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে কিংবা বারবার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে। টেকসই উন্নয়নের উচ্চ স্তরের বার্ষিক রাজনৈতিক ফোরামে এ নিয়ে অনেক আলোচনা-পর্যালোচনাও হচ্ছে। ২০১৫ সালে সূচিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা নিয়ে সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে বিশ্ব নেতারা এমনকি ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত বিভিন্ন ফোরামে আলোচনায় মিলিত হচ্ছেন। হিসাবে অনেক গরমিল নিয়ে এসব সম্মেলন শেষও হচ্ছে।

২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণের পর থেকে ৩ হাজার ১০০-এর অধিক ইভেন্ট সংঘটিত হয়েছে, ১৩ শতাধিক প্রকাশনা হয়েছে এবং ১৭টি বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৫ হাজার ৫ শতাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। যদিও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময়কালের অর্ধেকেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে, তবুও অর্জনের এখনো অনেক বাকি। গড়পড়তায় হিসাব করলে দেখা যায়, উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য হ্রাস, শিশুমৃত্যু হ্রাস, বিদ্যুৎ প্রাপ্তি, কিছু রোগের বিরুদ্ধে সাফল্য। যদিও এসব সফলতা সুষমভাবে অর্জিত হয়নি। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র আছে যাদের অর্জন হয়তো লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে। টেকসই পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রসঙ্গ আসে এবং কীভাবে প্রকৃতি সবকিছুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে বৈচিত্র্যময় এবং উৎপাদনশীল থাকে সেটা গুরুত্ব পায়। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রকৃতির ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। আরেক দিকে প্রাকৃতিক সম্পদ যেহেতু পরিবেশ-প্রকৃতি থেকে পাওয়া যায় তাই সম্পদ আহরণ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। কেননা সম্পদ আহরণ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মাটি, পানি, বায়ু, যার সঙ্গে মিশে আছে প্রাণিকুলের অস্তিত্ব। পরিবেশগত প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ডিজাইন করা, যার মাধ্যমে মানুষের প্রয়োজন যেমন মেটানো যাবে তেমনি পরিবেশ প্রকৃতির ক্ষতি না করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়া যাবে। পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী রাখার জন্য প্রয়োজন টেকসই সম্পদ আহরণের সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন। যেমন ধরুন, জল এবং জলজ সম্পদের টেকসই ব্যবহার, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, নির্মাণকাজে পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বনভূমি উজাড় বন্ধ করা আমাদের উন্নয়নকাজের পূর্বশর্ত হওয়া উচিত। মোদ্দা কথা, পরিবেশের বিনাশ ঘটিয়ে, প্রকৃতির সর্বনাশ করে কোনো উন্নয়ন টেকসই হবে না।

ধারণা করা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ মানবসভ্যতা প্রতি বছর প্রায় ১৪০ বিলিয়ন টন খনিজ, আকরিক, জীবাশ্ম জ্বালানি, জৈব পদার্থ ব্যবহার করতে পারে (যা বর্তমান ব্যবহারের তিন গুণ), যদি না অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগের দ্বিগুণ হয়। উন্নত দেশগুলোর নাগরিকরা উল্লিখিত চারটি সম্পদ গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১৬ টন পর্যন্ত ভোগ করে। কোনো কোনো উন্নত দেশে এ ভোগের পরিমাণ জনপ্রতি বছরে প্রায় ৪০ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহারের মাত্রা থেকে অনেক বেশি। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের কথা বললেও কার্যত এ বিষয়ে তেমন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। বরং কপ সম্মেলনে আমাদের মতানৈক্য স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমরা বায়ুমণ্ডল দূষণরোধ, বিশ্ব উষ্ণায়ন হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে অনেক কথা বললেও এ বিষয়ে কাজে বিশ্বসী নই।

টেকসই উন্নয়নের জন্য ছয়টি স্বতন্ত্র স্বক্ষমতা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি পরিমাপ করার ক্ষমতা থাকা; প্রজন্মগুলোর মধ্যে ন্যায্যতা প্রচার; আকস্মিকতা এবং অভিঘাতের সঙ্গে অভিযোজন; সিস্টেমগুলো আরো টেকসই উন্নয়নে রূপান্তর করা; টেকসইতার জন্য জ্ঞানের সঙ্গে কাজের সংযোগ তৈরি করা; শাসন ব্যবস্থাকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যাতে জনগণ সমন্বিতভাবে একত্রে কাজ করে অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক সুশাসন নিশ্চিত করে। রাষ্ট্র এ ছয় সক্ষমতার কতটুকু ধারণ করছে তা পরিমাপের মাধ্যমেও বুঝতে পারা যায় তার টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোন পথে।

হারমান ডালি ১৯৯০ সালে টেকসই উন্নয়নে প্রায়োগিক কিছু মূলনীতির কথা বলেছেন। এ নীতিগুলো হলো: নবায়নযোগ্য সম্পদের টেকসই উৎপাদন অর্থাৎ উৎপাদনের চেয়ে আহরণ কোনোক্রমেই বেশি হবে না; অনবায়নযোগ্য সম্পদের সঙ্গে বিকল্প নবায়নযোগ্য সম্পদ থাকতে হবে; বর্জ্য উৎপাদন পরিবেশের আত্তীকরণের ক্ষমতাকে অতিক্রম না করা অর্থাৎ এ পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন না করা যা প্রাকৃতিকভাবে ব্যবস্থাপনা বা আত্তীকরণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। টেকসই উন্নয়নের পথে হাঁটতে হলে এ মূলনীতি ধারণ করা অতি জরুরি। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেমন শিল্প কৃষি এবং কৃষি ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত পরিবেশ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য টেকসই পরিবেশবান্ধব কৃষি, জৈব চাষ, অধিকতর টেকসই বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হচ্ছে একদিকে পরিবেশ রক্ষা ও অন্যদিকে টেকসই উন্নয়নের জন্য। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন এবং এ কারণে ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনের জন্য বনায়ন, টেকসই বন ব্যবস্থাপনা এবং বন উজাড় হ্রাস করার মতো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এও ঠিক যে, একই সময়ে উন্নয়নের জন্য বিশ্বের অনেক দেশে ভয়াবহ বন উজাড়ীকরণ, মাটি, পানি, বায়ুদূষণ, পাহাড় ধ্বংস, জলাভূমি ধ্বংসসহ নানা পরিবেশবিধ্বংসী কাজ চলমান রয়েছে। আদতে এসব উন্নয়ন টেকসই নয়। আপাত দৃষ্টিতে লাভজনক মনে হলেও এগুলো পরবর্তী সময়ে জীবের বসবাসের জন্য হুমকি হয়েই দাঁড়াবে। বর্তমানে উন্নয়নের স্বাদ লাভ করা সম্ভব হলেও ভবিষ্যতে চরম মূল্য দিতে হবে।

২০১৯ সালে এসডিজি সম্মেলনে একটি বিষয় আলোচিত হচ্ছিল যে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বের অনেক দেশের সন্তোষজনক অর্জন হচ্ছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে যে প্রাপ্তি তা ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। এটিও বলা হচ্ছিল যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যে গতিতে কাজ করা দরকার সেটি হচ্ছে না। আরেকটি বিষয় হলো, যেসব প্রতিশ্রুতি রাষ্ট্রগুলো দিয়েছিল সেসবের বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব সমাজের সব অংশকে একত্র হওয়ার এবং তিনটি স্তরে একটি ‘কর্ম দশকে’ (ডিকেড অব অ্যাকশন) কাজ করার আহ্বান জানান। এ কর্মস্তরগুলোর মধ্যে রয়েছে—টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর জন্য বৃহত্তর নেতৃত্ব সুরক্ষিতকরণ, অধিক সম্পদ সংস্থান এবং চৌকস সমাধানের জন্য বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ গ্রহণ; সরকার কর্তৃক নগর, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নীতি, বাজেট, প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ন্ত্রণ কাঠামোয় প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত করে স্থানীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জন্য যুব, সুশীল সমাজ, মিডিয়া, বেসরকারি সেক্টর, ইউনিয়ন, একাডেমিয়া এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারসহ জনগণকে নিয়ে একটি অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তোলা।

করোনাকাল এবং এর পরবর্তী সময়ে বিশ্ব যুদ্ধবিগ্রহ এবং নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে। করোনাকালে স্থবির অর্থনীতির চাপ সামলাতে গিয়ে টালমাটাল দেশগুলো যেকোনো কিছুর বিনিময়ে অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারে যেখানে মরিয়া, সেখানে টেকসই উন্নয়ন নীতি অনেকটাই ম্লান। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন ও মধ্যপ্রাচ্যে অসন্তোষ বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ব্যাহত হচ্ছে দারিদ্র্য হ্রাসের মতো লক্ষ্য অর্জন। একই সঙ্গে অর্থনীতিকে বাঁচাতে গিয়ে রাষ্ট্রগুলো টেকসই উন্নয়নের নীতি থেকে সরে এসে বর্তমানকে সামাল দিতে দিশাহারা।

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সভা, সম্মেলন, নানা চুক্তি স্বাক্ষর হলেও সময় গড়িয়ে যাচ্ছে অথচ অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জন অনেকটা ‘দূর কি বাত’ হয়েই আছে। বলা হয়ে থাকে এজন্য দায়ী বিশ্বব্যাপী সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয় মাত্রা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। এক্ষেত্রে মানুষের কর্মকাণ্ড সংশোধন করে মানবসৃষ্ট বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব এবং এজন্য প্রয়োজন টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়ন। তবে সুশাসন, জবাবদিহিতা এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর দায়িত্ববোধ টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বিশ্বব্যাপী দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যুদ্ধ, আগ্রাসন, সাম্রাজ্যবাদ, একনায়ক এবং স্বৈরতন্ত্র বন্ধ করে সাম্যতা এবং জনগণের অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে প্রকৃত অর্থে টেকসই উন্নয়ন অধরাই থেকে যাবে এবং বিশ্ব এগিয়ে যাবে চরম পরিণতির দিকে।

ড. এএসএম সাইফুল্লাহ: অধ্যাপক, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• সুদহার অপরিবর্তিত রেখে কিউটি সংকোচন করছে ফেড
• সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া ‘শূন্যে’ নামানোর উদ্যোগ
• চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও স্বপ্ন
• এপ্রিলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে ৪ কোটি ডলারের
• বাংলাদেশে নামমাত্র বিনিয়োগ ভারতের ব্যবসায়ীদের!
• জাতীয় বাজেটে কর-রাজস্ব আদায়
• ১০ মাসে রফতানি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য
• ওদের ঘামে রাষ্ট্র বদলায় সংসার বদলায়
• এপ্রিলে রপ্তানি কমল ১১৮ কোটি ডলার
• পাঁচ মাস পর পণ্য রপ্তানি ৪০০ কোটি ডলারের নিচে
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved