বাণিজ্যিক ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে বিদেশি মুদ্রায় আমানত আনতে ব্যাংকারদের তাগাদা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও কয়েকটি বাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে বৈঠকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে বিদেশি মুদ্রায় আমানত বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
”যেহেতু এখন আইন হয়েছে, এখন ভালো সুদ দিতে পারলে, ব্যাংকগুলো মার্কেটিং করতে পারলে ভালো একটা পরিমাণে বিদেশি আমানত আমরা আনতে পারব।’’
তার মতে অন্য ব্যাংকাররাও মনে করছেন বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডলার আমানত হিসেবে দেশের অফশোর ব্যাংকের হিসাবে আনা সম্ভব।
এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশি যারা বিদেশে আছে তারা যেন তাদের ফরেন কারেন্সি বাংলাদেশে এনে পার্ক (আমানত রাখে) করে। বিদেশিদের কাছ থেকেও আমরা আমানত আনতে চেষ্টা করব। আমরা ভালো একটা ইন্টারেস্ট দিব। এটা একটা ভালো উদ্যোগ।’’
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
ডলার সংকটের মধ্যে বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে গত মার্চে অফশোর ব্যাংকিং বিল-২০২৪ পাস হয় জাতীয় সংসদে।
অফশোর ব্যাংকিং হচ্ছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভেতরে বিদেশি মুদ্রায় পরিচালিত ব্যাংকিং সেবা। এখানে ঋণ ও আমানত দুটোতেই বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অফশোর ব্যাংকিং শুরু হয়। পরে ২০১৯ সালে অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে যাওয়ার পরে আর্থিক খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে এ আইন পাস করে সরকার।
এ ধরনের ব্যাংকিংকে জনপ্রিয় করতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আমানতকারী বা বিদেশি ঋণদাতাদের দেওয়া সুদ বা মুনাফায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করমুক্ত করার ঘোষণাও দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
অফশোর ব্যাংকিং সম্প্রসারিত হলে সংকটে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতেও তা ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ২৪ এপ্রিল রিজার্ভ স্থিতি ছিল আইএমএফ এর বিপিএম৬ হিসাবে ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে তা ২৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।
অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত আনতে সফল হয়েছে। সেই তথ্য তুলে ধরে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘‘এখন আমাদের যেটা প্রয়োজন সব ব্যাংকগুলো এটা ভালোমত বুঝে এর প্রডাক্ট তৈরি করা, মার্কেটিং এবং বিভিন্নভাবে এটাকে প্রমোশন করা দরকার। সেটা কীভাবে কী হবে সে বিষয়ে আজকে আলোচনা হয়েছে।’’
দু’একটি ব্যাংক ইতোমধ্যে অফশোর ব্যাংকিংয়ে আমানত আনতে সফল হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমাদের এক কোটির বেশি প্রবাসীদের মধ্যে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞ আছেন, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল। তাদের কাছ থেকে যদি এখানে আমানত আনতে পারি তাহলেও ভালো পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা আসবে।’’
পাঁচ বিদেশি মুদ্রা মার্কিন ডলার, পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরো, জাপানি ইয়েন ও চাইনিজ ইউয়ান-এ অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে আমানত রাখার অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রায় স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগে সুদহার হবে এসওএফআর, ইউরোবর এর মতো আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্কের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ, আগে যা ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ।
এতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এসওএফআর বা সোফর (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট, আগে যা ছিল লাইবর) রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। ঋণ সুদহারের সঙ্গে সমন্বয় করে আমানতের সুদহার ঠিক করতে পারবে ব্যাংক।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক এর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার এক দিন মেয়াদের সোফর সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৩১ শতাংশি এবং ছয় মাসের জন্য তা ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ব্যাংকিং খাতে আলোচনার জন্ম দেওয়া একীভূতকরণ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, “চার-পাঁচটা ব্যাংক মার্জার হওয়া নিয়ে আলোচনা শুনছি আমরা, যা জেনেছি, তা সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমেই। আমার মনে হয় এটা নিয়ে এত হৈচৈ করার প্রয়োজন নাই। এটা ধীরস্থিরভাবে হবে। যেসব ব্যাংক করতে চাচ্ছে কি, চাচ্ছে না, এটা সেইসব ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য।’’