[ অনলাইন ] 29/04/2024 |
|
|
প্রশ্ন অর্থনীতিবিদদের |
কত টাকা দিয়ে তারল্য সামলাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক |
|
|
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অনেক দুর্বল ব্যাংক ভুগছে তারল্য সংকটে। এসব ব্যাংককে গণহারে আর্থিক সুবিধা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টিকিয়ে রাখছে। এতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর বাড়তি চাপ বেড়েই চলছে এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
রোববার (২৮ এপ্রিল) ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত এক প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় দেশের অর্থনৈতিক খাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
সভায় প্যানেলভিত্তিক আলোচনায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের কথা উঠছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যে ১০টি ব্যাংক একীভূত করা হবে, যাদের খেলাপির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ও মূলধন ঘাটতি ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এই ৮৪ হাজার কোটি টাকার গড়মিল এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘাড়ের ওপর, যা আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
সভায় পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হওয়ার কথা ছিল শেষ ভরসাস্থল। কিন্তু অবস্থা এমন হয়েছে, তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা দিয়ে দেয়। তারল্য সংকট কেন হলো, এই জবাবদিহিতায় না গিয়ে দেদারসে অর্থ সাহায্য দেশের ব্যাংকিং খাতকে আরও নাজুক করে তুলেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা ছাপানো প্রসঙ্গে আশিক বলেন, আগে দেশের রিজার্ভ বেশি ছিল, তাই যেকোনো সংকটে টাকা ছাপিয়ে সামাল দেয়া গেছে। টাকা ছাপিয়ে অর্থনীতি সামাল দেয়া কোনো সমাধান না। বর্তমানে দেশের রিজার্ভ এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে টাকা ছাপিয়ে অর্থনীতি সামাল দেয়া আর সম্ভব না।
মনসুর বলেন, সরকার এতদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে ঋণ নিচ্ছিল। এ নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানালো তারা আর সরকারকে ঋণ দিবে না। দেখা গেছে ব্যাংকের ডিপোজিট হয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকা, সরকারি ঋণের পরিমাণও দেড় লাখ কোটি টাকা। যা ব্যাংক খাতকে দুর্বল করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে সরাসরি ঋণ না দিয়ে প্রাইভেট ব্যাংককে অর্থ সহায়তা করছে। সেখান থেকে সরকার বেশি সুদে ঋণ নিচ্ছে। এতে করে ঘুরেফিরে ক্ষতি সেই দেশের অর্থনীতিরই হচ্ছে।
অর্থনীতির দিক থেকে বাংলাদেশ এখন রেড জোনে না হলেও ইয়োলো জোনে আছে উল্লেখ করে আশিক বলেন, বাজেটের আকার বড় হলেই হবে না, বাজেট ঘাটতি এবার যাতে কোনোভাবেই জিডিপির ২-৩ শতাংশের বেশি না হয় সেদিকে সর্বাত্মক নজর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ২০০৫ সালে ট্যাক্স আইন পুরোটাই পরোক্ষ ট্যাক্স নিয়ে বলা যায়। আমরা মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলে পরোক্ষ ট্যাক্স বাড়াচ্ছি। এটা কোনো কথা হতে পারে না। আয়করে বা প্রত্যক্ষ করের দিকে জোর না দিলে লাভ হবে না।
উপস্থিত এনবিআরের সাবেক সদস্যরা বলেন, সবাই বলে এনবিআরকে ঢেলে সাজাতে হবে। কিন্তু কীভাবে এবং কী পরিবর্তন আনা দরকার সে বিষয়ে সুষ্ঠু কোনো প্রস্তাবনা এখনো আসেনি। আগে কী পরিবর্তন আনা লাগবে সে বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।
একটি শক্তিশালী জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ, শক্তিশালী তৈরি পোশাক (আরএমজি) রফতানি, স্থিতিস্থাপক রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা গত দুই দশক ধরে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করেছে। আকারের দিক থেকে মাত্র ৫০ বছরে জাতীয় বাজেট প্রায় হাজার গুণ বেড়েছে। অন্যান্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ বলে অভিমত দেন বক্তরা।
তারা বলেন, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ, জ্বালানি ঘাটতি, ভারসাম্যের ঘাটতি এবং রাজস্ব ঘাটতি বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এই অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠব। প্রয়োজনে কৌশলের স্বার্থে বৃদ্ধির হার পরিবর্তন করা যেতে পারে।
তবে আগামী অর্থবছরে ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্কের মতো পরোক্ষ করের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন সত্ত্বেও, মুদ্রাস্ফীতি এখনও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৯৪ বিলিয়ন টাকা ভ্যাট আদায় ফলে জনগণের কষ্ট বেড়ে যেতে পারে বলে জানান বক্তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের বাজেট আকারে বড় হলেও রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় অর্থ সংকটের কারণে অনেক কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। একটি দেশের বাজেট বাস্তবায়ন নির্ভর করে ট্যাক্স-জিডিপির আনুপাতিক হারের ওপর। এখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকায় বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে ওঠে।
এবারের বাজেটে বাংলাদেশের জন্য দুটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় আছে। প্রথমত বাজেটে ভর্তুকির হার কমাতে হবে। ভর্তুকি কমালেও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে বাজেট প্রণয়নের দিকে জোর দেন সাবেক এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের নানা প্রকল্পে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অনেক অর্থ ব্যয় করেছে। আপাতত এ খাতে অর্থব্যয় বন্ধ রেখে পিছিয়ে পড়া খাতের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে রাজনৈতিক চাপ থাকলেও দেশের স্বার্থে সরকারের এখন এ চাপ মোকাবেলার কোনো বিকল্প নেই।
কাস্টমস, ভ্যাট আর আয়কর থেকে দেশে রাজস্ব আয় আসে। আর এই আয় থেকেই বাজেটের ৮০ শতাংশ অর্থের জোগান দেয়া হয়। এলডিসি গ্রাজুয়েশন হলে কাস্টমস থেকে আয় কমে যাবে। আবার ভ্যাট বাড়িয়ে দিলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার দিকে জোর দেন মাহবুব আহমেদ।
তিনি বলেন, এতদিন শিল্প ও বাণিজ্যখাতে কোটা ফ্রি, ডিউটি ফ্রি সুবিধা পেয়ে আসলেও এখন থেকে বাংলাদেশকে শিখতে হবে এসব সুবিধা ছাড়া কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। বাংলাদেশের শিল্প খাত এখন আর শিশু অবস্থায় নেই। সাবালকের মতো শিল্প খাতকেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখতে হবে।
দেশের অর্থনীতি পুনর্নির্মাণের দিকে জোর দিয়ে মাহবুব বলেন, আইএমএফের সব প্রস্তাব খারাপ না। এসব প্রস্তাব গ্রহণ করা যাবে না বলে গোয়ার্তুমি করলে বিপদ বাংলাদেশেরই বাড়বে। একবারে না পারলেও ধাপে ধাপে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির দিকে আগাতে হবে।
অনুষ্ঠানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের কাস্টমস দুর্বলতা তুলে ধরে রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, কাস্টমসকে শক্তিশালী না করলে এফটিএ ফলপ্রসূ হবে না। কাস্টমস থেকে কীভাবে আয় করা যায়, এনবিআরকে কীভাবে আরও শক্তিশালী ও কাঠামোর মধ্যে আনা যায় সেটির দিকে জোর দিতে হবে।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইসিএবির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|