Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
হিট স্ট্রোক : প্রাথমিক চিকিৎসা জরুরি [ অনলাইন ] 04/05/2024
হিট স্ট্রোক : প্রাথমিক চিকিৎসা জরুরি
 অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত

হিট স্ট্রোক হলো একটি প্রাণঘাতী অবস্থা যেখানে রোগীর শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। এটি গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বেশি হয়। আমাদের দেশে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত গরম পড়ছে। এ সময়ই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিস্তারিত লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত

* হিট স্ট্রোক কী

এটি এমন একটি অবস্থা যাতে একজন ব্যক্তির শরীর খুব গরম হয়ে যায়। বেশিভাগ ক্ষেত্রে, যখন কেউ পর্যাপ্ত তরল পানীয় পান না করে খুব গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় পরিশ্রম করে তখনই হিট স্ট্রোক ঘটে। কিন্তু যারা পরিশ্রম করছেন না তাদের মধ্যেও হিট স্ট্রোক হতে পারে। এটি বিশেষত বয়স্ক ব্যক্তিদের, যাদের নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তাদের হয়। ক্ষেত্রবিশেষে শিশুদেরও হয়ে থাকে। হিট স্ট্রোক একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি, যার দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির দ্রুত চিকিৎসা না হলে তার মৃত্যুও হতে পারে। আমাদের শরীর যখন খুব গরম হয়, তখন ‘হিট ক্র্যাম্প’ এবং ‘তাপ ক্লান্তি’ও হতে পারে। এ অবস্থাগুলো হিট স্ট্রোকের মতো গুরুতর নয়, তবে যদি তাদের চিকিৎসা না করা হয়, তবে পরবর্তীতে এদের হিট স্ট্রোকও হতে পারে।

* কারণ

অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় আমাদের শরীর প্রচুর পরিমাণে অভ্যন্তরীণ তাপ তৈরি করে। সাধারণত ত্বকের মাধ্যমে ঘাম এবং তাপ বিকিরণ করে আমরা নিজেদের ঠান্ডা রাখি। নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, যেমন প্রচণ্ড তাপ, উচ্চ আর্দ্রতা বা প্রচণ্ড রোদে অতিরিক্ত পরিশ্রম, এ শীতল ব্যবস্থা রক্ষা করা ব্যর্থ হতে পারে। এতে শরীরের উৎপন্ন ভাপ বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছে যায়। যদি কেউ ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে এবং তার শরীরকে ঠান্ডা করার জন্য যথেষ্ট ঘাম না হয়, তাহলে তার শরীরে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা উচ্চমাত্রায় বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে হিট স্ট্রোক হয়।

* কেন হিট স্ট্রোক জরুরি অবস্থা

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীর শরীরের তাপমাত্রা কমাতে হিট স্ট্রোকের অবিলম্বে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন। তা না হলে, এটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা যত বেশি বাড়বে মৃত্যুর ঝুঁকি তত বাড়বে।

* কেন হয়

দীর্ঘক্ষণ তাপের সংস্পর্শে থাকার কারণে হিট স্ট্রোক হয়। শরীরে ঘামের চেয়েও বেশি তাপ শোষণ করলে এ পরিস্থিতি হয়। ঘরে বা বাইরে হিট স্ট্রোক হতে পারে। অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এটি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কেউ যদি যথেষ্ট বায়ুপ্রবাহ ছাড়া গরম অবস্থায় কাজ বা ব্যায়াম করেন এবং যদি পর্যাপ্ত পানি পান না করেন তবে হিট স্ট্রোক হতে পারে।

* কারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছে

▶ ৭৫ বছরের বেশি বয়সি বা খুব অল্প বয়স্ক।

▶ গর্ভবর্তী বা বুকের দুধ খাওয়ানো মা।

▶ অতিরিক্ত ওজন বা যাদের স্থূলতা আছে।

▶ গৃহহীন বা বিচ্ছিন্ন অর্থাৎ যারা ঘরের বাইরে থাকেন।

▶ অতিরিক্ত পোশাক পরা ব্যক্তি।

▶ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি বা যারা বিভিন্ন সংক্রমণে ভুগছেন।

▶ শুষ্কতা সৃষ্টি করে বা কম ঘাম দেয় এমন ওষুধ গ্রহণ করলে।

* লক্ষণ

▶ শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফা. (৪০ ডিগ্রি সে.) বা তার বেশি হয়।

▶ মস্তিষ্কের লক্ষণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যেমন-বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া/চেতনা হ্রাস পাওয়া, বাস্তব নয় এমন জিনিস দেখা বা শোনা (যাকে ‘হ্যালুসিনেশন’ বলা হয়), হাঁটতে সমস্যা হওয়া, খিঁচুনি ও জ্ঞান হারানো।

▶ দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস বা দ্রুত হৃদস্পন্দন।

▶ ত্বকের লালভাব এবং উষ্ণতা-ত্বক আর্দ্র বা শুষ্ক বোধ করতে পারে।

▶ বমি বা ডায়রিয়া।

▶ পেশির দুর্বলতা বা কামড়ানো-চিবানো।

▶ মাথাব্যথা।

* হিট ক্র্যাম্প বা তাপ ক্লান্তি

হিট ক্র্যাম্প বা তাপ ক্লান্তির লক্ষণগুলোর দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। হিট ক্র্যাম্প হচ্ছে পেশিতে বেদনাদায়ক কামড় বা চিবানোর ভাব সৃষ্টি হওয়া।

তাপ ক্লান্তির কারণে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। এটি রোগীকে তৃষ্ণার্ত বা ক্লান্ত করে তুলতে পারে। এ অবস্থা হিট স্ট্রোকের মতো গুরুতর নয়, তবে যদি পর্যাপ্ত পানি পান না করা হয় অথবা শরীরের তাপমাত্রা এ অবস্থায় না কমান হয় তবে এ থেকে পরবর্তীতে হিট স্ট্রোক হতে পারে।

* কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন

▶ ঠান্ডা জায়গায় ৩০ মিনিট বিশ্রাম নেওয়ার পরেও অথবা পর্যাপ্ত তরল পানি পান করার পরেও অসুস্থ বোধ করা।

▶ খুব উচ্চ তাপমাত্রা।

▶ গরমে ত্বক ঘামছে না এবং লাল হলে (এটি বাদামি এবং কালো ত্বকে বেশি দেখা যায়)।

▶ দ্রুত হার্টবিট।

▶ দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস বা শ্বাসকষ্ট হওয়া।

▶ বিভ্রান্তি এবং নিজেকে সবকিছুর সঙ্গে সমন্বয় করতে না পারা।

▶ খিঁচুনি অথবা জ্ঞান হারানো।

▶ চেতনা হ্রাস পাওয়া।

* কী পরীক্ষা করাবেন

প্রথমেই ডাক্তার রোগীর তাপমাত্রা পরীক্ষা করবেন। এ ছাড়াও রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অন্যান্য পরীক্ষাও করাতে পারেন।

হিট স্ট্রোক শরীরের কোনো অঙ্গে ক্ষতি করেছে কিনা তা জানতে ডাক্তার বিভিন্ন ল্যাব পরীক্ষাও করাতে পারেন। এ পরীক্ষাগুলো হলো-রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে, ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG)-এই পরীক্ষাটি হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পরিমাপ করে।

* চিকিৎসা

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীর শরীর ঠান্ডা করা প্রয়োজন। ভেজা ত্বকে ফ্যানের মাধ্যমে বাতাস দেওয়া, শরীরে ঠান্ডা পানি দিয়ে স্পঞ্জ করা বা ঠান্ডা পানিতে শরীর ভিজিয়ে রাখা এর অন্তর্ভুক্ত। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

* প্রতিরোধ

যখন গরম বা আর্দ্রতা বেশি থাকে, তখন হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নিতে পারেন-

▶ অত্যধিক সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করবেন না এবং ব্যায়াম করার সময় বিরতি নিন।

▶ পর্যাপ্ত তরল পানীয় পান করুন, যাতে তৃষ্ণা না লাগে।

▶ অল্প সময়ের মধ্যে খুব বেশি পরিমাণে পানি পান করবেন না এবং এতটা পান করবেন না যে আপনি অস্বস্তি বোধ করেন। এটি ক্ষতিকারকও হতে পারে।

▶ আবহাওয়া খুব গরম হওয়ার আগে অর্থাৎ দিনের প্রথম ভাগে ব্যায়াম করুন।

▶ ঢিলেঢালা, হালকা কাপড় পরুন। খুব বেশি লেয়ার পরবেন না।

▶ গরম গাড়িতে থাকা এড়িয়ে চলুন।

যদি হিট ক্র্যাম্প বা ক্লান্তির লক্ষণ থাকে তবে হিট স্ট্রোক এড়াতে শরীরকে এখনই ঠান্ডা রাখা উচিত।

* কী করা উচিত

হিট স্ট্রোক একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। যদি কারও হিট স্ট্রোক হয়, দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান এবং অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন দিন। যখন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করছেন, যে কোনো উপায়ে রোগীকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করুন।

▶ রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে ঠান্ডা পানিতে চুমুক দিতে দিন।

▶ রোগীকে শীতল ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন।

▶ অতিরিক্ত পোশাক শরীর থেকে সরান।

▶ স্পঞ্জ করুন বা ঠান্ডা পানি দিয়ে স্প্রে করুন বা ভেজা তোয়ালে বা পোশাক দিয়ে ঢেকে দিন এবং ভেজাযুক্ত ত্বকে ফ্যানের বাতাস দিন।

▶ রোগীর গাল, তালু এবং তলদেশে ঠান্ডা প্যাক রাখুন।

* সতর্কতা

বাইরের জুস, শরবত, লেবু পানি ইত্যাদি পানি জাতীয় খাবার থেকে পানিবাহিত রোগ সংক্রমণ যেমন-ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস হতে পারে। সুতরাং এসব খাবার এ গরমে নিরাপদে গ্রহণ করতে হবে। জ্বর, পেটব্যথা ও খাওয়ার অরুচি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শরীর ঠান্ডা করার জন্য যা করতে পারেন

▶ নিজেকে ঠান্ডা পানি দিয়ে স্প্রে করুন এবং তারপর একটি ফ্যানের সামনে বসুন, ছায়ায় যান।

▶ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিল্ডিং বা গাড়িতে থাকবেন।

▶ স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল করুন।

▶ পানি পান করুন বা স্পোর্টস ড্রিংক পান করুন। অ্যালকোহল বা ক্যাফিনযুক্ত পানীয় খাবেন না।

▶ অতিরিক্ত পোশাক পরা থাকলে খুলে ফেলুন।

▶ ঘাড়ে, বগলে এবং কুঁচকিতে ঠান্ডা প্যাক বা ভেজা কাপড় রাখুন।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যায় কী খাবেন কী খাবেন না
• কিডনি বিকলের আগেই সাবধান হোন
• পেপটিক আলসার রোগে করণীয়
• গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সতর্ক হোন
• কিডনি বিক্রি করা ব্যক্তিরা ভালো নেই
• বর্ষা আসছে, ত্বক ও চুলের যত্ন নিন
• গরমে বয়স্করা যেভাবে সুস্থ থাকবেন
• নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ: নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে
• পিএলআইড রোগের চিকিৎসা দেশেই সম্ভব
• মূত্রথলি সুস্থ রাখতে যা করবেন
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved