Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
বেসরকারি খাতকেই উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই [ অনলাইন ] 20/04/2024
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
বেসরকারি খাতকেই উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি গবেষণা ও উৎপাদনে সফলতার কথা তুলে ধরে বলেছেন, এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নেই, ডাল-ভাতেরও অভাব নেই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস। আরও বড় বড় মাছ, সবকিছু খাবে। দেশের পোল্ট্রি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। আমি বেসরকারি খাতকেই উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই। তাদের সবরকম সহযোগিতা করতে চাই। এর ফলে আমাদের দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে, সেটাও আমরা চাই।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) পাশে শেরে বাংলা নগরের পুরনো বাণিজ্য মেলা মাঠে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’ এর উদ্বোধনকালে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, যেমন খালেদা জিয়া ঘোষণা দিল যে দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াবে। সেই ডাল-ভাত খাওয়াতেও কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল।
তিনি বলেন, এরপর ২০০৭ সালে এলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ফখরুদ্দীন সাহেব প্রধান উপদেষ্টা, ইয়াজউদ্দিন রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ। সেনাপ্রধান আবার ঘোষণা দিলেন আলু খাওয়ার জন্য। হাজার পদের আলুর নানা রকমের তালিকা তৈরি করা হলো এবং তার আবার প্রদর্শনী হলো। বেশ উন্নত হোটেল। মানুষ ভাত পাচ্ছে না তাতে কী! আলু খাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ আমাদের ডাল-ভাত খাওয়াতে চাইল, কেউ আমাদের আলু খাওয়াতে চাইল। আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি, মাছ-ভাত পেলেই যথেষ্ট। সেটাই তো আমরা চাই। সেটাই তো আমাদের লক্ষ্য। কাজেই আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নাই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন দেশের ডেইরি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান পোল্ট্রি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
শুরুতে প্রাণিসম্পদ খাতে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি ও অর্জনের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আয়োজিত এ আয়োজনের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘প্রাণিসম্পদে ভরব দেশ, গড়ব স্মার্ট বাংলাদেশ।’ উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
বেসরকারি খাতের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বেসরকারি খাতকেই বেশি উৎসাহিত করতে চাই। তাদেরকেই আমরা বেশি সুবিধা দিতে চাই কারণ এগুলো সব সরকারিভাবে হয় না। এটা বেসরকারি খাতে হলে তাতে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়। আমাদের যুব সমাজ, শিক্ষিত যুবসমাজ এক্ষেত্রে এগিয়ে আসুক সেটাই আমরা চাই।
তাঁর সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি যুবসমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু একটা পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজ যদি নিজের উদ্যোগে একটু ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাহলে কিন্তু আমরা যথেষ্ট এগিয়ে যেতে পারব। কাজেই এসব ক্ষেত্রে আমাদের যুবসমাজকে এগিয়ে আসার জন্য আরও উৎসাহিত করতে হবে। যাতে কখনো আমাদের কারও ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়। খাদ্য নিরাপত্তা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিজস্ব পুষ্টির ব্যবস্থাটা আমরা নিজেরাই করতে পারি সে বিশ্বাস আমার আছে।
প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের গবেষণা আরও বাড়াতে হবে। আজকে আমরা ৪০ ভাগের ওপরে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারি। কারণ আমরা কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না, প্রতিটি জিনিস আমরা নিজেরাই উৎপাদন করব। তাঁর সরকার খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে উৎসাহিত করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
টানা চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার একটি  প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমাদের যে সমস্ত পশু পালন করা হয় তাদেরকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। মাছ, হাঁস-মুরগি, পশুপালন এগুলো স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করা এবং উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণটাও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করতে হবে, এটাও গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আরও যতœবান হতে হবে। কেননা দেশের চাহিদা মিটিয়ে হালাল মাংস রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি সুযোগ আমাদের রয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের কিন্তু একটি সুযোগ রয়েছে, অনেক দেশ হালাল মাংস আমাদের থেকে ক্রয় করতে চায়। আর সেই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে। আর সেজন্য আমাদের পশু-পাখিগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে লালন-পালন করতে হবে, নিয়ম মেনে জবাই করতে হবে  এবং প্যাকেটজাত করার ক্ষেত্রে তা নিয়ম মেনে হচ্ছে কি না সে বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে আমরা যদি করতে পারি তাহলে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারব। ইতোমধ্যে কিছু কিছু রপ্তানি হচ্ছে কিন্তু আরও বেশি রপ্তানি করার সুযোগও আমাদের আছে, অনেক দেশের কাছ থেকে আমরা সেই অনুরোধও পাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এখানে যদি আমরা আধুনিক প্রযুক্তিটা ব্যবহার করতে পারি সেজন্য কিছু আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন বুচার হাউস (কসাইখানা) আমাদের তৈরি করা দরকার। বিশেষ করে কোরবানির সময় রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে ফেলে পশু জবাই করাটা আমাদের বন্ধ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট একটি স্থান থাকবে যেখানে পশু জবাই হবে এবং যার যার চিহ্নিত পশু সে সে নিয়ে যাবে। তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটি যেমন স্বাস্থ্যসম্মত হবে তেমনি পশুর পরিত্যক্ত অংশ এবং চামড়া যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাবে। না হলে চামড়ার যেমন মান নষ্ট হয় তেমনি অনেক কিছুই অপচয় হয়ে যায়।
সরকারপ্রধান বলেন, পশুর কেবল মাংসটাই আমাদের প্রয়োজন হয় না, এর হাড়, রক্ত, চামড়া এমনকি বর্জ্যটাও আমাদের কাজে লাগে। আমরা যদি এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের অনেক কাজে আসতে পারে। কাজেই এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং কাজে লাগানোর ব্যবস্থাটা আমাদের করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়াটা দরকার বলে আমি মনে করি এবং এ বিষয়ে উদ্যোগটা সংশ্লিষ্ট মহল নেবেন বলে আমি আশা করি। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ৪৭০টি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ পশু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এই ভেটেরিনারি সেক্টরটির দিকে আরও দৃষ্টি দেওয়া দরকার উল্লেখ করে তিনি আটটি বিভাগ ও ৬৪টি জেলায় ভেটেরিনারি ফার্ম, পশু চিকিৎসালয় ও সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার ওপরও তিনি জোর দেন।
তিনি বলেন, ধান চালের পাশাপাশি পশু সম্পদ সংরক্ষণাগার গড়ে তুলে কোনো সম্পদই যেন অপচয় না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এগুলোকে যেন আমাদের আর্থিক কাজে আমরা ব্যবহার করতে পারি সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, এটা দুর্ভাগ্যের বিষয় যে বাংলাদেশ বিস্তীর্ণ সমুদ্রসীমা অর্জন করলেও এখনো গভীর সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণ করতে পারেনি। আসলে, আমরা এই উদ্দেশ্যে কোনো উদ্যোক্তা পাচ্ছি না। এটাই বাস্তবতা। মৎস্য ও পশু-পাখির খাদ্যও যেন নিরাপদ খাদ্য হয় এবং এগুলো যেন পরবর্তীতে মানবদেহে কোনো রোগের সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখায়ও তিনি গুরুত্ব দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি যেমন চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাশাপাশি পরিত্যক্ত চরাঞ্চলে মহিষ ভেড়া হাঁস-মুরগি প্রভৃতি চাষে উৎসাহিত করছে। এমনকি ভাষানচরে যে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি সেখানেও প্রচুর ভেড়া ও মহিষ লালন-পালন হচ্ছে। হাঁস-মুরগি প্রতিপালন ও মাছের চাষ হচ্ছে, আমরা এভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। কাজেই আমাদের যেটুকু মাটি ও সম্পদ রয়েছে তা ব্যবহার করেই আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব। জনগণ মৎস্য এবং পশু পালন ও হাঁস- মুরগি পালনে আরও এগিয়ে আসবেন এবং আমাদের খামারগুলো আরও উন্নত হবে সে আশাবাদও ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প অনেকদূর এগিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের পশু-পাখির জন্য নিজেরাই নানা রকম ভ্যাকসিন তৈরি করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। তিনি এ সময় ’৯৮ সালের প্রলয়ঙ্করি বন্যার উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় বীজ ও কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় কৃষি সামগ্রী কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পরই বাম্পার ফসল উৎপাদন হয়।

যেখানে বিভিন্ন বিদেশী মিডিয়া বলেছিল, এক কোটি মানুষ এই বন্যায় না খেতে পেয়ে মারা যাবে সেখানে একটি মানুষও না খেয়ে মরেনি। অথচ তিনি সরকারপ্রধান হিসেবে সংসদে যখন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার ঘোষণা দিলেন তখন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তাঁর সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, তাহলে বিদেশী সাহায্য পাওয়া যাবে না। আসলে এটা হচ্ছে নীতির বিষয়, তারা (বিএনপি) দেশকে অন্যের মুখাপেক্ষী করেই রাখতে চায়।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• সুদহার অপরিবর্তিত রেখে কিউটি সংকোচন করছে ফেড
• সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া ‘শূন্যে’ নামানোর উদ্যোগ
• চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও স্বপ্ন
• এপ্রিলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে ৪ কোটি ডলারের
• বাংলাদেশে নামমাত্র বিনিয়োগ ভারতের ব্যবসায়ীদের!
• জাতীয় বাজেটে কর-রাজস্ব আদায়
• ১০ মাসে রফতানি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য
• ওদের ঘামে রাষ্ট্র বদলায় সংসার বদলায়
• এপ্রিলে রপ্তানি কমল ১১৮ কোটি ডলার
• পাঁচ মাস পর পণ্য রপ্তানি ৪০০ কোটি ডলারের নিচে
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved