আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাওয়া খাদ্য সহায়তা (রেশন) রোহিঙ্গারা
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সেনা ও আরাকান আর্মির সদস্যদের কাছে পাচার
করছে। বিনিময়ে তারা মাদকদ্রব্য পাচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে
আরও বিজিবি সদস্য মোতায়েন ও টহল জোরদারের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে
মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আগামী মাসে (মে)
টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কাও
প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনে মাদক পাচারের নতুন প্রবণতা দেখা
দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বৈঠকে কিশোর
গ্যাং নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠক
সূত্র জানায়, বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব
ফৌজিয়া খানের সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায়
বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ কিছু ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক
সংস্থা থেকে রোহিঙ্গাদের দেওয়া রেশন অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে পাচার হয়ে
যাচ্ছে। মূলত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্য (তাতমাদো) ও আরাকান আর্মির
সদস্যদের আপৎকালীন মাদকের বিনিময়ে রেশন সরবরাহের ফলে মাদক ও চোরাচালান
পণ্যের সরবরাহ বাড়তে পারে। এ জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পিলার ৩৫-৪১
নং এলাকায় আরও বিজিবি মোতায়েনের পাশাপাশি টহল জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয় দালাল ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিদের
পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
ওই
প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো.
মাহফুজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানেন না।
বৈঠক
সূত্র জানায়, বৈঠকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়,
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনে মাদক পাচারের নতুন প্রবণতা
মোকাবিলা করা অধিদপ্তরের জন্য চ্যালেঞ্জ। অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের
ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ
ফারুকী।
সংসদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে মাদক নির্মূলে
সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় সংসদীয় কমিটি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিবেদনে আগামী মাসে টেকনাফ
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভূখণ্ডে যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কার
কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং বিজিপি
সদস্যদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা বাড়তে পারে। এ ছাড়া সীমান্তে
যুদ্ধাবস্থায় আগ্নেয়াস্ত্র সহজলভ্য হওয়ায় সন্ত্রাসী দল বা গোষ্ঠী
আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার করতে পারে। স্থানীয়
পাহাড়ি ও মগ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সখ্য থাকায় আরাকান আর্মি বাংলাদেশের
পার্বত্য অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে
কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। বলা হয়, আগে ঢাকা শহরে কিশোর
গ্যাংয়ের উৎপাত দেখা যেত; এখন তা প্রতিটি জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে
প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা
নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কিশোর গ্যাং দমনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে
সুপারিশ করেছে কমিটি।
বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, কমিটির
আগের বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেছিলেন,
অগ্নিকাণ্ডের পর দায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বেইলি
রোডে আগুনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছিলেন, প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। তখন
কিছু লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হয়। পরে
সব গতানুগতিকভাবে চলতে থাকে।
কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদের সভাপতিত্বে
বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সামছুল
হক দুদু, সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, ময়েজ উদ্দিন শরীফ, ছানোয়ার হোসেন, চয়ন
ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন ও হাছিনা বারী চৌধুরী।