Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
কর-ভ্যাটে ছাড় বাতিল বাড়াতে হবে রাজস্ব [ অনলাইন ] 29/04/2024
কর-ভ্যাটে ছাড় বাতিল বাড়াতে হবে রাজস্ব
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে রেখেছে সরকার। এরপর এ সুবিধা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মিশন। একইভাবে বিভিন্ন খাতে দেওয়া কর ও ভ্যাটে ছাড় তুলে দেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকোনমিকস ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কয়েকটি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে মিশনের তরফ থেকে ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী, আগামী বাজেটে কর-জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিনিধি দলটির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আগামী জুন পর্যন্ত দেওয়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ আর না বাড়ানো। এ ছাড়া পেট্রোলিয়াম খাতে দেওয়া অবচয় সুবিধাও প্রত্যাহারের পরামর্শ দেয় মিশন।
এদিকে বর্তমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভারের ক্ষেত্রে ৩, ৫, ৭ ও ৯ শতাংশ হারে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বিদ্যমান আছে। আগামী বাজেট থেকে এটি একক রেট ১৫ শতাংশ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিনোদন, রেস্তোরাঁতেও ভ্যাটে ক্যাপ তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া কাপড় ও পাদুকা, ভোক্তাপর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন খাতে যে করছাড় দেওয়া রয়েছে, সেগুলোও পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

আয়কর আইনের ষষ্ঠ তপশিলের চতুর্থ অংশে ৩৩ ধরনের উৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যেসব খাত এ তালিকায় আছে, সেগুলো হলো অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্ট এবং রেডিও ফার্মাসিউটিক্যালস; কৃষি যন্ত্রপাতি; স্বয়ংক্রিয় ইট; অটোমোবাইল; ব্যারিয়ার কন্ট্রাসেপটিভ ও রাবার ল্যাটেক্স; ইলেকট্রনিকসের মৌলিক উপাদান (যেমন– ক্যাপাসিটর, ট্রানজিস্টর, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, মাল্টিলেয়ার পিসিবি); বাইসাইকেল ও এর খুচরা যন্ত্রাংশ; বায়োফার্টিলাইজার (জৈব সার); বায়োটেকনোলজিভিত্তিক কৃষিপণ্য; বয়লার ও এর খুচরা সরঞ্জাম; কম্প্রেসর ও এর খুচরা যন্ত্রাংশ; কম্পিউটার হার্ডওয়্যার; আসবাব; গৃহসামগ্রী (ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, ইন্ডাকশন কুকার, ওয়াটার ফিল্টার); কীটনাশক ও বালাইনাশক; চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য; এলইডি টিভি; স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলমূল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াকরণ; মোবাইল ফোন; পেট্রোকেমিক্যালস, ফার্মাসিউটিক্যালস; প্লাস্টিক রিসাইক্লিং; টেক্সটাইলস মেশিনারি; টিস্যু গ্রাফটিং; খেলনাসামগ্রী; টায়ার ম্যানুফ্যাকচারিং; ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সফরমার; কৃত্রিম ফাইবার বা মানব তৈরি তন্তু ম্যানুফ্যাকচারিং; অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ ও উৎপাদন ম্যানুফ্যাকচারিং; অটোমেশন ও রোবটিকস ডিজাইন, ম্যানুফ্যাকচারিং ও এর যন্ত্রাংশ; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সিস্টেম ডিজাইন ও উৎপাদন; ন্যানোটেকনোলজিভিত্তিক পণ্য ম্যানুফ্যাকচারিং; এয়ারক্রাফট হেভি মেইনটেন্যান্স সার্ভিস এবং খুচরা যন্ত্রাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং।
একই সঙ্গে রাজস্ব বাড়াতে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস– এ তিন উইংয়ে রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কারের তাগাদা দিয়েছে প্রতিনিধি দল। এদিকে বৈঠকে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কর ও ভ্যাটে ছাড় কমানো, নতুন আয়কর আইনের সঠিক বাস্তবায়ন এবং অডিট কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনাসহ বেশ কিছু খাত থেকে বাড়তি ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনা তুলে ধরেছে এনবিআর। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মিশন।

এ ক্ষেত্রে আগামী জুনের শেষ নাগাদ এনবিআরকে ভ্যাট ও আয়কর খাতে কর কমপ্লায়েন্স ইম্প্রুভমেন্ট প্ল্যান চূড়ান্ত করার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিনিধি দল। এ ছাড়া রাজস্ব বাড়াতে আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বাড়াতে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে কৌশল নিতে হবে। একই সঙ্গে তা বাস্তবায়নে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্ত করতে হবে। এ ছাড়া আগামী জুলাইতে শুরু হওয়া করবর্ষে ই-রিটার্ন ফাইলিং এবং অনলাইন পেমেন্ট কার্যক্রম শুরুর প্রয়োজন হবে। আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী করছাড় নির্ধারণ এবং পর্যায়ক্রমে তা প্রত্যাহারে একটি কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট বা বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আদায় করা সম্ভব ছিল। তবে ওই বছর সরকার মাত্র ৮৫ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট সংগ্রহ করতে পেরেছিল। অর্থাৎ আদায়যোগ্য ভ্যাটের চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ কম ভ্যাট আদায় হয়েছে। নীতিগত অবস্থানের কারণে ভ্যাট আদায়ে এমন ব্যবধান থাকছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বলেছে, নীতি ও বিধিবিধান পরিপালনের ব্যবধান কমাতে পারলে অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব নীতি ও দুর্বলতার কারণে ভ্যাট আদায় হয়নি, এর মধ্যে রয়েছে বড় অঙ্কের ভ্যাট ছাড়, ভ্যাট আদায় পদ্ধতিতে ফাঁকফোকর থাকা, নিয়মের অপর্যাপ্ত প্রয়োগ ইত্যাদি।

এদিকে গত নভেম্বরে প্রকাশিত এনবিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ করব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। ‘প্রত্যক্ষ করব্যয়’ বলতে রেয়াত, ছাড়, অব্যাহতি, হ্রাসকৃত হারে করারোপ এবং মোট করযোগ্য আয় পরিগণনা থেকে আয় বাদ দেওয়াকে বোঝায়। এটি এক ধরনের ভর্তুকি। এ ভর্তুকি কর হিসেবে আদায় হলে মোট করের পরিমাণ বাড়ত। ঋণ কর্মসূচির আওতায় করছাড় কমানোর শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। ২০২৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে তিন ধাপে বিদ্যমান সব ধরনের করছাড় বাতিল করতে হবে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved