Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
ফুটপাত দখল করে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি [ অনলাইন ] 30/04/2024
ফুটপাত দখল করে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি
        > শুধু ঢাকাতেই ৫ লাখ দখলদার
        > বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা লেনদেন
        > দোকান কিংবা বাজার উচ্ছেদ হলেই টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়
        > দোকানভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়

রাজধানীসহ সারা দেশের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকান পাট। পথিকের পথচলা বন্ধ করে দিয়ে এসব দোকান থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় ১০ লাখ অবৈধ দখলদারের কাছ থেকে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। তারমধ্যে শুধু ঢাকাতেই ৫ লাখ দখলদার ৩ হাজার কোটি টাকা চাঁদা প্রদান করে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) হাইকোর্ট ফুটপাত বিক্রি ও অবৈধ দখলকারীদের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা আগামী ১৩ মে অর্থাৎ ১৫ দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে জানানোর জন্য বলেছেন।

রাজধানী শহর ঢাকাসহ তার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী ও সারা দেশের সকল ফুটপাত, সড়ক-মহাসড়কের অনেক অংশ চাঁদাবাজরা দখলে নিয়ে দোকানপাট ও বাজার বসিয়ে শত শত কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে। যে কারণে অসহনীয় যানজটের কবলে পড়তে হয় সারা দেশের যাত্রী সাধারণকে। অপরদিকে পথচারী ফুটপাত ছেড়ে রাজপথে হাটতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। সকাল বেলা ঘর থেকে বের হয়ে বিকেল বা রাতে পঙ্গু কিংবা লাশ হয়ে ঘরে ফিরছে মানুষ।

প্রকাশ্য দিনের আলোয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় এসব ঘটনা দেখেও নির্বিকার সকলেই। জানা গেছ,

     এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, মাস্তান সন্ত্রাসী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিন্ডিকেট করে এসব দোকানে চাঁদা আদায় করে থাকে। এসব চাঁদাবাজির টাকা ভাগ হয়ে চলে যায় উপর ও নিচতলার সকল মহলে। যে কারণে ফুটপাত কিংবা মহাসড়কের দোকান কিংবা বাজার উচ্ছেদ সম্ভব হয় না। কখনো কখনো লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকালে উচ্ছেদ করা দোকান বিকেলেই আবার আগের জায়গাতে দেখা যায়। এসব বিষয়ে দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দোকান কিংবা বাজার উচ্ছেদ হলেই তাদের টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। পুলিশ কিংবা সংশ্লিষ্টদের টাকার প্রয়োজন বেড়ে গেলেই তারা অভিযান চালায়।  

ফুটপাতসহ পুরো সড়ক দখল করে কাঁচাবাজার গড়ে উঠেছে মিরপুরের অনেক জায়গায়। মিরপুর ১২ নম্বর, দুয়ারি পাড়া,পল্লবী, সাড়ে এগারোসহ আরও অনেক এলাকায়। মিরপুর ১০, এগারো, ১ নম্বর গোল চত্বর, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, পল্টন, মগবাজার, মালিবাগ, আগারগাঁও, তালতলা, পুরান ঢাকার নাজিরা বাজার, শাঁখারী পট্টি, বঙ্গবাজার, হোসনে দালান, চকবাজার, ইংলিশ রোডসহ রাজধানীর পুরো ঢাকার প্রায় সব এলাকা জুড়েই হাজার হাজার অবৈধ দোকান রয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল, শাপলাচত্বর, আরামবাগ, ফকরিাপুল, দৈনিক বাংলা, নয়াপল্টন, পুরানাপল্টন, বায়তুল মোকাররম, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্থান, ফুলবাড়িয়া, সোনালী ব্যাংকের পাশের ফুটপাতে নিত্যদিন বাহারি পোশাকের পসরা সাজানো হয়।

এসব দোকানীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রতিদিন দোকানভেদে একশত ৫০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত অবৈধ চাঁদা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা তাদের নির্ধারিত লাইনম্যানদের হাতে। অবাক করা হলেও বাস্তব হলো বিভিন্ন মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকলেও মহাসড়কের অনেক অংশ দখল করে বাজার গড়ে উঠতে দেখা যায়।

    ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চৌরাস্তা, মাওনা চৌরাস্তা, ভালুকা, ত্রিশাল, ঢাকার পাশে টঙ্গী, বোর্ডবাজার, চেরাগআলী, মালেকের বাড়ি, সাইনবোর্ডসহ সড়কের অনেক জায়গাতেই গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকান পাট ও বাজার। ঢাকা, সাভার হয়ে টাঙ্গাইল রোড, সফিপুর। গাবতলি, আমিনবাজার, সায়দাবাদ, মহাখালীসহ ঢাকার সাথে সারা দেশের মহাসড়কের দখল করে আছে অবৈধ বাজার ও দোকান পাট।

সড়কের পাশে পথিকের চলাচলের জন্য রাজধানীর ফুটপাত অবৈধভাবে দখল ও বিক্রি করার সঙ্গে কারা কারা জড়িত তাদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। সঙ্গে সঙ্গে আদালত অন্য এক নির্দেশনায় দখলকারীদের বিরুদ্ধে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তাও জানাতে বলেছেন।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি শেষে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন রিটের পক্ষে শুনানি করা সিনিয়র আইনজীবী।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল, অ্যাডভোকেট জাহিদ তালুকদার ও অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডিএজি অমিত তালুকদার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সারওয়ার হোসেন পায়েল।

এর আগে দায়ের করা রিটের শুনানিতে রাজধানী ঢাকার ফুটপাত দখল বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাখিল করা এফিডেভিটে ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ফুটপাত বিক্রি ও ভাড়া দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছেন কিছু ব্যক্তি এবং জনগণের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত করছেন এই মর্মে সংবাদ প্রচারিত হলে,

    হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। ওই রিটের বিষয়ে হাইকোর্ট ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর রুল জারি করেন। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেন এবং দখলকারীদের তালিকা ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেন।

ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট সচিবের পক্ষে এফিডেভিট দাখিল করে সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনের বিষয়ে ২০২৩ সালের ২১ মে আদালতকে জানানো হয়। যার সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, যুগ্ম সচিব জননিরাপত্তা বিভাগ, সিআইডির ডিআইজি পদমর্যাদা সম্পন্ন একজন অফিসার, রাজউকের একজন সদস্য এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন উপসচিব।

ওই কমিটির সভাপতি ড. মলয় চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচ্যসূচিতে ফুটপাতে দোকান বসানোর সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই সভায় ১৫ দিনের মধ্যে রাজউক ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে বিদ্যমান ওয়াকওয়ে ও ফুটপাতের তালিকা এবং অবৈধভাবে তা দখলের তালিকা দাখিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অপর এক সিদ্ধান্তে ফুটপাত ভাড়া ও বিক্রি অবৈধ অর্থ আদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তালিকা ১৫ দিনের মধ্যে দাখিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও রাজউককে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

শুনানিতে রিটকারী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন,

    ১৫ দিনের মধ্যে তালিকা ও দখলকারীদের নাম দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও ৮ মাস অতিক্রান্ত হওয়া সত্বেও এখন পর্যন্ত কোন তালিকা দাখিল করা হয়নি। যার মাধ্যমে ফুটপাত দখল করে অবৈধ ব্যবসা ও চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এর কারণে জনগণের ফুটপাত দিয়ে চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যা আইনের পরিপন্থি।

শুনানি শেষে আদালত আদেশ দিয়ে আগামী ১৩ মে এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে যারা ফুটপাত দখল করেছে বা বিক্রি করেছে তাদের নামের তালিকা এফিডেভিট আকারে দাখিল করতে বলেছেন আদালত। অপর এক নির্দেশে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তাও জানাতে বলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি বলেন, ফুটপাতে দোকান বসাতে তাঁকে এককালীন খরচ করতে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। প্রতিদিন দিতে হয় ৩০০ টাকা। ঈদ, পূজা-পার্বণ এলে সেই চাঁদা হয়ে যায় দ্বিগুণ। টাকা না দিলে পুলিশ এসে দোকান গুঁড়িয়ে দেয়। তাই বাধ্য হয়ে চাঁদা দিয়েই চলছে দোকান।

অভিযোগ আছে,

    প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও বিভিন্ন হকার্স সংগঠনের নেতা নামধারীরা ফুটপাত ও রাস্তায় হকারদের বসার সুযোগ দিয়ে চাঁদা আদায় করে থাকেন। এসব টাকার একটা বড় অংশ রাজনৈতিক দলের বড় নেতাসহ ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীরদের পকেটে চলে যায়। যে কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের সড়ক ও ফুটপাত দখল মুক্ত করা যায় না।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে,

    দুই সিটি করপোরেশনের ৪৩০ কিলোমিটার রাস্তায় তিন লাখেরও বেশি হকার ব্যবসা করেন। বছরে প্রায় ১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। এসব হকার প্রতিদিন ৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেন। বর্তমানে এই টাকা এবং হকারের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুন।

মতিঝিলের ব্যাংক পাড়ায় অফিসের সঙ্গেই খোলে ফুটপাতের দোকান, চলে গভীর রাত পর্যন্ত। দোকানভেদে প্রতিদিন ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এসব চাঁদার টাকা ভাগ হয় পুলিশ, লাইনম্যান, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, এলাকার গুন্ডা, মাস্তান, সন্ত্রাসী ও জন প্রতিনিধীদের মাঝে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• অজ্ঞান পার্টির টার্গেট মধ্যবিত্ত
• দুবাইয়ে সম্পদ ঘাঁটি বাংলাদেশিদের
• ৪০০ কোটি টাকার সরকারি বাড়ি ব্যক্তিমালিকানায়
• রাজধানীতে ৪ চোরাকারবারি গ্রেপ্তার
• দুবাইয়ের আবাসন খাতে প্রপার্টি কিনেছেন ৫৩২ বাংলাদেশী
• এমডি ও গ্রাহক মিলে ১০৯ কোটি টাকা লুট ইউসিবির
• ৫ লোভী তরুণের কান্ড!
• দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড়
• হজযাত্রীদের জন্য বাংলাসহ ১৬টি ভাষায় সচেতনতামূলক নির্দেশিকা চালু
• টিএমএসএসের সাবেক পরিচালকের জেল ও জরিমানা
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved