Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
এডিপি বাস্তবায়নের গতি-প্রকৃতি [ অনলাইন ] 29/04/2024
এডিপি বাস্তবায়নের গতি-প্রকৃতি
২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯ মাস তথা চার ভাগের তিন ভাগই শেষ হয়ে গেছে। অথচ এ সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪২ দশমিক ৩০ শতাংশ। সরকারি প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুলাই-মার্চ ৯ মাসে এডিপিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়নের হার অবশ্য এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপির ৪১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সম্প্রতি প্রকাশিত এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ প্রতিবেদনে খরচের এ চিত্র উঠে এসেছে।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। তাতে প্রকল্প রাখা হয়েছিল ১ হাজার ৬৪৭টি। তবে সংশোধিত এডিপিতে মোট খরচ প্রাক্কলন করা হয় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। অর্থবছরের ৯ মাস পেরোলেও কিছু মন্ত্রণালয় এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছে। বরাদ্দের ২০ শতাংশের কম খরচ করতে পেরেছে– এ রকম মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা ১১। এগুলো হলো– নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

উক্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২৮ চ্যালেঞ্জে ঘুরপাক খাচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন। এর মধ্যে প্রকল্প তৈরি অনুমোদন পর্যায়ে ১১টি, বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১১টি এবং প্রকল্পের শেষে ৬টি চালেঞ্জ রয়েছে। এ কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের কাক্সিক্ষত বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।

ফলে বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে প্রকল্পের কাজ। বাড়ছে মেয়াদ ও ব্যয়। আইএমইডির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদন পর্যায়ে ১১টি চ্যালেঞ্জ হলো- প্রকল্প তৈরিতে দুর্বলতা, দক্ষতার অভাবে অন্য প্রকল্পের ছক অনুসরণ করে নতুন প্রকল্প তৈরি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রকল্প প্রস্তাবে পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনের তথ্যে অপর্যাপ্ততা এবং প্রকল্প গ্রহণে সুবিধাভোগীদের মতামত না নেওয়া। এছাড়াও প্রকল্প তৈরির সময় রেজাল্ট ফ্রেমওয়ার্ক ও লগফ্রেম ওয়ার্ক ঠিকভাবে না করা, প্রকল্প নেওয়ার আগে সম্ভাব্য ভূমি চিহ্নিত না করা, এমটিবিএফের আর্থিক সীমা অনুসরণ না করা এবং প্রকল্পের ফল টেকসই করতে পরিকল্পনা সঠিকভাবে তৈরি না করা। আরও আছে ভৌত কাজের ডিজাইন পরিবর্তন, বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না করে প্রকল্প অনুমোদন এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পের দ্বৈততা। প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ের ১১টি চ্যালেঞ্জ হলো– প্রকল্প প্রস্তাবে দেওয়া কর্মপরিকল্পনা ও ক্রয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করা, প্রকল্পের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য সঠিক ও কার্যকর পরিকল্পনা এবং তা পরিবীক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকা এবং মাঠপর্যায়ে প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা। এছাড়াও কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, নিয়মিত পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) ও পিএসসি (প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি) সভা না করা এবং কার্যাদেশ প্রাপ্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্যাকেজের কাজ শেষ না করে বারবার সময় বৃদ্ধির আবেদন করা। আরও আছে ইউটিলিটি স্থানান্তরে দীর্ঘসূত্রতা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জটিলতা, পিইসি ও পিএসসি সভা ছাড়াই প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব এবং প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে বিলম্ব এবং একজন কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা। প্রকল্প এলাকায় পরিচালকের অবস্থান না করা এবং আইএমইডির সুপারিশ বাস্তবায়ন বা ফলোআপ না করা।

প্রকল্প বাস্তবায়ন পরবর্তী পর্যায়ের ৬টি চ্যালেঞ্জ হলো- প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে পিসিআর (প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন) না দেওয়া, তুলনামূলক আর্থিক বা অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ না করা এবং পিসিআর মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ফিডব্যাক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইএমইডিকে অবহিত না করা।

এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত কার্যক্রম প্রকল্প শেষে পরিচালনা করার জন্য রাজস্ব বাজেটের অপ্রতুলতা, প্রকল্প শেষ হওয়ার পর থেকে প্রাপ্ত ফল স্থায়ী করতে কোনো ব্যবস্থা না করা এবং প্রকল্প শেষে এর যানবাহন নির্ধারিত সময়ে সরকারি পরিবহন পুলে জমা না দেওয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকার হালনাগাদ সংস্করণ ২০২২ সালের জুনে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই নির্দেশিকায় প্রকল্প তৈরির সময় বিবেচনার জন্য বিভিন্ন বিষয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আইএমইডি প্রকল্পের বাস্তবায়ন, দীর্ঘ সময় লাগা এবং প্রাক্কলিত ব্যয় অতিক্রান্ত হওয়ার কারণসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। এ বিষয়ে আইএমইডির সচিব বলেন, আমরা শুধু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেই দায়িত্ব শেষ করিনি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেসব বিষয়ও তুলে ধরেছি প্রতিবেদনে। ইতোমধ্যেই প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আশা করছি আগামীতে এটি আর চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে না। একইসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও একটি অন্যতম বাধা হলো ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা। এটিও সমাধানের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাকি সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হবে।

আইএমইডি বাজেট বাস্তবায়নের যে বক্তব্য দিয়েছে, তা গতানুগতিক ধারার বাহক বলে প্রতীয়মান হয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদগণ। এটা সত্যি যে, বাজেট বাস্তবায়নে চাই একাগ্রতা ও দক্ষতা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নির্বাচনকালীন বাজেট বাস্তবায়নের অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিল রাজস্ব আহরণ, অবকাঠামোগত ঘাটতি, অগ্রধিকারভিত্তিক সরকারি ব্যয় নির্ধারণ, ঘাটতি বাজেটের আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, ব্যক্তি ঋণের প্রতিবন্ধকতা, রফতানি-আমদানি বাণিজ্যে সমতা আনয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সঞ্চয় বিনিয়োগের ভারসাম্য রক্ষা ইত্যাদি, যা একেবারেই দৃশ্যমান। এখন বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা রোড ম্যাপ তৈরি, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, প্রকল্পের গুণগত বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করলে অনেক চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করা সম্ভব। এখন প্রশ্ন হলো, তা কিভাবে সম্ভব? প্রধানমন্ত্রী তার বাজেট সমাপনী বক্তৃতায় জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, সকল বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, অর্থের কোনো অভাব হবে না।

এখন বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা মানেই এর সঙ্গে সংযুক্ত জনশক্তি তথা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সক্ষমতা, যা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু এর উন্নয়নের গতিধারায় কবে নাগাদ এই সক্ষমতা একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছাবে, তা বলা দুষ্কর। কিন্তু দেশ উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে যে গতিতে তার চেয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির গতি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এর জন্য প্রশিক্ষণ ও তদারকির কোনো বিকল্প নেই। একটি রোডম্যাপ ধরে এগোতে হবে। প্রায়ই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর ব্যয় দক্ষতা ও ব্যয়ের মান নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন শোনা যায় অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে। যার ভিত্তিগুলো সরকারের আমলে নেওয়া উচিত। কারণ, রাজস্ব আয় আহরণের একটি বড় প্রতিষ্ঠান হলো এনবিআর, যার সঙ্গে সরকারের স্থায়িত্বশীলতার প্রশ্নটি জড়িত। সে ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নৈতিক ভিত্তি তথা প্রশাসনিক কাঠামো আরও জোরদার করতে হবে। নতুন নতুন করদাতা সংগ্রহে উপজেলায় আরও অফিস করতে হবে এবং বেশি বেশি কর মেলার আয়োজন নতুন অঞ্চলগুলোতে করতে হবে। আবার উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যয়ের মান উন্নয়ন ও অব্যাহত দুর্নীতি প্রতিরোধে উদ্যোগী মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়নকারী সংস্থা, পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ অনু বিভাগকে উন্নয়নের সহযাত্রী হিসেবে কাজ করতে হবে।

লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সাবেক জ্যেষ্ঠ

সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ডলারের দাম বাড়ায় বেশি চাপে আমদানিকারকরা
• দেশে অর্থনীতির সংকট ও পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের নবতত্ত্ব
• ডলারের দরে অস্থিরতা
• বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত হতে পারে আজ
• আবারও দুই অঙ্কের ঘরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি
• ডাক বিভাগকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা রাজস্ব দিলো নগদ
• প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় বাস্তবতার ছাপ
• দেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৯২৫ কোটি ডলার
• দেশের রিজার্ভ কমে ১৮ বিলিয়ন ডলার
• খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ফের ১০% ছাড়াল
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved