[ অনলাইন ] 23/04/2024 |
|
|
|
নারীর এনআইডি দিয়ে পুরুষের ই-টিআইএন নিবন্ধন |
|
|
রহমত রহমান: তাবাসসুম ফেরদৌস। সদ্য পাস করা একজন চিকিৎসক। ই-টিআইএন (ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) নিবন্ধন করতে গিয়ে হতবাক হন তরুণ এই চিকিৎসক। কারণ, তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে ই-টিআইএন নিবন্ধন নেয়া হয়েছে। নিবন্ধন নিয়েছেন দীপ্ত দাস নামের রাজবাড়ীর একজন ব্যবসায়ী। তা নেয়া হয়েছে ২০১৪ সালে। তাবাসসুম তা জানতে পারেন ২০২৪ সালে। অর্থাৎ ১০ বছর আগেই এই চিকিৎসকের অগোচরে ই-টিআইএন নিবন্ধন নেন দীপ্ত দাস। দীপ্ত দাস একজন পুরুষ। আর তাবাসসুম ফেরদৌস একজন নারী। একজন পুরুষ একজন নারীর এনআইডি দিয়ে কীভাবে ই-টিআইএন নিবন্ধন নিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, দীপ্ত দাস কারও সহায়তায় জালিয়াতির মাধ্যমে এই ই-টিআইএন নিবন্ধন করেছেন। যদিও অভিযুক্ত দীপ্তর দাবি, তার আইনজীবী এই ই-টিআইএন নিবন্ধন করেছেন। এনবিআর বলছে, এনআইডি তথ্যের গরমিলের কারণে এমন হতে পারে। সম্প্রতি চিকিৎসক তাবাসসুম ফেরদৌস তার এনআইডি দিয়ে অবৈধভাবে ই-টিআইএন নিবন্ধন নেয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। একই সঙ্গে প্রতিকার চেয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন।
সূত্রমতে, তাবাসসুম ফেরদৌস ২০১৮ সালে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তার বাড়ি রাজবাড়ী সদরে। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়ার একটি হাসপাতালে কর্মরত। তার পিতার নাম মো. আব্দুল খালেক। তিনি রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তাবাসসুম ফেরদৌস বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে নিবন্ধন নেয়ার চেষ্টা করেন। তবে বিএমডিসির নিবন্ধন নেয়ার শর্তের মধ্যে একটি শর্ত হলোÑআবেদনকারী ওই চিকিৎসকের ই-টিআইএন সনদ থাকতে হবে। সেজন্য রমজান মাসের মধ্যে তিনি পিতার সহায়তায় ই-টিআইএন নিবন্ধন করতে রাজবাড়ী কর অফিসে (কর অঞ্চল-৩, ঢাকার সার্কেল-৫৬) যান। সেখানে ই-টিআইএন সার্ভারে এই চিকিৎসকের জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলা হয়, তার এই পরিচয়পত্র দিয়ে দীপ্ত দাস নামের একজন ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন। দীপ্ত দাস রাজবাড়ী পৌরসভার প্রভাত দাস বিষ্ণুর ছেলে। রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে তাদের হ্যাচারি, টেক্সটাইল ও অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে। তাদের মদ বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে। কর অফিসের কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। কারণ, একজন নারীর এনআইডি দিয়ে একজন পুরুষ কীভাবে নিবন্ধন নিলেন।
দীপ্ত দাসের ই-টিআইএনের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, তিনি ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর ১২ সংখ্যার ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন। এর আগে তার ১০ সংখ্যার টিআইএন ছিল। তিনি ফরিদপুর (সার্কেল-৫৯) থেকে নিবন্ধন নিয়েছেন। এতে তিনি রাজবাড়ীকে স্থায়ী ও ফরিদকে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে তিনি দুটো ঠিকানায় তাবাসসুম ফেরদৌসের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন।
এ বিষয়ে সার্কেল-৫৬-এর কর্মকর্তা সহকারী কর কমিশনার মো. শওকত আলী শেয়ার বিজকে বলেন, আমার কাছে আসার পর বলেছি, আমরা সংশোধন করতে পারব না। সংশোধন করতে পারে একমাত্র এনবিআর। তবে নারীর এনআইডি দিয়ে পুরুষের ই-টিআইএন কীভাবে নিবন্ধন নিয়েছেন, তা আমারও মাথায় আসে না।
এ বিষয়ে তাবাসসুম ফেরদৌসের পিতা মো. আব্দুল খালেক শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা রমজানের মধ্যে ই-টিআইএন নিবন্ধন নিতে রাজবাড়ী কর অফিসে যাই। সেখানে নিবন্ধন করতে গিয়ে জানতে পারি, আমার মেয়ের এনআইডি দিয়ে দীপ্ত দাস নামের একজন নিবন্ধন নিয়েছেন। আমরা অবাক হই। আমরা জানি না। অথচ আমার মেয়ের এনআইডি দিয়ে ২০১৪ সালে নিবন্ধন নেয়া হয়েছে। দীপ্তকে আমি চিনি, সে আমার ছাত্র। পরে আমি জিডি করি। সমস্যা সমাধানে এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছি। আমি শিক্ষক মানুষ। সে জন্য কোনো ঝামেলায় যেতে চাই না।
অভিযোগের বিষয়ে দীপ্ত দাস শেয়ার বিজকে বলেন, আমি জš§নিবন্ধন দিয়ে টিআইএন নিয়েছি। পরে জš§নিবন্ধন সংশোধন করা হয়। আমার আইনজীবী ই-টিআইএন করে দিয়েছেন। তাতে ভুল হওয়ায় আমিও ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ আমি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারিনি। আপনি কারসাজির মাধ্যমে এই এনআইডি ব্যবহার করে ই-টিআইএন নিয়েছেনÑএমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো কারসাজি করা হয়নি। আমি এই ভুল এক বছর আগে পেয়েছি। আমার ভুল হয়, এটা ই-টিআইএন সফটওয়্যারের ভুল। আমি সমস্যা সমাধানে গত নভেম্বরে এনবিআরে গিয়েছি।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, জালিয়াতির উদ্দেশ্যে কেউ এমন করতে পারেন। তবে ১০ বছর পর করদাতা (তাবাসসুম) জানতে পারেন, তার এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন নিয়েছেন! অবাক করা বিষয়। আগের করদাতা (দীপ্ত) কোনো জালিয়াতি করে বা জালিয়াতির উদ্দেশ্যে কারও যোগসাজশে এই এনআইডি দিয়ে ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। সংশ্লিষ্ট কর অফিস ওই করদাতার পুরো করফাইল খতিয়ে দেখলে তা ধরা পড়বে।
নারীর এনআইডি দিয়ে পুরুষ ই-টিআইএন নিবন্ধন নিতে পারে কি নাÑএমন প্রশ্নে এনবিআরের একজন প্রোগ্রামার শেয়ার বিজকে বলেন, নারীর এনআইডি দিয়ে পুরুষের ই-টিআইএন নিবন্ধন নেয়ার সুযোগ নেই। নিবন্ধন নেয়ার ক্ষেত্রে এনআইডি নাম্বার, নাম ও জš§ তারিখ মিলতে হয়। না মিললে নিবন্ধন হবে না। এক্ষেত্রে এনআইডি কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে এমন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে একজনের এনআইডির ওপর অন্যজনের এনআইডি চলে এলে, অথবা এনআইডি সংশোধন করলে, আগের আইডি ডিলিট করা না হলে এমন হতে পারে। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|