Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
ডলারের দর বাজারভিত্তিক না হওয়ায় উদ্বেগ [ অনলাইন ] 25/04/2024
অর্থ বিভাগ-কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের বৈঠক
ডলারের দর বাজারভিত্তিক না হওয়ায় উদ্বেগ
আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ছোট করার পরামর্শ * রাজস্ব ঘাটতি ও রিজার্ভ কমায় অসন্তোষ * ঋণের সুদহার পুরোমাত্রায় বাজারভিত্তিক করায় জোর
 হামিদ বিশ্বাস :

ডলারের দর বাজারভিত্তিক না হওয়া ও রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে ঋণের সুদহার পুরোমাত্রায় বাজারভিত্তিক না করার বিষয়েও আইএমএফ আপত্তি জানিয়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিম্নমুখী প্রবণতা রোধ করতে না পারার বিয়টিও তারা তুলে ধরেছে। পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ছোট করার পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফ বলেছে, এসব বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও সজাগ হতে হবে।

ঢাকা সফররত আইএমএফ মিশন বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। এদিন তারা অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছে। ওইসব বৈঠকে তারা এসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে তারা ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও বিভিন্ন খাতের সংস্কার বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। আইএমএফের সঙ্গে ওইসব বৈঠকে উল্লিখিত বিষয়ে হালনাগাদ প্রতিবেদন বিনিময় এবং সারসংক্ষেপ আলোচনা হয় বলে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইএমএফ আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার যথাসম্ভব ছোট করার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ফলে সরকারকে ঋণ নির্ভরতা বাড়াতে হচ্ছে। এদিকে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট থাকায় সরকারের ঋণের জোগানও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে তারা বলেছে, সরকারি খাতের ঋণের উপকরণে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ঋণের খরচও বেড়েছে। এতে বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারকে বাড়তি আর্থিক বোঝা নিতে হবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চাপ বাড়বে।

সূত্র জানায়, আইএমএফ ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের বিপরীতে বিভিন্ন শর্ত ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়েছে। এর মধ্যে গত জুলাইয়ের মধ্যে ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের বাফেদা ও এবিবিকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু এখন তারা যে দর নির্ধারণ করছে সেটিও কার্যকর হচ্ছে না। এদিকে চলতি মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার জন্য ক্রলিং পেগ পদ্ধতি (একটি সীমা বেঁধে দিয়ে ডলারের দামের ওঠানামা করার সুযোগ) চালুর ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো এটি চালু করেনি। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আপত্তি তুলেছে আইএমএফ।

গত অর্থবছরে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি। চলতি অর্থবছরে জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেটিও অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ এখনো রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার বেশ নিচে।

প্রতিনিধিদলটি মনে করে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন প্রধান সমস্যা দুটি। একটি হলো ডলার ও অপরটি রাজস্ব ঘাটতি। এ দুটিতে শৃঙ্খলা আনতে না পারলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো সম্ভব হবে না। ওইসব বৈঠকে ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করার বিষয়টিও উঠে আসে। ঋণের সুদহার নির্ধারণের জন্য একটি করিডর ঘোষণা করা হলেও এখনো বাজারভিত্তিক করা হয়নি। এটিকে বাজারভিত্তিক করতে আইএমএফ আবারও জোর দিয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলেও এটিও অর্জন করতে পারছে না। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানো ও রপ্তানি বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি।

বৈঠকে ব্যাংক খাতের সংস্কারসহ একীভূতকরণ নীতিমালা এবং বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেনসহ সামষ্টিক অর্থনীতির রিভিউ সংক্রান্ত বিষয়াবলির ওপর আলোচনা করেছে। তবে প্রথম দিনের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থার গৃহীত পদক্ষেপকে যথাযথ বলে জানিয়েছেন দাতা সংস্থাটির সদস্যরা। তারা এদিন শুভেচ্ছা বিনিময়সহ মূলত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া কিছু খাতে তারা নিজস্ব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন।

জানা যায়, আসন্ন বাজেট ও নতুন অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা এবং ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের ঠিক আগমুহূর্তে আইএমএফের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন শুরু করেছে। বুধবার বৈঠক শুরুর মাধ্যমে দলটি এখন পর্যায়ক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইত্যাদি সংস্থার সঙ্গে ৮ মে পর্যন্ত বৈঠক করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, বুধবার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের পরামর্শে বিপিএম-৬ হিসাবে তা ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। এটি অবশ্য প্রকৃত রিজার্ভ নয়। আর প্রকৃত ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ বের করতে বিপিএম ম্যানুয়াল থেকে চলতি দায় বাবদ আকু বিল, বৈদেশিক পাওনা, প্রকল্প বকেয়া বিল এবং বিশেষ পরিপূরক মুদ্রার (এসডিআর) বকেয়া হিসাবে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। সেই হিসাবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ আরও কমে যাচ্ছে।

আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে গড় আমদানি ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, ৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন এবং ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আইএমএফ’র দল এবার রাজস্বনীতিতে গুরুত্ব দেবে। আর ব্যাংক সংস্কারের নামে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে। রিজার্ভ কেন বাড়ছে না সে বিষয়ে আলোচনায় বাড়তি গুরুত্ব পেতে পারে।’

সূত্র জানায়, মার্চেও প্রকৃত রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। মার্চ শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা। কিন্তু আইএমএফের হিসাবে ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের জুনে ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নিট রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কার্যক্রমের বিপরীতে আইএমএফ অনেক শর্ত দেয়। বেশ কিছু শর্ত পূরণ করে দুই দফায় দুই কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার তৃতীয় কিস্তির পালা। দুই মাস পর অর্থাৎ জুনে যা পাওয়ার কথা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের শর্ত কতখানি পূরণ হলো, তার মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই কিস্তি ছাড় করা হবে।

এদিকে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তা পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ গত জুলাইয়ের মধ্যে রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করার কথা ছিল। জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ হারে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ চলতি অর্থবছরের বাজেটে নেওয়া হয়েছে। ফলে এটি শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। গত জুলাইয়ের মধ্যেই সুদহার নির্ধারণের একটি করিডোর ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি শতভাগ বাস্তবায়ন হলেও সুদের হার এখনও বাজারভিত্তিক করা হয়নি।

ব্যাংক কোম্পানি ও ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন সংসদে উপস্থাপন করে পাশ করার মাধ্যমে ইতোমধ্যে এটি কার্যকর করা হয়েছে। ফলে এটিও শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে।

আইএমএফের শর্ত মোতাবেক তিন মাস পর পর জিডিপির হিসাব প্রকাশ করা হচ্ছে। ঋণ পুনঃতফশিল ও খেলাপির তথ্য বার্ষিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে শর্তটি শতভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার কাঠামো এখনও করা হয়নি। যদিও এটি গত ডিসেম্বরের মধ্যে করার শর্ত ছিল। সরকার এটি নিয়ে কাজ করছে। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমাতে ও মূলধন বাড়াতে তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ছিল গত জুলাই থেকে। এটি শুরু করা হয়েছে। তবে এখনও শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• চামড়া শিল্পে ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা প্রস্তাব সিপিডির
• জুন নাগাদ আয়কর রিটার্ন ৪৫ লাখে উন্নীত হবে
• দেশের দায়দেনা পরিস্থিতির ‘প্রতারণামূলক ব্যবস্থা’
• আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্টের শঙ্কা
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved