Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
নতুন উদ্যোগে সফলতা কি আসতে পারে? [ অনলাইন ] 24/04/2024
নতুন উদ্যোগে সফলতা কি আসতে পারে?
মিজানুর রহমান

২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই উচ্চ খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর স্থিতিশীলতা ও মুনাফায় প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া তহবিল প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃত্তিতে প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। খেলাপি ঋণ সাধারণত দুইভাবে হয়ে থাকে,  প্রথমত অনিচ্ছাকৃত  ব্যাবসায়িক কার্যক্রম/প্রাকৃতিক দুর্যোগ/অর্থনৈতিক  কারণে ঋণখেলাপি হতে পারে, অন্যটি হলো ইচ্ছাকৃতভাবে  ঋণখেলাপি। এদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নতুন সার্কুলার জারি করেছে। সার্কুলার অনুযায়ী  নতুন করে কোনো গ্রাহক ঋণখেলাপি হলে সে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি কি না, তা ৩০ দিনের মধ্যে যাচাই করতে হবে। কেউ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে  তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য প্রদানের জন্য ১৪ দিনের সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। ঋণগ্রহীতার বক্তব্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে না হলে অথবা তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য উপস্থিত না হলে ব্যাংক এককভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার বিষয়টি অবহিত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সাত দিনের মধ্যে চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা যদি ক্ষুব্ধ হন, তাহলে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আপিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। যিনি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবেন, তিনি কোনো ধরনের সুদ মওকুফ পাবেন না। তার ঋণটি পুনঃ তপশিল/নবায়ন করার সুযোগ থাকবে না। ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তিনি খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন এবং এ সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন না। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণ ও ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি অন্য কোনো কোম্পানি খুলতে পারবে না। রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও অন্যান্য সম্মাননা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তার নাম বিবেচনায় আসবে না। এখন থেকে যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হবেন, তাদের নামের তালিকা গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা ঋণের সমুদয় টাকা পরিশোধ করলেও পাঁচ বছর পর্যন্ত কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। যথাযথভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ না করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা মোকদ্দমাও করতে পারবে।

আরো একটি উদ্যোগের খবর হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার জন্য দুর্বল ব্যাংকের তালিকা করেছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে এর ফলে ভূমিকা রাখবে। তারা ৫৪টি ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে ৩৪টি ব্যাংক দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে থেকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার  প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬২ শতাংশ। এটি দুর্বল ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত। এরই মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের একীভূত করার চুক্তি সই হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক একীভূত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টি ব্যাংক খুব নাজুক অবস্থায় আছে। তার মধ্যে ৯টি রেড জোনে চলে গেছে। ইয়োলো জোনে থাকা ২৯টি ব্যাংকের মধ্যে তিনটি ব্যাংক আবার রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে আছে, এর মধ্যে আটটি বিদেশি ব্যাংক। গ্রিন জোনে দেশীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র আটটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাহউল হক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলো চাইলে স্বেচ্ছায় একীভূত হতে পারবে। সেটা না হলে আগামী বছরের মধ্যে নীতিমালা অনুযায়ী যারা দুর্বল ব্যাংকের তালিকায় পড়বে, তাদের একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো ব্যাংক একীভূত হলেও আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না। অন্যদিকে একীভূত হলে দুর্বল ব্যাংকের পরিচালক ব্যাংকের পরিচালক  হতে পারবেন না। আবার দুর্বল ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডিকে একীভূত করার সময় চাকরিচ্যুত করা হবে।

খেলাপি ঋণ আদায়ে গতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রেও নীতিমালা জারি করেছে। এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেক্টর  বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে  ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বয়সসীমা ৪৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। এমডি নিয়োগের বেলায় খেলাপি  ঋণ অবলোপন ও আদায়ের ক্ষেত্রে যাদের দক্ষতার স্বীকৃতি আছে, এরা অগ্রাধিকার পাবেন। এমডি নিয়োগ পেতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং উত্তীর্ণ হতে হবে।  হঠাত্ করে কেউ এমডির পদ ছাড়তে পারবেন না। তিন বছরের জন্য এমডি নিয়োগ হবেন। আশা করা যাচ্ছে, এ প্রক্রিয়ায় এমডি নিয়োগ হলে খেলাপি ঋণ আদায়ে গতি ফিরে আসবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করার জন্য যে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে, ঐ কমিটির স্বচ্ছতার ওপর নির্ভর করবে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণী চিহ্নিত হবেন কি হবেন না। তাই ঐ কমিটি হতে হবে স্বচ্ছ আর যোগ্য। ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতার প্রয়োজন হবে। এর নীতিমালা শতভাগ স্বচ্ছ হতে হবে। সবল ও দুর্বল ব্যাংক একীভূত হলে তার ঝুঁকিটা কী হতে পারে, আগে থেকেই হিসাব কষতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উদ্যোগ যা-ই নেওয়া  হোক, তার সুফল পেতে হলে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ দুই/একটি উদ্যোগ নিলে সমস্যা কেটে যাবে না। এর সমস্যা এখন অনেক গভীরে। এখানে দ্বৈত শাসন চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থনৈতিক বিভাগের মধ্যে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, তাহলে হয়তো সম্ভব।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে উল্লেখ করে বলেছেন, খেলাপি ঋণের এখন যা অবস্থা, তা গত ২০-২৫ বছরের পুঞ্জীভূত অনিয়মের ফল। আগেই দরকার ছিল, তার পরও দেরিতে হলেও যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করা যায়, তাহলে ভালো। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কোনো ধরনের চাপ বা রাজনীতির কাছে নতিস্বীকার করা যাবে না। তারই সঙ্গে যে সমস্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে অনিয়মে জড়িত মনে হবে, তাকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।  তাহলে যদি কাজ হয়।

লেখক: ব্যাংকার ও কলামিস্ট
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• যশোরে এবি ব্যাংকের প্রশিক্ষণ কর্মশালা
• শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গ্রম্নপের চুক্তি
• অগ্রণী ব্যাংকের ইনোভেশন শোকেসিং অনুষ্ঠিত
• জনতা ব্যাংকের রায়েরবাজার শাখা নতুন ভবনে
• ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান
• ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
• ব্যাংক ঋণের সুদহার কীভাবে পরিবর্তন আনা হবে, জানালেন গভর্নর
• ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠন করে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
• একীভূতকরণ: ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদের পদত্যাগ
• পদত্যাগ করলো ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ, নতুন পর্ষদ গঠন
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved