Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
গলার কাঁটা বিদেশি ঋণ [ পাতা ১ ] 29/04/2024
গলার কাঁটা বিদেশি ঋণ
♦ ঋণের অর্ধেকই যাচ্ছে আসল ও সুদ পরিশোধে ♦ সুদের হার বাড়াতে চায় উন্নয়ন সহযোগীরা
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। প্রতি মাসে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ ছাড় করা হচ্ছে তার প্রায় অর্ধেকই চলে যাচ্ছে ঋণের বিপরীতে সুদ ও কিস্তি পরিশোধ করতে। এদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ বাড়ছে। ফলে কোনোভাবেই কমছে না ডলার সংকটও। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের শুধু সুদ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। 

আর জুলাই-মার্চ পর্যন্ত সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে ১১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ৯ মাসেই খরচ হয়ে গেছে এ খাতে বরাদ্দের ৯৪ শতাংশ অর্থ। আসছে অর্থবছর থেকে এই চাপ আর বাড়বে। অর্থবিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জনায়, এই মুুহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে সাড়ে ১১ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণের চাপ রয়েছে। এই ঋণ দেশি বা বিদেশি হোক, তা নির্দিষ্ট সময় শেষে সুদসহ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো কারণে কিস্তি খেলাপি হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঋণমান খারাপ হয়ে যাবে। এতে একদিকে দেশের ইমেজ ক্ষুণ হবে। অন্যদিকে বিদেশি ঋণপ্রাপ্তির উৎসগুলো সীমিত হয়ে আসবে। ফলে যথাসময়ে এ ঋণ পরিশোধে সরকারের মধ্যে বড় ধরনের চাপ রয়েছে। আবার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও সচল রাখতে হচ্ছে। অবশ্য এর আগে ঋণ পরিশোধে কখনই ব্যর্থ হয়নি বাংলাদেশ।

সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী আর মাত্র দুই বছর পরই স্বলোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ। এই তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের ঋণমান বাড়বে ঠিক তেমন বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানপ্রাপ্তি সংকুচিত হয়ে আসবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের সুদও বাড়বে নিয়ম মোতাবেকই। অবশ্য ২০২৬ সালের পর আরও চার বছর স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে সুবিধাদি বহাল থাকবে বাংলাদেশের। তবে তার আগেই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে বৈদেশিক ঋণের সুদ কিছুটা বাড়াতে চায় উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলো। 

যদিও বাংলাদেশ তাদের প্রস্তাবে এখনো তেমন কোনো সাড়া দেয়নি। উল্টো ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আরও চার বছরের জন্য সুবিধাদি পেতে লবিং করছে। ফলে বিদেশি ঋণের বোঝা বাড়াকে এক ধরনের গলার কাঁটা হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক অনুষ্ঠানে বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিদেশি ঋণ ও এর সুদ পরিশোধের মাত্রা ছিল আরও বেশি। ওই সময়ে সরকার যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ পেয়েছে তার প্রায় ৬৮ শতাংশই বিদেশি ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হয়েছে। পরে অবশ্য কিছুটা কমেছে। আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে বিদেশি ঋণ ও এর সুদ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। কেননা বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরেই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে পরিকল্পনা কমিশন।

এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) গত ৯ মাসেই বিদেশি ঋণের সুদ-আসল মিলিয়ে মোট ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে আসল ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের আসল ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধ বাবদ ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট ৩৭ হাজার ৭৬ কোটি টাকা পরিশোধের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডলারের আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। এ ছাড়া পাচার তো বাড়ছেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত আমদানি ব্যয়। আবার এখন থেকে যোগ হবে বড় অঙ্কের বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের বাড়তি চাপ। যা দেশের অর্থনীতিকে এক ধরনের প্রচ  চাপের মধ্যে ফেলেবে।’ সূত্র জানায়, দেশে প্রতি মাসে যে পরিমাণ ডলার আসছে। বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী প্রতি মাসে অন্তত ১ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার ঘাটতি থাকছে বৈদেশিক বাণিজ্যে। যার ফলে দেশের ডলার সংকট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে নেওয়া বিদেশি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ইতোমধ্যে পার হয়েছে। ফলে ঋণ ও সুদ পরিশোধ দুটোরই চাপ বাড়ছে। এটা আরও বাড়বে। এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, বাংলাদেশের অনুকূলে প্রতি মাসে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ ছাড় হচ্ছে। 

তার অর্ধেক অংশই আবার চলে যাচ্ছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে। অর্থাৎ বৈদেশিক ঋণের ছাড়কৃত প্রতি এক টাকার অন্তত ৪৩ পয়সাই ব্যয় হচ্ছে ঋণ পরিশোধে। আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের এই চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে অর্থছাড় হয়েছে ৪৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, কিন্তু ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৮৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ ঋণ প্রাপ্তির ৪২ দশমিক ২১ শতাংশই চলে যাচ্ছে পরিশোধে। জানা গেছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাজারভিত্তিক ঋণের সুদহার বেড়েছে, যা সরকারের বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়িয়েছে। সরকার চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে উন্নয়ন অংশীদারদের সুদ ও আসল পরিশোধে ১৮৫ কোটি ডলার ছাড় করেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়কালে এটা ছিল ১২৮ কোটি ডলার। আসছে অর্থবছর এই পরিমাণ আরও বাড়বে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের প্রায় ৭৫ শতাংশই বাজারভিত্তিক সুদভিত্তিতে নেওয়া। আবার এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকেও বাজারভিত্তিক সুদহারে ঋণ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক থেকেও সীমিত পরিসরে বাজারভিত্তিক সুদহারে ঋণ নেয় বাংলাদেশ। এসব ঋণের বিপরীতে সুদের হার অন্য ক্ষেত্রের তুলনায় কিছুটা বেশি। যার প্রভাব পড়ভে দেশের ডলারের বাজারেও। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে। এর মধ্যে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদেশি ঋণ ৭৯ বিলিয়ন ডলার। বাকি ২১ বিলিয়ন ডলার দেশের বেসরকারি খাতের। শুধু তাই নয়, বিদেশি ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০ বছরে ভারতের বিদেশি ঋণ প্রায় ৮৩ শতাংশ, পাকিস্তানের ১০১ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার ১১৯ শতাংশ বেড়েছে। একই বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ২১৩ দশমিক ৬ শতাংশ বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। একই সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, আলোচ্য সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা এবং ঋণমানও বেড়েছে বাংলাদেশের।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved