Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
টিপুর কব্জায় ১০০০ ভিডিও ২৫ হাজার ছবি [ অনলাইন ] 25/04/2024
শিশু পর্নোগ্রাফি
টিপুর কব্জায় ১০০০ ভিডিও ২৫ হাজার ছবি

পুরো নাম টি আই এম ফখরুজ্জামান। মানুষ তাকে টিপু কিবরিয়া হিসেবে চিনে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। লেখাপড়া শেষে কিশোর কবিতা, গল্প ও ছড়া ছাড়াও নব্বইয়ের দশকে তিনি ‘হরর ক্লাব’ নামে কিশোরদের জন্য সিরিজ গল্প লিখে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সেবা প্রকাশনী থেকে তার এসব লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতো। এক সময়ে তিনি খুবই জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক ছিলেন। শিশুসাহিত্য

লেখার সময় তিনি অনেক শিশুর সঙ্গে মিশেছেন। ২০০৫ সালের দিকে তিনি শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হয়ে ২০২১ সালে কারাগার থেকে বের হন। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

‘একশ’ এক’ নামক একটি কবিতার বই প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি সাহিত্যচর্চার আড়ালে পুনরায় শিশু পর্নোগ্রাফির সেই পুরনো অপকর্ম শুরু করেন। মান-যশ অনেক ছিল কিন্তু এর আড়ালে তিনি ভয়ঙ্কর ও বিকৃত মানসিকতার একজন মানুষ হয়ে ওঠেন। 

 

শিশুদের নিয়ে কাজ করতেন অথচ ওই শিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি ভিডিও তৈরি করে বিকৃত মন-মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। কৌশলে বিভিন্ন শিশুদের অশ্লীল ছবি তুলে সেগুলো দিয়ে পর্নোগ্রাফি ভিডিও তৈরি করে তার মতোই বিকৃত মানসিকতার বিদেশিদের কাছে বিক্রি করতেন। বাংলাদেশে বসে আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি অপরাধী চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভয়ঙ্কর এ অপরাধে জড়িত থাকার কারণে অনেক দেশে তিনি শিশু পর্নোগ্রাফি অপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত। শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি ও পাচারের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে টিপুকে ইন্টারপোলের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০১৪ সালের জুনে প্রথম গ্রেপ্তার করেছিল। তখন ওই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়। এরপর টানা ছয় বছর কারাগারেই ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে কারামুক্ত হয়ে ফের একই কাজ শুরু করে টিপু। তবে তাকে নজরদারিতে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে কামরুল ইসলাম নামক সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে। সিটিটিসি বলছে, টিপু কিবরিয়া আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের বাংলাদেশি মূলহোতা। তার বাসা থেকে ক্যামেরা পিসি, ক্লাউড স্টোরেজ থেকে প্রায় ২৫ হাজারের মতো শিশু পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্যে তোলা ছবি, ও এক হাজারের মতো ভিডিও কনটেন্ট পাওয়া গেছে। শিশু পর্নোগ্রাফির ভুক্তভোগী শিশুরা সবাই ছিন্নমূল পথ ছেলে শিশু।

গতকাল ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, টিপু কিবরিয়া ঢাকা শহরের গুলিস্তান, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ ঢাকার অন্যান্য স্থান ও দেশের বিভিন্ন স্থানের ছিন্নমূল পথশিশুদের পর্নোগ্রাফির কাজে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে যুক্ত করে। সামান্য অর্থের প্রলোভনে বাসায় নিয়ে গিয়ে অশ্লীল ও গোপনাঙ্গের ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক যে ক্লাইন্ট আছে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। শুধু তার বাসায় না বিদেশি ক্লাইন্টদের চাহিদা মাফিক বন-জঙ্গলে ছিন্নমূল পথশিশুদের নিয়ে গিয়ে পর্নোগ্রাফির জন্য ভিডিও করে। তার বাসায় পর্নোগ্রাফির ভিডিও এডিটিং প্যানেল আছে। সেখানে তিনি এডিটিং করে মেইলে পাঠাতেন। যা পরে বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হতো। তিনি বলেন, আগে তিনি ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতেন। পরে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানে না এমন নতুন মেগা ও টোটেনা নামক দুটি এনক্রিপটেট অ্যাপসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের কাছে পর্নোগ্রাফির কনটেন্টগুলো পাঠায়। আমরা তার কাছ থেকে যে ডিভাইস উদ্ধার করেছি তাতে দেখা গেছে, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ আরও অনেক দেশের গ্রাহকদের তালিকা পাওয়া গেছে। যাদের কাছে তিনি বিকৃত, অশ্লীল পর্নোগ্রাফির ভিডিও ছবি পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন। তার কাছ থেকে উদ্ধার সব ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস থেকে ফরেনসিক করে আমরা এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার অশ্লীল ছবি ও ১০০০ ভিডিও পেয়েছি। ফরেনসিক বা ফিল্টারিং এর কাজ শেষ হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

আসাদুজ্জামান বলেন, মাত্র ৫০০ টাকার প্রলোভনে তিনি ছিন্নমূল পথশিশুদের নিয়ে আসতেন। তার চক্রে কামরুল ছাড়াও আরও অনেক সহযোগীর নাম আমরা পেয়েছি। আমরা দু’জনকে গ্রেপ্তারের সময় একজন ভুক্তভোগী শিশুকে উদ্ধারের পর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। কি পরিমাণ টাকা তিনি পেতেন, কীভাবে পেতেন জানতে চাইলে ডিএমপি’র এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, অর্থের লেনদেন হতো ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও কিছু এমএফএস এর মাধ্যমে। ৩/৪টি ছোট ছোট ভিডিও পাঠালেই তিনি পেতেন হাজার ডলার। সর্বশেষ এক বিদেশি গ্রাহককে তিনি তিনটি পর্নোগ্রাফির ভিডিও পাঠিয়ে এক হাজার ডলার পেয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার এজেন্ট রয়েছে। এরকম আমরা বেশ ক’জন এজেন্টকে শনাক্ত করেছি। পাশাপাশি ২৫-৩০ জনের মতো ভুক্তভোগী শিশুকে শনাক্ত করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা সব ছেলে। সংখ্যা অনেক।

২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, টিপু টাকার বিনিময়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের অন্তত আট আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি চক্রের কাছে বাংলাদেশি শিশুদের ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও ও স্থিরচিত্র পাচার করে আসছিলেন। ওই সময় ইন্টারপোলের বরাত দিয়ে সিআইডি জানিয়েছিল, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্নো ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত টিপু কিবরিয়া। ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের শিশু পর্নোগ্রাফি বিদেশে পাচার হচ্ছিল। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগটির বিষয়ে নজরদারি করে টিপুর চেহারা শনাক্ত করে ইন্টারপোল। ওই সময় টিপুর বাসায় অভিযান চালিয়ে শতাধিক পর্নো সিডি, লুব্রিকেটিং জেল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্টিল ও ভিডিও ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়।
 

News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved