Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
বহুতল ভবনের সংজ্ঞার বিরোধ বহাল [ অনলাইন ] 29/04/2024
রাজউকের নির্মাণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত
বহুতল ভবনের সংজ্ঞার বিরোধ বহাল
রাজউকের বিধিমালায় ১০ তলার উপরে কোনো ভবন হলে সেটা বহুতল * ফায়ার সার্ভিস আইন অনুযায়ী ছয় তলার বেশি ভবনের যেকোনো স্থাপনা বহুতল
বহুতল ভবনের বিরোধপূর্ণ আইনি সংজ্ঞার সংশোধন না করেই ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০২৩ চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেকোনো সময় এটা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হতে পারে। এটা না করা হলে অসাধু ভবন মালিকরা আইনি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়গুলো অবহেলা করবেন। তখন নতুন বিধিমালাও শহরের বিদ্যমান অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকি হ্রাসকরণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে-ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০২০ অনুযায়ী ১০ তলা বা ৩৩ মিটারের বেশি উঁচু ভবনকে বহুতল ভবন বলা হয়। তবে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ অনুযায়ী ছয় তলার বেশি ভবনের যেকোনো স্থাপনাকে বহুতল বলা হয়েছে। অর্থাৎ বহুতল ভবনে অগ্নিনিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত সিঁড়িসহ বিশেষ ব্যবস্থাপনা করতে হয়। যেটা কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও ভবনের নিরাপত্তা বাড়ে। গেজেট হওয়ার পথে থাকা ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় এটা সংশোধন করে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ অনুযায়ী বহুতল ভবনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করার কথা বললেও বাস্তবে তা করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। ওই ভবনটি ১০ তলার নিচে হওয়ায় সেখানে ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি ছিল না। বহুতল ভবনের সংজ্ঞাগত বিচ্যুতি থাকায় একটি সিঁড়িতে অনুমোদন দিয়েছে রাজউক। কেননা রাজউকের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী ১০ তলার উপরে কোনো ভবন হলে সেটা বহুতলা ভবন। আর এই সুযোগ নিয়েছে ওই ভবন মালিক। অথচ অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইনে সাততলা থেকে বহুতল ভবনের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বহুতল ভবনের নিচের স্থাপনায় ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক না হওয়ায় রাজধানীর যত্রতত্র অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ভবন তৈরি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজউকের মিডিয়া মুখপাত্র এবং প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর সড়কের প্রশ্বস্ততা কম। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নেই। মানুষের ভবনের নিরাপত্তা ও বিধিমালা মানার আগ্রহ নেই। বিদ্যমান অবস্থায় এই শহরকে নিরাপদ করতে ফায়ার সার্ভিসের আইনের বহুতল ভবনের সংজ্ঞা যৌক্তিক বলে মনে করি। তবে কোনো বিধিমালায় রাজউক চাইলে তো সব করতে পারে না। কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়। সাততলা থেকে বহুতল ভবন তৈরির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কারও কারও বাধা ছিল, এজন্য তা করা সম্ভব হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ছালেম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ভবন যত উঁচু হয়, অগ্নিনির্বাপণ তত চ্যালেঞ্জের হয়। সেসব দিক বিবেচনায় অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ এ সাততলা ভবন বা স্থাপনাকে বহুতল হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। ঢাকার বাস্তবতায় এখনো সাততলাকে বহুতল ভবন রাখা উচিত।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০২৩ প্রণয়ন কমিটিতে যারা রয়েছেন, তাদের প্রতি আহ্বান জানাব বহুতল ভবন এবং অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের আইনটা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে। কেননা বাস্তবতার নিরিখে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আর অগ্নিনির্বাপণের কাজটা ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্ব। এজন্য এক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের মতামতটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়-ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০২৩ প্রণয়নের কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে রাজউক তা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে। মন্ত্রণালয় নীতিগত কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়-ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ এর আদলে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। তবে এখানে অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বহুতল ভবনের সংজ্ঞাগত বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে বলে রাজউক ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় আগের বিধান বহাল রাখা হয়েছে।

রাজউকের একটি সূত্র জানায়, অংশীজনদের সঙ্গে সভায় বহুতল ভবনের সংজ্ঞাগত বিরোধ নিষ্পত্তি করার বিষয়টি বারবার আলোচনা করা হয়েছে। রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-অগ্নিপ্রতিরোধে ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ অনুযায়ী সাততলা থেকে বহুতল করা হোক। কিন্তু স্থপতি ও আবাসন খাত সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বড় বাধা আসে। এ কারণে রাজউক নতুন বিধিমালায় বহুতল ভবনের সংজ্ঞার বিরোধ সংশোধ করতে পারেনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান যুগান্তরকে বলেন, সাততলা থেকে বহুতল ভবন হওয়া যৌক্তিক। নতুন ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় তা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ তা হয়নি, এটা না করাটা খুবই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিদুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে-এই শহরের ভবনগুলো কতটা অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ। দেশের একটি আইনে যা বলা আছে, বিধিমালায় তার পরিবর্তন করাটাও শোভন নয়। ঢাকার সার্বিক বাস্তবতায় গেজেট হওয়ার আগে সরকারসংশ্লিষ্টদের বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ জানাব।

স্থাপত্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহুতল ভবনের সংজ্ঞা বিভিন্ন ধরনের আছে। কোথাও ২০ তলা ভবনকে বহুতলা বলা হয়। আবাসিক বা অফিস ব্যবহার হয় এমন ১০ তলা ভবনে একটি সিঁড়ি দিয়ে এবং অন্যান্য অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা করে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে একতলা বা দুইতলা হলেও সেখানে অতিরিক্ত সিঁড়ি বা বিশেষ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিধিমালা এটা করতে কোনো বাধা রাখা হয়নি। অর্থাৎ কোন ভবন কী জন্য অনুমোদন পেয়েছে আর কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বেইলি রোডের অগ্নিদুর্ঘটনার ভবনটি আবাসিক কাম অফিস হিসাবে নির্মাণ অনুমোদন নিয়ে সেটার বাণিজ্যিক ব্যবহার করেছে। এই বিষয়গুলো বিশেষভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বা নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় অনেক সুন্দর সুন্দর বিধান রয়েছে। সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহর অনেকাংশে সবুজ ও নিরাপদ হয়ে উঠবে। কিন্তু আমরা তো তার বাস্তবায়ন দেখতে পাই না। বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বিধিমালায় আরও যা থাকছে : ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০২৩ এ ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে কিছু পদক্ষেপও সংযুক্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো তার বাস্তবায়ন শুরু করবে। যথাযথ বাস্তবায়ন হলে ঢাকার ভবনগুলো অনেকাংশে বাসযোগ্য ও নিরাপদ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জনঘনত্ব অনুযায়ী ভবনের উচ্চতা : বিশ্বে একর প্রতি মানুষের বসবাস ১০০ জন থেকে ১২০ জন। অথচ ঢাকায় একরপ্রতি ৪০০ জন থেকে ৫০০ জন বসবাস করছে। সেসব দিক বিবেচনায় সংশোধিত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনার বিষয়গুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় সংযুক্ত করা হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে ক্রুটি দেখা দিলে এই ক্ষেত্রে ড্যাপের নির্দেশনা চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

অকুপেন্সি ছাড়া সেবা সংযোগ মিলবে না : নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় অনুমোদিত ভবনে বসবাস বা ব্যবহার সনদ (অকুপেন্সি) ছাড়া কোনো ভবন ব্যবহার, বিক্রয় বা ইজারা দেওয়া যাবে না। কেউ এর ব্যত্যয় করলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া অকুপেন্সি ছাড়া কোনো সেবা সংস্থা সংযোগ দিতে পারবে না। পাশাপাশি এই সনদ ছাড়া কোনো ইমারতের সম্পূর্ণ বা আংশিক হস্তান্তর, নামজারি ও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না।

স্ট্রাকচারাল ডিজাইন বাধ্যতামূলক : ভবনের নির্মাণ অনুমোদনের জন্য আগে আর্কিটেকচারাল ডিজাইন বাধ্যতামূলক ছিল। নতুন বিধিমালায় স্ট্রাকচারাল ডিজাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

১০ শতাংশ বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক : ১৪ কাঠা বা তার চেয়ে বেশি আয়তনের প্লটের ক্ষেত্রে ১০ কাঠা জায়গা বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ওই জায়গা দিয়ে যাতে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে যেতে পারে। সে বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো দেখভাল করবে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ‘ফার’র মারপ্যাঁচে আবাসন খাত
• ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় সংশোধন চান আবাসন ব্যবসায়ীরা
• নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১২৬০০ ফ্ল্যাট বানাবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
• ফার’র মারপ্যাঁচে আবাসন খাত
• ওয়াসা ও রিহ্যাবের মতবিনিময় সভা
• অ-ননুমোদিত বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের জটিলতা নিরসন করতে চায় রাজউক
• বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট বানাবে সরকার
• অ-অনুমোদিত বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের জটিলতা নিরসন করতে চায় রাজউক
• রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনালের সাথে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মধ্যে মতবিনিময়
• রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনালের সাথে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মধ্যে মতবিনিময়
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved