Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে ডিজিটাল ব্যাংকিং [ অনলাইন ] 30/04/2024
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে ডিজিটাল ব্যাংকিং

অর্থনীতিতে যে ঝড় চলছে, তা আরও অন্তত বছরখানেক চলার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এমন অনিশ্চয়তার মধ্যেও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি থেমে নেই। ব্যাংক কিংবা মোবাইল ব্যাংক সবখানেই গণমানুষের সম্পৃক্ততা। এর মধ্যেই দেশে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অভিজ্ঞতার বিচারে ডিজিটাল ব্যাংকে একদমই নবীন বাংলাদেশ। দেশের ব্যাংক খাতে যে ধরনের অস্থিরতা রয়েছে, সেদিক বিবেচনা করলে নতুন এ অভিজ্ঞতায় প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ দুটোই অনেক বড় বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। তারপরও বর্তমান বাস্তবতায় আর্থিক পরিষেবা বাড়ানোর সবচেয়ে বড় সুযোগ হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংকিং।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (এসভিআরএস) জরিপের তথ্য বলছে, ব্যাংকে হিসাব খোলার চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। জরিপের হিসাবে, ২০২৩ সাল শেষে দেশের জনসংখ্যার ব্যাংকে হিসাব রয়েছে ২৮ দশমিক ৩ শতাংশের, অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকের হিসাব খোলা হয়েছে ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশের। অর্থাৎ দিনে দিনে মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে যুক্ত হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে।

ব্যাংকের এত এত সেবার পরও এখন ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছে, যা ডিজিটাল ব্যাংকের একটা দারুণ সুযোগ। শাখা ছাড়া ব্যাংকিং, ঋণ বা আমানতের সবই হবে ডিজিটালি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু ডেলিভারি চ্যানেল হিসেবে প্রচলিত ব্যাংক বা এমএফএস এজেন্ট, বিদ্যমান এটিএম, সিডিএম, সিআরএম নেটওয়ার্ক, এমএফএস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যাবে।

ডিজিটাল ব্যাংকের শাখা, উপ-শাখা, উইন্ডো, এজেন্ট তো দূরে থাক; নিজস্ব কোনো এটিএম, সিডিএম, সিআরএম স্থাপন করা যাবে না। এমনকি ফিজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট ইস্যু করতে পারবে না এ ধরনের ব্যাংক। তবে গ্রাহকদের জন্য ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ইস্যু করা যাবে। অর্থাৎ, সরাসরি কাউন্টার থেকে কোনো ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্য এবং মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে মেয়াদি ছাড়া অন্যান্য খাতে অর্থায়ন বা ঋণ দিতে পারবে। বৈদেশিক বাণিজ্য বা গ্যারান্টি সেবা দিতে পারবে না। তবে রেমিট্যান্স গ্রহণ, দেশের বাইরে রেমিট্যান্স পাঠানো এবং এফসি হিসাব পরিচালনা করতে পারবে।

কভিডের পর ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিষেবাগুলোর চাহিদা আরও বেড়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে এ ধরনের ব্যাংকিং সেবার লেনদেন ব্যাপক হারে বেড়েছে। ডেলয়েটের একটি রিপোর্ট অনুসারে, ওয়েলস ফার্গো নামের একটি আমেরিকান বহুজাতিক আর্থিক পরিষেবা সংস্থা, যেটি ৩৫টি দেশে কাজ করছে এবং বিশ্বব্যাপী ৭ কোটিরও বেশি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। মহামারী চলাকালে অনলাইনে লেনদেন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

জার্মানিভিত্তিক নেতৃস্থানীয় পরিসংখ্যান পোর্টাল স্ট্যাটিস্তার মতে, ভারত ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী সর্বাধিকসংখ্যক ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর নিবন্ধন করেছে। দেশটিতে অবিশ্বাস্য ২৯ কোটি ৫৫ লাখ ব্যবহারকারী ডিজিটাল ব্যাংকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ৭ কোটি বেশি, ফলে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ৫ কোটি ১৪ লাখ ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহারকারী নিয়ে জার্মানি প্রথম স্থানে রয়েছে। এখন পর্যন্ত ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবাগুলো ৮০টিরও বেশি দেশে সফলভাবে প্রয়োগ ও ব্যবহার করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে পরিসংখ্যানে। এ সময় অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ যারা নগদ লেনদেনে যুক্ত ছিল, তারাও আনুষ্ঠানিক আর্থিক পরিষেবায় যুক্ত হয়েছে।

ডিজিটাল ব্যাংকের দারুণ সব আশা ও সুযোগের পাশাপাশি অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। মূল চ্যালেঞ্জটা বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নীতিমালা সেটিতেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা করেছে, তা এখনো অপূর্ণাঙ্গ। তা ছাড়া নীতিমালায় এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের যে যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে, সেটি কমপক্ষে ১৫ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা। প্রশ্ন হলো, প্রযুক্তির এই ব্যাংকিং সেবায় একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কোনো প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা থাকার প্রয়োজন মনে করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক!

আরও বড় চ্যালেঞ্জ হলো, বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে একেবারেই নবীন। ব্যাংক খাতে যে ভয়াবহ দুর্বিষহ অবস্থা, তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত নীতিমালাকেই দায়ী করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কতটুকু শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারবে, সেটি সময়ের ব্যাপার।

স্মার্টফোনের প্রাপ্যতা এবং এমএফএস বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সক্ষমতা হিসেবে কাজ করেছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার প্রবর্তন বাংলাদেশে মানুষের অর্থ লেনদেনের প্রচলিত ধারণার আমূল পরিবর্তন করেছে। এর প্রভাবে বেশিরভাগ ব্যাংক তাদের ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিষেবাগুলো আরও সহজ করতে বাধ্য হয়েছে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকের প্রচলন চ্যালেঞ্জ কী ধরনের এমন প্রশ্নের জবাবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংক ভালো উদ্যোগ কিন্তু এর গোড়ায় গলদ। দেশের কয়েকটি বড় প্ল্যাটফর্মকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অথচ এমন প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেগুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে এখানে কী হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছি।’

এ খাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা বাড়ানোর দাবি করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এ খাতে আমাদের টেকনোলজিক্যাল যে সাপোর্ট দরকার, যে ডেটাবেজ দরকার, সেগুলো আমাদের দু-একটা প্রতিষ্ঠানের আছে। অন্য কারও সেই অভিজ্ঞতা নেই। এখন আমাদের যে ভুলগুলো হচ্ছে, সেগুলো শোধরাতে হবে। যোগ্যদের কাজের সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে এই বড় সম্ভাবনাটাকে আমরা নষ্ট করে দেব।’

ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রসঙ্গে মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ যেহেতু ক্যাশলেসের দিকে যাচ্ছে, এ কারণে বাংলাদেশের জন্য এটি অনেক বড় সম্ভাবনা। সম্ভাবনার জায়গাটায় যেতে হলে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে সার্ভিস চার্জ ও নিরাপত্তার বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। বর্তমানে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোতে মানুষ যেতে চাচ্ছে না। এখন কমার্শিয়াল অনেক ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকার নিচে জমা দেওয়া যায় না। সিআরএমএ দিতে হচ্ছে। এতে বিভিন্ন ঝামেলা হচ্ছে। এ কারণে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের একটা বড় সুযোগ রয়েছে। যদিও গ্রাহকের আস্থার জায়গাটা নেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচার ও পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখনো মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা রাখতে ভয় পায়। কারণ মানুষ বিভিন্ন প্রতারক গোষ্ঠী, হ্যাকিং, ক্লোনিং এ ধরনের বিভিন্ন প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। এই জায়গায় নিরাপত্তার একটা বড় ঘাটতি আছে। এই জায়গায় যদি আস্থা তৈরি করা যায়, শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং মানুষের আস্থা অর্জন করা যায়, তবে এটা আমাদের ব্যাংকিং খাতের জন্য একটা বড় সম্ভাবনার জায়গা হয়ে উঠবে।’

বর্তমানে দেশে প্রচলিত ধারার ব্যাংক আছে ৬১টি। তাদের বেশিরভাগই বেসরকারি খাতের ব্যাংক। এখন পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়েছে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে স্টার্টআপ কোম্পানি, মোবাইল অপারেটর, গ্যাস পাম্প কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি, ঢেউ শিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও। আবার বিদেশি আর্থিক প্রযুক্তি কোম্পানিও আবেদন জমা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক ডিজিটাল ব্যাংক প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংক একটা নতুন ধারণা। এমএফএস (মোবাইল ব্যাংকিং) কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের দেশে হচ্ছে। এখন এটা একটা সফল মডেল। আমরা যেটা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। কিন্তু মানুষের পুরো আর্থিক সেবাটা পরিপূর্ণ করতেই ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এটা যদি গ্রাহকদের সফলভাবে সেবা দিয়ে যেতে পারে, তাহলে তা জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে।’

তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ আমরা দুটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছি। একটা হচ্ছে নগদ লিমিটেড, আরেকটা হচ্ছে কড়ি। আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠান অপেক্ষমাণ আছে। লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো অপারেশন শুরু করেনি। তারা তাদের সিস্টেম ডেভেলপড করছে। শিগগিরই অপারেশনে যাবে। আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স চেয়েছিল। তার মধ্যে একেকটা একেক ক্যাটাগড়িতে লাইসেন্স চেয়েছিল। কেউ ব্যাংকের সঙ্গে মিলে চেয়েছে। কেউ ইনডিপেনডেন্ট চেয়েছে। কেউ ইনডিভিজ্যুয়াল চেয়েছে, কেউ ফরেন কোনো কোম্পানির সঙ্গে চেয়েছে। আমরা প্রথম শুরু করেছি, যারা ইনডিভিজ্যুয়ালি শুরু করেছে। বাকিগুলোকে আস্তে আস্তে দেওয়া হবে।

News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করলো সাউথইস্ট ব্যাংক
• অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক হলেন নাফিউল হাসান
• এক্সিম ব্যাংক-ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মধ্যে ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তি
• বিশেষ সিএসআর ফান্ডের আওতায় কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করলো সাউথইস্ট ব্যাংক
• এক্সিম ব্যাংক ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ এর মধ্যে ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তি স্বাক্ষর
• কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিল সাউথইস্ট ব্যাংক
• এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তার শেয়ার হস্তান্তরের ঘোষণা
• বিশেষ সিএসআর ফান্ডের আওতায় কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করলো সাউথইস্ট ব্যাংক
• বিশেষ সিএসআর ফান্ডের আওতায় কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করলো সাউথইস্ট ব্যাংক
• বিশেষ সিএসআর ফান্ডের আওতায় কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করলো সাউথইস্ট ব্যাংক
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved