Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
আমেরিকা ও কানাডার ভিসাপ্রার্থীদের বিড়ম্বনা [ অনলাইন ] 01/05/2024
আমেরিকা ও কানাডার ভিসাপ্রার্থীদের বিড়ম্বনা
আমরা যারা কানাডা এসেছি তাদের অনেকের কাছেই এখানকার কিছু বিষয় রহস্য হিসেবে থেকে গেল। দুঃখের বিষয় এই যে, রহস্যঘেরা সমাজব্যবস্থায় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মদের রেখে যেতে হবে। যেমন, আমরা মোটামুটি একটা মানসম্পন্ন চাকরি করার পরও সাধারণ মানের একটি বাড়ি-গাড়ি রাখতে পারি না, কেননা আয়কর এবং অন্যান্য কর্তনেই চলে যায় উপার্জনের ৬০ শতাংশ। অথচ অনেকেই কোনোরকম একটি চাকরি করে বা কেউ কেউ উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু না করেও দিব্যি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বাড়ি এবং দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি হাঁকাচ্ছেন।

সাধারণ খাবারের দোকানে একটি বার্গার খেতেও আমাদের সাতবার চিন্তা করতে হয়, কেননা ক্রেডিট কার্ডের বিল বাড়তে থাকবে। অথচ সেসব ব্যক্তিরা শুধু নামিদামি রেস্টুরেন্টে নিয়মিত খাবার খাচ্ছেন তেমন নয়, সেই সঙ্গে সুইট থার্টিন, সুইট সিক্সটিন, বিবাহবার্ষিকী-সবই জমকালোভাবে পালন করছেন। যাচ্ছেন কিউবাসহ অনেক ট্যুরিস্ট স্পটের অবকাশ যাপন কেন্দ্রে। আমরা কষ্টার্জিত উপার্জনের অর্থ দিয়ে পেশাগত ডিগ্রি অর্জন করার পরও শুধু আবেদন করে একটি চাকরিও পাই না। অথচ অনেকেই এখানে এসে তেমন কোনো পড়াশোনা না করেও বেশ ভালো চাকরি পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আসা এক জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার আমাকে রেফার করে একটি চাকরির সুযোগ করে দিয়েছিলেন বিধায় মোটামুটি একটা চাকরি করে টিকে আছি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নিয়ে টিআইবিসহ অনেকেই অনেক অভিযোগ করে থাকেন, অথচ সেই বাংলাদেশে কোনোরকম রেফারেন্স ছাড়া সম্পূর্ণ নিজ যোগ্যতায় একাধিক চাকরি পেলেও কানাডায় রেফারেন্স ছাড়া একটি চাকরিও পাইনি এবং আমার পরিচিত কেউ পেয়েছে বলে শুনিনি। আমেরিকার অবস্থা কানাডার থেকে কিছুটা ভালো হলেও বাস্তবতা মোটামুটি একই রকম। আমার কথাগুলো অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও তারা আমেরিকা-কানাডায় বসবাসরত তাদের পরিচিত বা আপনজনদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। অবশ্য তারা যদি সত্যি কথাটা বলে। কেননা এখানে এমন লোকের অভাব নেই যারা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ব্যাগ ভর্তি উপহারসামগ্রী নিয়ে দেশে গিয়ে সবাইকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন যে তারা এখানে বেশ ভালো আছেন এবং সচ্ছল আছেন। সে রকম মানুষের কথা বিশ্বাস করে অনেকে এখানে এসে যে বিপদে পড়েছেন, সে খবর তো এখন পত্রপত্রিকায়ও প্রকাশিত হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কানাডা-আমেরিকার মতো উন্নত দেশে এগুলো হয় কীভাবে। বিষয়টি আমার কাছে এক বড় রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কানাডা-আমেরিকার ভিসা রহস্য। কারা কোন যোগ্যতা বলে কীভাবে কানাডা-আমেরিকার ভিসা পায়, তা আমাদের কাছে এক বড় রহস্য হয়েই আছে। আমেরিকা অবশ্য তাদের ভিসানীতি নিয়ে অনেক ভয়ভীতি দেখালেও তাদের ভিসার বিষয়টি ততটা রহস্যাবৃত নয়, যতটা কানাডার ভিসার বিষয়টি।

কেননা আমেরিকার ভিসা কারা পেতে পারে তা কিছুটা আঁচ করা যায়। যেমন যারা আমেরিকার অভিবাসন গ্রহণ করেছেন তারা পর্যায়ক্রমে তাদের মা-বাবা এবং ভাই-বোনদের অভিবাসন দিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। তা ছাড়া মেধাবী ছাত্রছাত্রী, ধনাঢ্য এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি, আমেরিকার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে এমন ব্যক্তিদের আমেরিকার ভিসা পেতে কোনো সমস্যা হয় না। এ ছাড়াও আমেরিকা মাঝেমধ্যেই দেশের সাধারণ কাজের চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে ডিভি কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকেও ভিসা প্রদান করে থাকে। এদিক থেকে কানাডার ভিসার বিষয়টি একেবারেই বোধগম্য নয়।

যেমন, আমরা যারা এখানকার নাগরিকত্ব নিয়ে বছরের পর বছর বসবাস করছি এবং উপার্জন করে সিংহভাগ ট্যাক্স হিসেবে সরকারকে দিয়ে আসছি, তারা চাইলেও তাদের ভাই-বোনদের কানাডা নিয়ে আসতে পারবে না। কেননা সে সুযোগই কানাডার ইমিগ্রেশনে নেই। এমনকি আমরা আমাদের মা-বাবাকেও স্পন্সর করে কানাডা আনতে পারব না, যদি না তাদের নাম লটারিতে স্থান পায়। আমার মার একান্ত ইচ্ছা ছিল যে তিনি কানাডা এসে আমাদের সঙ্গে দীর্ঘ একটা সময় থেকে যাবেন। গত সাত বছর ধরে মাকে নিয়ে আসার জন্য লটারিতে আবেদন করে গেলেও তার নাম না ওঠার কারণে তাকে কানাডা আনতে পারিনি। বর্তমানে তিনি বার্ধক্যের যে পর্যায় পৌঁছেছেন তাতে এখন নাম উঠলেও তার পক্ষে কানাডা আসা সম্ভব হয়ে উঠবে না। এটি শুধু আমার মায়ের একার ব্যাপার নয়। আমার মতো অসংখ্য মানুষ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাদের মা-বাবাকে স্পন্সর করে কানাডা আনতে পারছে না। অথচ প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ কানাডা আসছে নানা উপায়ে।

আমরা যখন কানাডা আসার জন্য আবেদন করেছিলাম তখন কত না যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার প্রমাণ দিতে হয়েছিল। অথচ এখন চারপাশে এমন অনেককে দেখি যাদের যোগ্যতাকে খাটো করে না দেখলেও খুব যে বেশি কিছু না, তা তো বোঝাই যায়। অথচ তারা কিন্তু কানাডার বৈধ ভিসা পেয়েই এখানে এসেছেন। আমাদের সময় আইএলটিএস (ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ পরীক্ষা) পরীক্ষায় ভালো স্কোর অর্জন করতে হয়েছে। অথচ এখন অনেকেই কানাডা এসেছেন তাদের সঙ্গে কথা বললে মনে হবে না যে তারা সঠিকভাবে ইংরেজি শিখেছেন। কিন্তু তারাও কানাডার বৈধ ভিসা পেয়েই এসেছেন। আমি অনেক ব্যক্তিকে চিনি যারা যথেষ্ট সচ্ছল এবং কোনো অবস্থাতেই বিদেশে থাকবেন না, অথচ তারা কানাডার ভিসা পায়নি। পক্ষান্তরে এমন অনেকে ভিসা পেয়েছেন যারা আসার জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা রাখেন কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আসলে কানাডা কখন কাকে ভিসা দেবে তার পুরোটাই একটা বড় রহস্য।

এতকিছুর পর সব রহস্য ভেদ করে এবং সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে যখন সৌভাগ্যবান কিছু ব্যক্তি কানাডার ভিসা পেয়ে যান, তখন তাদের ভিসা সংগ্রহের জন্য দেখা দেয় নতুন বিড়ম্বনা। কানাডার ভিসা বাংলাদেশের হাইকমিশন থেকে প্রসেস করা হয় না। সিঙ্গাপুরে অবস্থিত কানাডিয়ান অ্যাম্বাসি থেকে বাংলাদেশের ভিসাপ্রার্থীদের ভিসার আবেদন প্রসেস করা হয়। যখন কোনো ভিসা ইস্যু করা হয়, তখন সেই আবেদনকারীকে বাংলাদেশের তৃতীয় পক্ষ প্রতিষ্ঠান, ভিএফএসের অফিসে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়। আর এখানেই দেখা দেয় চরম বিড়ম্বনা এবং ভিসাপ্রার্থীদের ভোগান্তি। ভিসা সংগ্রহের জন্য ঢাকার গুলশানে অবস্থিত ভিএফএস অফিসে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই অফিসে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট পাওয়া যায় না। অ্যাপয়েনমেন্ট নেওয়ার যতগুলো পন্থা আছে যেমন-অনলাইন বুকিং, অ্যাপের মাধ্যমে বুকিং, ই-মেইলে বুকিং, ফোনে মেসেজের মাধ্যমে বুকিং এর কোনো কিছুই সঠিকভাবে কাজ করে না এবং এসবের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার অ্যাপয়েনমেন্ট পাওয়া যায় না।

এদিকে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শেষ তারিখ যখন এগিয়ে আসে তখন ভিসাপ্রার্থীদের উদ্বেগ বেড়ে যায়। কোনোরকম উপায়ন্তর না পেয়ে এক পর্যায়ে তারা সেই ভিএফএস অফিসে সশরীরে যোগাযোগ করে এবং সেখানে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। এসব কারণে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছাড়িয়ে কানাডার ভিসা পাওয়ার পরও সেই ভিসা সংগ্রহ করতে চরম ভোগান্তি এবং বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয়, যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।

আমেরিকার ভিসাপ্রার্থীদেরও এ রকম বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। এখন আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে তাদের অপেক্ষায় থাকতে হয় কমপক্ষে ছয় মাস বা তার অধিক সময়। অর্থাৎ কেউ যদি আমেরিকার ভিসা পেতে চায়, তা হলে তাদের আবেদন করে ছয় মাস বা তার অধিক সময় অপেক্ষা করতে হবে। অথচ বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করলে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ভিসার জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট পাওয়া যায় বলে শুনেছি। এটি কীভাবে হচ্ছে সেটিও একটি বড় রহস্য। একই সমস্যা ভিসার জন্য মেডিকেল পরীক্ষার ক্ষেত্রে। যারা আমেরিকা বা কানাডায় দীর্ঘ সময় থাকার জন্য ভিসা পেতে চান, যেমন-স্টুডেন্ট ভিসা, ইমিগ্রেশন ভিসা, সুপার প্যারেন্ট ভিসা প্রভৃতি। এ ধরনের ভিসার পূর্বশর্ত হচ্ছে মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

আর এসব মেডিকেল পরীক্ষার জন্য হাইকমিশন বা অ্যাম্বাসি কর্তৃক মনোনীত কিছু চিকিৎসক আছেন যাদের কাছ থেকেই মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হয়। আর এখানেই ঘটে চরম বিড়ম্বনা। এসব মনোনীত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে মেডিকেল পরীক্ষা করে প্রথমবারেই উৎরে যাওয়ার নজির খুব একটা নেই। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের সমস্যা খুবই সাধারণ। অথচ এসব কারণেই ভিসাপ্রার্থীদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। সেই মনোনীত চিকিৎসকরা প্রথমেই সন্তোষজনক রিপোর্ট না দিয়ে আগতদের পাঠিয়ে দেন সেই মনোনীত চিকিৎসকের পরিচিত কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে। সেখানে বিপুল অর্থের বিনিময়ে কয়েক দিন চিকিৎসা করাতে হবে এবং কিছু ওষুধ খেতে হবে। তারপর ভিসাপ্রার্থী পুনরায় সেই মনোনীত ডাক্তারের কাছে গেলেই ক্লিন মেডিকেল রিপোর্ট পেতে পারে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক রহস্য।

আমেরিকা-কানাডা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ। এখানে কোনোরকম দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বা অন্যায় নেই বলে দাবি করা হয়। এসব দেশে শতভাগ স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় বলে সবার বিশ্বাস। তাই সে রকম দেশের ভিসা সংগ্রহের ব্যাপারে কোনোরকম ধোঁয়াশা বা রহস্য থাকা মোটেই প্রত্যাশিত নয়। আর যাদের ভিসা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তাদের কেন ভিসা সংগ্রহের জন্য বিড়ম্বনায় পড়তে হবে এবং এ জন্য চরম ভোগান্তির শিকারই বা কেন হতে হবে, তা আমাদের কাছে মোটেই বোধগম্য নয়।

বিষয়টি বাংলাদেশে অবস্থিত আমেরিকার দূতাবাস এবং কানাডার হাইকমিশনের, তাই তারাই এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। তবে ঘটনাগুলো যেহেতু ঘটছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, তাই সরকারেরও দায়িত্ব আছে বিষয়টি খতিয়ে দেখার এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের। কেননা খারাপ কিছু ঘটলে, সরকার এবং দেশের ভাবমূর্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠবে সবার আগে। এ কারণেই সময় থাকতে তৎপর হতে হবে।

অ্যান্টি মানি লন্ডারিং বিশেষজ্ঞ
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• নম্বর মিল রেখে দলিল জালিয়াতি, সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার মহুবর
• ভুয়া ইঞ্জিনিয়ার সেজে প্রতারণা করে কলেজছাত্রীকে বিয়ে!
• সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
• সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ ও তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ
• সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
• বান্দরবানে ২ কোটি টাকার আফিমসহ নারী গ্রেপ্তার
• ৭৫ হজযাত্রীর টাকা নিয়ে উধাও এজেন্সি
• ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা জরিমানা
• ইলিয়াছ ব্রাদার্সের ছয় মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ
• আট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে পৌনে ৩ কোটি টাকা জরিমানা
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved