Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
প্রশাসনিক সংস্কারে রাজস্ব বাড়বে ৭৫৩৭ কোটি টাকা [ পাতা ১ ] 29/04/2024
বাংলাদেশ ব্যাংক-এনবিআরের সঙ্গে আইএমএফের বৈঠক
প্রশাসনিক সংস্কারে রাজস্ব বাড়বে ৭৫৩৭ কোটি টাকা
শুধু প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে জিডিপি দশমিক ১৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় বাড়ানোর সম্ভব, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৭ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। তৈরি পোশাক, ফুটওয়্যার, এলপিজি, মোবাইল ফোন উৎপাদনে কর ছাড় বাতিল করা হলে আরও দশমিক ৩১ শতাংশ আয় বাড়ানো যাবে। ভ্যাটের হ্রাসকৃত হার বাতিল, আইটিসহ অপ্রয়োজনীয় খাতে কর অবকাশ সুবিধা বাতিলের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগ আছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কেমন স্বাধীনতা ভোগ করে তা জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জিডিপির আকার বর্তমানে ৫০ লাখ ২৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।

রোববার বাংলাদেশ সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে। বৈঠকে এনবিআরকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা দিয়েছে সংস্থাটি, একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি প্রশমনে বাংলাদেশ ব্যাংককে নানা পরামর্শ দিয়েছে। আইএমএফ বলছে, আগামী বাজেটে ঋণের শর্ত পূরণে জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ থাকতে হবে। স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির অতিরিক্ত এই রাজস্ব আদায় করতে হবে। এজন্য এনবিআর কর ছাড় বাতিল করতে পারে। আগামী জুনের মধ্যে বড় করপোরেশন বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ই-রিটার্ন ফাইলিং এবং অনলাইনে কর পরিশোধে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে। শর্তপূরণে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের কর অবকাশ বা হ্রাসকৃত হারে কর সুবিধা থাকলে তা বাতিল করা যেতে পারে।

আইএমএফ বলছে, আয়কর আইনে এনবিআরকে বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রজ্ঞাপনের কর অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে। অযাচিত কর অব্যাহতি এবং অব্যাহতির অপব্যবহার রোধে এই বিধান বাতিলের বিকল্প নেই। এছাড়া ভ্যাটে ৩ কোটি টাকার বেশি টার্নওভারযুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য স্ট্যান্ডার্ড হার (১৫ শতাংশ) আরোপের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি যত শিল্প হ্রাসকৃত ভ্যাট হার সুবিধা ভোগ করছে, তা বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।

এনবিআর আইএমএফকে জানিয়েছে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে প্রতিবছর বাজেটে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এবারও নেওয়া হবে। রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে এসব পদক্ষেপ বাজেট ঘোষণার আগ পর্যন্ত গোপনীয় রাখা হয়। কর অব্যাহতি কমিয়ে আনার বিষয়ে আইএমএফ যেসব পরামর্শ দিয়েছে, সেগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে শিল্পের সক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

এনবিআর বলছে, শিল্পায়নের স্বার্থেই এতদিন বাংলাদেশ কর অব্যাহতি বা অবকাশ দিয়ে আসছে। যেমন ভ্যাট খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট আইনের প্রথম তফশিলের মাধ্যমে ৪৩১টি আইটেমকে এবং প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৪ শতাধিক শিল্প ও সেবাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। প্রথম তফশিলের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল আমদানি, উৎপাদন ও বিপণনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ জাতীয় অব্যাহতি উঠিয়ে দেওয়া হলে ভোক্তা পর্যায়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কর প্রশাসন সংস্কার, অব্যাহতি কমিয়ে আনা ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে এনবিআরের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা আইএমএফকে অবহিত করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতিবছরের মতো এবারও সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ থাকবে। মোবাইল ফোন খাতে আদায় বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে ব্যাপকভাবে ইএফডি (ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) মেশিন স্থাপনের রূপরেখা অবহিত করা হয়েছে প্রতিনিধিদলকে। এছাড়া ২০২৫ সালের জুন নাগাদ যেসব স্থানীয় শিল্পের ভ্যাট অব্যাহতি মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলোর নতুন করে সুবিধা দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।

একইভাবে বাজেটে আয়কর খাতে কর অবকাশ সুবিধা কাটছাঁট করার কথা জানানো হয়েছে। করজাল বাড়াতে নতুন কর অঞ্চলগুলোর কার্যক্রম জোরদারের পরিকল্পনা থাকবে। শুল্ক খাতে আগামী বাজেটে নতুন শুল্ক আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা থাকবে। এছাড়া অযাচিত অব্যাহতি পরিমাণ কমিয়ে আনা, বকেয়া শুল্ক আদায় কার্যক্রম জোরদার, আদালতে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, শুল্ক আদায় প্রক্রিয়া অটোমেশন এবং কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কার্যকর করার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়। এ খাতে তারা কেমন স্বাধীনতা ভোগ করে। সরকার থেকে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয় কিনা? এছাড়া বিভিন্ন খাতে ঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়ে কীভাবে নীতি প্রণয়ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঝুঁকি মোকাবিলার পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে।

জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশের আলোকে তারা কীভাবে ব্যাংক খাত পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সে বিষয়ে জানিয়েছে। একই সঙ্গে অর্থনীতিসহ ব্যাংক খাতের ঝুঁকি মোকাবিলার নীতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এ খাতে অনুসরণ করা হয়। এর মধ্যে ব্যাসেল ৩ বাস্তবায়ন করা এখন ব্যাংকগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক। কোনো কোনো খাতে এর চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি মূলধন রাখার শর্ত দেওয়া হয় ব্যাংকগুলোকে। ব্যাসেল ৩ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে এখন ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ মূলধন রাখতে হয়। ব্যাংক খাত তদারকি করার নীতিমালা রয়েছে। এর আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি করে।

ব্যাংক খাতের দুর্বলতা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল করতে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। কিছু দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ করা হচ্ছে। এছাড়া খেলাপি ঋণ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী জুনে আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় করার কথা রয়েছে। এর আগে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির শর্ত পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছে। দলটি তৃতীয় কিস্তির শর্ত অনুযায়ী কর অব্যাহতি হ্রাস, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, ভর্তুকি যৌক্তিক করার কৌশল এবং খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা করছে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ডলারের দাম বাড়ায় বেশি চাপে আমদানিকারকরা
• দেশে অর্থনীতির সংকট ও পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের নবতত্ত্ব
• ডলারের দরে অস্থিরতা
• বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত হতে পারে আজ
• আবারও দুই অঙ্কের ঘরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি
• ডাক বিভাগকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা রাজস্ব দিলো নগদ
• প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় বাস্তবতার ছাপ
• দেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৯২৫ কোটি ডলার
• দেশের রিজার্ভ কমে ১৮ বিলিয়ন ডলার
• খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ফের ১০% ছাড়াল
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved