Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং [ Online ] 26/04/2024
বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং
ড. মো. আবদুল বাকী চৌধুরী নবাব

গ্লোবাল ব্যাংকিং তথা মানি মার্কেটে বাস্তবপ্রসূত যুগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নতুন নিয়ামক একের পর এক যোগ অব্যাহত আছে। এর মধ্যে একটি হলো অফশোর ব্যাংকিং। আর এই ধারণাটির উৎপত্তি যুক্তরাজ্য থেকে। মজার ব্যাপার হলো যে, যুক্তরাজ্য থেকে দূরবর্তী চ্যানেল দ্বীপগুলোকে ঘিরে এ বিষয়টি উদ্ভূত হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ অফশোর ব্যাংকগুলো ভিন দেশগুলোতে অবস্থিত। অবশ্য এখন রূপকভাবে সব স্থানেই প্রযোজ্য। এর উল্লেখযোগ্য বড় উদাহরণ হলো ল্যান্ডলকড অফশোর ব্যাংক, অ্যান্ডোরা অফশোর ব্যাংক, লুক্সেমবার্গ অফশোর ব্যাংক। তা ছাড়া সুইজারল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে অফশোর ব্যাংক রয়েছে। বর্তমানে অবশ্য অনেক দেশে অফশোর ব্যাংক সময়ের ব্যবধানে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই তো গত ২০২৪ সালের ৫ মার্চ জাতীয় সংসদে অফশোর ব্যাংকিং বিল ২০২৪ পাস হয়ে যায়। বস্তুত বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ জোরদার করার লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এরপর ২০২৪ সালের ২ মার্চ সংসদে অফশোর ব্যাংকিং বিল ২০২৪ উত্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক বিলটি পরীক্ষাপূর্বক এক দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার নিমিত্তে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ মার্চ বিলটি পাস করার মাধ্যমে দেশের আইনি কাঠামোর সারথী ধরে অফশোর ব্যাংকিংয়ের দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। অফশোর ব্যাংকিং প্রচলিত ব্যাংকিং কার্যক্রমের চেয়ে ভিন্ন। এতে স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব করা হবে। মোট পাঁচটি বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন করা যাবে যেমন-মার্কিন ডলার, পাউন্ড স্টারলিং, ইউরো, জাপানি ইয়েন ও চীনা ইউয়ান।

যদিও বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তখন বাংলাদেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে ইপিজেডের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেওয়ার জন্য অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এক আদেশের মাধ্যমে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমোদন দেয়। কিন্তু কোনো নীতিমালা ছাড়াই চলতে থাকে এটির কার্যক্রম। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমবারের মতো নীতিমালা জারি করে। তবে ১৯৮৫ সালের আদেশের আদলে শুধু ব্যাংকের আলাদা ইউনিট হিসেবে অফশোর ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে শুরু হলেও সে রকম কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাই সবদিক বিবেচনায় এনে ৩৯ বছর পর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৫ মার্চ আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে


পুরোপুরি অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি হলো। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি, রিজার্ভ সংকট এবং এলসি খোলার সংকট সমাধানসহ বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স নিতে হবে। শুধু লাইসেন্সধারী ব্যাংকগুলোতেই অফশোর অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। এদিকে এডি তথা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য অনুমোদিত যে শাখা আছে, তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় এলসি খুলতে হলে নিজস্ব ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ থাকতে হবে। না থাকলে তারা অন্য কোনো বিদেশি ব্যাংক থেকে ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা ধার করতে পারবে না। অথচ সেই ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এই কাজটি করতে পারবে।

মূলত অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের ভেতরে পৃথক ব্যাংকিং সেবা। প্রচলিত ব্যাংকিং বা এতদসংক্রান্ত শাখার কার্যক্রমের চেয়ে ভিন্নতর অফশোর ব্যাংকিং। কেননা এ জাতীয় কার্যক্রমে আমানত গ্রহণ ও ঋণ দেওয়ার দুই কার্যক্রমই বৈদেশিক উৎস থেকে আসে। এ ব্যাংকিং কার্যক্রমে বিদেশি গ্রাহকদের জন্য অধিক গুরুত্ব বহন করে থাকে। আর শুধু বিদেশি তথা অধিবাসীদের মধ্যেই সীমিত থাকে। এ ধরনের ব্যাংকিংয়ে কেবল বিদেশ থেকে তহবিল নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বিতরণ করতে হয়। তা ছাড়া আলাদা আইনকানুনের মাধ্যমে এ তহবিল পরিচালিত হয় এবং যুগপৎ হিসাব সংরক্ষণও করা হয়। অবশ্য মুনাফা ও লোকসানের হিসাব যোগ হয় ব্যাংকের মূল মুনাফায়।

আসলে অফশোর ব্যাংকিং হচ্ছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মালিকের নিজের দেশ ব্যতীত অন্য কোনো দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার পদ্ধতি। ট্যাক্স সুবিধা, সম্পদের নিরাপত্তা ও উচ্চ সুদহারের জন্য অনেকেই এ পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। তবে এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, যার মধ্যে অ্যাকাউন্ট বজায় রাখার জন্য তুলনামূলক অধিক খরচ করতে হয়। তবে এর সুবিধা হচ্ছে একাধিক দেশের একাধিক মুদ্রায় এ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। সাধারণত অধিকাংশ গ্রাহক যে দেশের মুদ্রায় ব্যাংকিং করেন সে দেশের মুদ্রাতেই এ ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে এটিএম বুথ, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারেন। আর অফশোর ব্যাংকিংয়ের বড় প্লাস পয়েন্ট হলো এ ক্ষেত্রে গোপনীয়তা অনেক বেশি হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে গোপনে শেয়ার কেনা যায় এবং নতুন কেনা শেয়ারের ব্যাপারটি গোপনও রাখা যায়। এ ধরনের পদ্ধতিতে ট্যাক্স কর্তনের আগের অবশিষ্ট অর্থের ওপর সুদ দেওয়া হয়। বিদেশি আয়ের ওপরে যারা ট্যাক্স দেন না, তারা এ পদ্ধতিতে অধিক রিটার্ন উপভোগ করতে পারেন। আর একাধিক জায়গার ওপরে ভিত্তি করে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

এদিকে অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেতে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয় বলে অনেক সময় এ ক্ষেত্রে নিউইয়র্কভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। তা ছাড়া মাঝেমধ্যে অফশোর ব্যাংকে থাকা অর্থ পেতে অনেক সময় ঝামেলা পোহাতে হয়। এটিএম কার্ড দিয়ে কেনাকাটার ব্যাপারে অর্থ বের করা গেলেও পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কখনো কখনো সাত দিন লেগে যেতে পারে। আর অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খরচ দেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেয়ে বেশি, যা আগেই কিছুটা উল্লেখ করেছি।

মূলত একটি ব্যাংক যখন নিজ দেশের বাইরে, বিশেষ করে নিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থার আওতার বাইরে গিয়ে তাদের নিজস্ব ব্যাংকিং প্রোডাক্ট বা সেবা বিক্রি করে, তখন তাকে সহজভাবে অফশোর ব্যাংকিং বলা হয়ে থাকে। দেশের বাইরে গিয়ে ব্যাংকিং সেবা বিক্রি করলেই যে তাকে অফশোর ব্যাংকিং বলা হবে, তা তেমন নয়। কেননা আমাদের দেশের কোনো ব্যাংক অন্য আরেক দেশে একটি শাখা স্থাপন করে সেখানে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করলেই তাকে অফশোর ব্যাংকিং বলা যাবে না। বরং সেটি হবে ব্যাংকের বৈদেশিক শাখা। উল্লেখ্য, ব্যাংকের বৈদেশিক শাখা এবং অফশোর ব্যাংকিংয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। একটি ব্যাংক যখন নিজ দেশের বাইরে অন্য আরেকটি দেশে শাখা স্থাপন করে সেখানকার প্রচলিত এবং অনুমোদিত ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে তখন সেটি হবে ব্যাংকের বৈদেশিক শাখা। পক্ষান্তরে সেই ব্যাংক যখন তাদের নিজস্ব কিছু প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিজেদের আওতায় অন্য দেশে অপারেশন চালু করে সরবরাহ করবে, তখন সেটি হবে অফশোর ব্যাংকিং।

এ ছাড়াও অফশো ব্যাংকিংয়ের আরও একটি আধুনিক সংজ্ঞা আছে, যা হচ্ছে অফশোর ব্যাংকিং হিসাব। এটি ব্যাংকের এমন একটি হিসাব পদ্ধতি, যার অধীনে একটি দেশের ব্যাংক হিসাব খুলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত সেই ব্যাংকের শাখা থেকে লেনদেন করা যায়। তা ছাড়া দ্বীপ দেশভিত্তিক আরও এক ধরনের অফশোর ব্যাংকিং চালু আছে, যেখানে কর ফাঁকি দেওয়া অর্থ জমা রাখার সুবন্দোবস্ত আছে। এ ক্ষেত্রে কেম্যান আইল্যান্ডস, বাহামা, বারমুডা অফশোর ব্যাংকিংয়ের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত।

এখানকার অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। এর আইন সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার ধরনও ভিন্ন। এসব দ্বীপ দেশের অফশোর ব্যাংকিং বিশ্বের অন্য কোনো দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাইরে। এমনকি আমেরিকার মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থার আওতারও বহির্ভূত। এখানকার অফশোর ব্যাংকিংয়ে মূলত বিশ্বের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা তাদের কর না দেওয়া অর্থ জমা রাখেন। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি উন্নত দেশেও অফশোর ব্যাংকিং সুবিধা আছে, যেমন-সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং বেলিজ। এ ধরনের অফশোর ব্যাংকিং সুবিধার কারণে এসব অঞ্চল বিশ্বব্যাপী অফশোর ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টার হিসেবে পরিচিত।

এখানকার অফশোর ব্যাংকিংয়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গ্রাহকদের হিসাবের কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা। তবে অবস্থাভেদে মাঝেমধ্যে পানামা পেপারের মতো ঘটনায় অফশোর ব্যাংকিং হিসাবে জমা রাখা গ্রাহকদের কিছু তথ্য প্রকাশ হয় মাত্র। এখন অবশ্য কিছু কিছু গোপনীয়তার শর্ত শিথিল হয়েছে। সুইস ব্যাংক ছিল সবচেয়ে বেশি গোপনীয়তার শর্ত এবং একসময় সুইস ব্যাংক থেকে গ্রাহকের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করা হতো না। কিন্তু বর্তমানে তেমনটি নয়। কেননা আন্তর্জাতিক চাপ, বিশেষ করে আমেরিকার চাপে সুইজারল্যান্ড সে অবস্থা থেকে এখন অনেকটাই সরে এসেছে।

সুইস ব্যাংক এখন তাদের অফশোর ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকদের তথ্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে সরবরাহ করে থাকে। অবাধ উদারনীতির আড়ালে অফশোর ব্যাংকিংয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থনীতি এবং সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে। বস্তুত এ ব্যাপারে তেমন অ্যাক্সেস না থাকায় প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পাওয়া কঠিন হয়ে থাকে। অফশোর প্রাইভেট ব্যাংকিং সাধারণত উচ্চ আয়ের মানুষরা খোলে। কেননা অফশোর হিসাবগুলো পরিচালনা ও চালু রাখার খরচ অনেক বেশি, তাই মনিটরিং ব্যবস্থাটা যথাযথ বিধি মোতাবেক পরিচালনাকারী ব্যাংকগুলোর দায়িত্ববোধের ওপর নির্ভরশীল বলে মনে হয়।

বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে নতুন যে আইনটি হয়েছে, তাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধিসহ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উৎসাহ যোগাবে। সত্যি কথা বলতে কি, কোনো ব্যক্তি নয়, বরং আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে এ আইনটির প্রয়োজন ছিল।

অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই আছে। তবে বাংলাদেশের মতো অগ্রসর অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ ব্যাংকিং সেবা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে প্রতীয়মান হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ও মানি মার্কেটের সংশ্লিষ্টদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• কুমিল্লায় চান্দিনা শাখা উদ্বোধন করল যমুনা ব্যাংক

• কুমিল্লায় চান্দিনা শাখা উদ্বোধন করল যমুনা ব্যাংক
• সিটি ব্যাংক ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর
• সিটি ব্যাংক ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved