Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
মনুনদী উন্নয়ন প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা লুট [ অনলাইন ] 25/04/2024
মনুনদী উন্নয়ন প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা লুট

মনুনদী পাড়ের বাসিন্দা ও উপকারভোগীরা চরম হতাশ। বার বার তাদের চোখের সামনেই লুটপাট হচ্ছে নদী শাসনের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। মানুষ আর নদীর পেট-ই গিলে খাচ্ছে উন্নয়ন। সংশ্লিষ্টরা কাগজে-কলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও তার সুফলতা দেখালেও দৃশ্যমান উন্নয়ন হাওয়া। বরং দিন দিন নাব্য হ্রাস ও ভাঙনে বিলীন হচ্ছে নদীর দু’পাড়। বিপন্ন হচ্ছে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলজ ও উদ্ভিদ প্রাণী এবং জীববৈচিত্র্য। উজাড় হচ্ছে স্রোতস্বিণী এ নদীর গতি ও প্রাণ প্রকৃতি। ভারতের ত্রিপুরার পাহাড়ি উৎপত্তিস্থল থেকে প্রবাহিত খরস্রোতা মনুনদী মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদরের ৮৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কুশিয়ারা নদীতে মিশেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন নদী শাসনের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে মনু নদী বৃটিশ আমলের পর থেকে উপেক্ষিত।

পলি, নুড়ি পাথর, বালুচরও দখল করে স্থাপনা নির্মাণে অস্তিত্ব সংকটে। সূত্রমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র মনুনদী খনন প্রকল্প গ্রহণ করে। আর ‘মনুনদীর ভাঙন রোধে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ নামে একটি প্রকল্প ২০২০ সালে অনুমোদন পায়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার নদী খননের ওই প্রকল্পটি অদৃশ্য কারণে পুরোপুরি গায়েব হওয়ার পর এখন চলমান এ প্রকল্প নিয়েও জনমনে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে। চলমান কাজেও সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। প্রকল্পের কাজের শুরুতেই সংশ্লিষ্ট একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজে অনিয়মের নানা অভিযোগ তোলেন উপকারভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন। তারা বলছেন মনুনদীর দুঃখ ঘোছাতে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। ঢাকঢোল পিটিয়ে নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে উপকারভোগীরা আশান্বিত হন। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই লুটপাটে সবই গায়েব। 

এই দুই বড় প্রকল্প ছাড়াও বছরান্তে বাঁধ মেরামতসহ নদী শাসনে লাখ, কোটি টাকার বরাদ্দেরও দৃশ্যমান কোনো কাজ নেই বললেই চলে। তাই এই প্রকল্পেরও শেষ নিয়ে তাদের নানা শঙ্কা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান বর্ষায় মনুনদীর দু’পাড় উপচে গ্রাস করে তাদের বসতবাড়ি, কৃষিক্ষেত ও রাস্তাঘাট। আর শুষ্ক মৌসুমে নদী জুড়ে জেগে ওঠে চর। পানিহীনতায় উৎপাদন ব্যাহত হয় কৃষিক্ষেত। মহা হুমকিতে পড়ে নদীর মাছ, জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য। জানা যায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩ কিলোমিটার নাব্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়াধীন বিআইডব্লিউটিএ’র ২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার কুশিয়ারা নদীর মুখ থেকে মনু ব্যারেজ পর্যন্ত টেন্ডার হয়। ঢাকার বিডিএল নামীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই কাজটি পায়। ওই টেন্ডারের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। 

কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় ওই সময় স্থানীয় বাসিন্দারের মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ নানা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিদের চাপে ১০-১২ শতাংশ কাজ করেই উধাও হয় ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও ‘মনুনদীর ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ নামের প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন মাসে একনেকে অনুমোদন পায়। মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয় ৩০শে এপ্রিল ২০২১ সালে। ২০২৩ সালের জুনে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ধাপে ধাপে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বর্ধিতকরণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা কার্যালয়ের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৪৫.৪০ শতাংশ। প্রকল্পে ৪শ’ কোটি টাকার কাজ হলেও ছাড় মিলেছে ২শ’ কোটি টাকা। তবে স্থানীয় উপকারভোগীরা নানা ত্রুটি দেখিয়ে অভিযোগ করে বলছেন এখন পর্যন্ত ২০-২৫ শতাংশ কাজ হয়েছে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ তাদের। তারা বলছেন প্রকল্প এলাকার কুলাউড়া অংশে কিছুটা কাজ দৃশ্যমান হলেও বাকি দুই উপজেলা রয়েছে একেবারেই পিছিয়ে। 

জানা যায়, ওই প্রকল্পে ৭২টি প্যাকেজের মধ্যে ৬৯টির টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে ২৫ জন। ৩৫টি প্যাকেজের কাজ রয়েছে চলমান। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৩০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ, আড়াই কিলোমিটার নতুন ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ, ৭৬৫ মিটার পুরাতন ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ, ৮৬ কিলোমিটার মনুবাঁধ শক্তিশালীকরণ, ১২ কিলোমিটার চর অপসারণ ও ২২৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন এ পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে তাতেও অভিযোগের অন্ত নেই। সম্প্রতি নদী দু’পাড়ের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের গাছ একটি চক্র কেটে নিলেও একে অপরের ওপর দায় দিয়ে নীরব ছিল বনবিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন। গাছের মালিকানা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল সরকারের দায়িত্বশীল এই তিনটি বিভাগ। জানা যায়, বর্তমানে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা ছাড়ে ধীরগতি, ভূমি অধিগ্রহণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ সমস্যা, কাজ স্থগিত রাখতে মামলা, প্রকল্পের ভেতরে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ জটিলতা, সীমান্ত সমস্যায় ১৪শ’ মিটার কাজের অনুমতির অপেক্ষাসহ অন্যান্য সমস্যায় চলমান কাজের ধীরগতি লক্ষণীয়। তাই আগত বর্ষায় নদী ভাঙনের চরম শঙ্কা নদী তীরের বাসিন্দাদের।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল মানবজমিনকে জানান, ভূমি অধিগ্রহণ, মামলা, চাহিদানুযায়ী বরাদ্দের টাকা প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়াসহ অন্যান্য জটিলতায় এখন কাজ চলছে ধীরগতিতে। কাজ শুরুর দিকে তিনি এখানে ছিলেন না জানিয়ে বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়েছে। সঠিক ও স্বচ্ছভাবে যাতে কাজ হয় সেজন্য নানা মনিটরিং জোরদার রয়েছে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved