কালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া মৌলভীবাজারের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনে কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ৯৫ ভাগে ফিরেছে বিদ্যুৎসেবা। অন্ধকারে ঢেকে যাওয়া উপজেলায় স্বল্প জনবল নিয়ে এই কাজ করে চলেছে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
২৮ এপ্রিল কালবৈশাখীর আঘাতে জেলার তিন উপজেলায় বিদ্যুৎব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ে। এরপর থেকে এসব উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ করে যাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক এবিএম মিজানুর রহমান জানান, সর্বশেষ ঝড়ে মৌলভীবাজার জেলার ১১৯৭টি স্পটে তার ছিড়েছে। খুঁটি ভেঙেছে ৩৫টি এবং হেলে পড়েছে ১০৫টি। তারের ওপর গাছ পড়ে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৩৬৭টি স্থানে। এছাড়াও ক্রস আর্ম ভেঙেছে ৩৫টি, ইনসুলেটর ক্র্যাক হয়েছে ৫২টির, জাম্পারিং আউট হয়েছে ৪৩টি জায়গায় এবং মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫১২টি। পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রান্সফরমার।
সমিতির এ কর্মকর্তা জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যে এ কাজগুলো করা কষ্টসাধ্য ছিল। তারপরেও বিভিন্ন চা বাগান থেকে গাছ কাটা শ্রমিক সংগ্রহ করে এবং ঠিকাদারদের সহযোগিতায় অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে ৬ দিনের মধ্যে ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ লাখ ৫৭ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ আছে মিটার পুড়ে যাওয়া, ট্রান্সফরমারের ফিউজ পড়ে যাওয়া। এসব সমস্যা রয়েছে প্রায় ৩ হাজারের মতো গ্রাহকের। এসব সমস্যায়ও মঙ্গলবার রাতের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব বলে জানিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ।
জানা গেছে, এই দুর্যোগ মোকাবিলায় ঠিকাদারদের সঙ্গে মাঠে শুধু লাইনম্যান নয়, উপস্থিত ছিলেন কনিষ্ঠ প্রকৌশলী ও সহকারী মহাব্যবস্থাপকগণও। কনিষ্ঠ প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, মাত্র ৩০ মিনিটের ঝড় হলেও এর ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। ঝড়ের পর দুই রাত তিনিসহ অন্যান্য প্রকৌশলী নির্ঘুম কাজ করেছেন।
সহকারী মহাব্যবস্থাপক আশরাফ হায়দার জানান, হাজারের ওপরে লাইন ছিড়েছে, অনেক খুঁটি ভেঙেছে। শত শত স্থানে তারের ওপর গাছ ঝুলে আছে–এ অবস্থায় অফিসে বসে থাকার সুযোগ ছিল না। ক্লিনটন তালুকদার জানান, দুই দিন প্রশাসনিক কাজ রেখে তিনিও বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন। এ ঝড়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ জানান, ঝড়ে তাদের এলাকায় বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়েছে। তার ঝুলে ছিল গাছে। পল্লী বিদ্যুতের লোকজন সারারাত কাজ করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন।