কারিগরি বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনা যেন এক সাগর
চুরির ঘটনা। একের পর এক সনদ জালিয়াতির ঘটনা বেরিয়ে আসছে। এটা কারিগরি
বোর্ডের জাল সনদ চক্রের দীর্ঘদিনের ফসল বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান। এই
চক্রের নেটওয়ার্ক সারা দেশব্যাপী। কর্মকর্তাদের মতে, এই জাল সনদের চাপে
আসল সনদ উধাও হওয়ার মতো ঘটনা। গত রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ খিলগাঁও পূর্ব
গোড়ান এলাকার একটি ভবনের নিচতলার বাসা থেকে কামরুল হাসান আবেদ নামে একজন
জাল সনদ সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
তার বাসা থেকে জাল সনদ
তৈরির সরঞ্জামাদি ও কারিগরি বোর্ডের নমুনাসংবলিত সার্টিফিকেট জব্দ করে
গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল রবিবার আবেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের
রিমান্ডে আনে। এর আগে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর
রহমানের নেতৃত্বে কারিগরি বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামানসহ পাঁচ
জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা কারিগরি বোর্ডের জাল সনদ করার শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত কীভাবে করেছে এবং কারা জড়িত বিস্তারিত মহানগর গোয়েন্দা
পুলিশের কাছে তারা তুলে ধরেন। জাল সনদ নিয়ে আদালতেও তারা স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাদের তথ্য অনুযায়ী কারিগরি বোর্ডের বর্তমান
চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীকে গোয়েন্দা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। চেয়ারম্যানের
স্ত্রী জাল সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাকে
জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। চেয়ারম্যানও এই দায় স্বীকার করেছেন। যদিও তিনি এই
ঘটনা জানতেন না বলে ডিবির কর্মকর্তাদের জানান। তবে এই দায় তিনি এড়াতে পারেন
না।
এদিকে জাল সনদে স্বাস্থ্য বিভাগে নার্স হেলথ
টেকনোলজিস্টরা কোনো হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন কি না—এ নিয়ে চিকিৎসকসমাজ
ভীতসন্ত্রস্ত। এই ভুল চিকিৎসায় কত রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং কত রোগীর
অঙ্গহানি হচ্ছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে চিকিৎসকমহল ভীতসন্ত্রস্ত। এ
ধরনের মৃত্যুর ঘটনা বরবরই চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর বর্তায়। এ ধরনের ঘটনায়
মামলা ও হামলার ঘটনা ঘটে। নানাভাবে তারা হয়রানির শিকার হন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, এই ঘটনার পর চিকিৎসাসেবা
নিয়ে তারা শঙ্কিত। চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কোনো ভুল হচ্ছে কি না। তাদের মতে,
চিকিৎসাসেবা একটি টিম ওয়ার্ক। টিমের একটি ভুলের জন্য একজন রোগীর মৃত্যু
হতে পারে। জাল সনদ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
তাদের মতে এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাতে কারিগরি বোর্ডের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানে
এ ধরনের চক্র যেন জাল সনদ তৈরির দুঃসাহস দেখাতে না পারে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত কামরুল আবেদ ডিবির
কর্মকর্তাদের জানান, কারিগরি বোর্ডের একজন কর্মকর্তার পরিচয়ে একজন ব্যক্তি
প্রথম লটে ১ হাজার সার্টিফিকেট তৈরির কথা বলেছেন। পরে চুক্তি অনুযায়ী আরো
অনেক সনদ তৈরি করে দিতে হবে বলে ঐ কর্মকর্তা আবেদকে জানিয়েছেন। কারিগরি
বোর্ডের সার্টিফিকেটের নমুনা কপি ও ছাপানোর আদেশ কপিও আবেদের কাছে পাঠানো
হয়। গ্রেফতারকৃত আবেদ একজন কম্পিউটারম্যান এবং সফটওয়্যার সম্পর্কে তার ভালো
ধারণা রয়েছে।
তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এই সনদ জালিয়াতির
সঙ্গে আরো অনেকেই জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেট সনদ জালিয়াতির বাণিজ্য
করে আসছে। পর্যায়ক্রমে তাদের গ্রেফতার করা হবে। এই জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে
কারিগরি বোর্ডের থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একশ্রেণির নার্স ও টেকনোলজিস্টদের
সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এই সম্পর্কে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের
বক্তব্য সুস্পষ্ট যে, আমরা অভিযান চালাচ্ছি জাল সনদ নিয়ে। কোনো বৈধ
সনদধারীকে ব্যক্তিকে ধরার জন্য নয়।