ডায়াবেটিসের একটি মারাত্মক জটিলতা ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস। যখন রক্তে চিনির মাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়, তখন এ জটিলতা তৈরি হতে পারে। সাধারণত টাইপ-১ ডায়াবেটিসে এ জটিলতা সবচেয়ে বেশি হয়। কিন্তু টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ক্ষেত্রবিশেষে এমন জটিলতা তৈরি হতে পারে।
ইনসুলিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তে চিনির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু দেহ-কোষে চিনি প্রবেশ করতে পারে না। তখন কোষের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করার জন্য দেহের চর্বি এবং আমিষ ভাঙতে শুরু করে। তৈরি হয় কিটো এসিড।
দেহের জন্য এই এসিডীয় বা অম্লীয় পরিবেশ মোটেও ভালো নয়।
দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের একেবারে শুরুতেই এমন দশা হতে পারে। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের ইনফেকশন, শল্যচিকিৎসা, শারীরিক ও মানসিক আঘাত, স্ট্রোক, হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন), গর্ভাবস্থা, অগ্নাশয়ের প্রদাহ ইত্যাদি ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস তৈরির নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন ছেড়ে দিলে অথবা কম পরিমাণ ইনসুলিন নিতে থাকলে এমনটি হতে পারে। ইনসুলিন কলম কিংবা ডিভাইসের অকার্যকারিতা, ইনসুলিন প্রদানে ভুলভাল হলেও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। স্টেরয়েড, কোকেনসহ কিছু ওষুধের কারণেও ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস হয়ে থাকে।
এমনটি হলে রোগীর তৃষ্ণা বেড়ে যায়। মূত্র নিঃসরণ অনেক বৃদ্ধি পায়।
পায়ে ব্যথা (কামড়ানোর মতো অনুভূতি), পেটে ব্যথা, অরুচি, বমি, প্রচণ্ড ক্লান্তি, ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, রোগীর রক্তচাপ কমে যায়, তাপমাত্রা কমে যায়, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। কথাবার্তা হয়ে পড়ে অসংলগ্ন। একসময় রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। বয়স্কদের এই রোগে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ।
এটি একটি মেডিক্যালে ইমার্জেন্সি। এমনটি হলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে নিবিড় তত্ত্বাবধান কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি ইনসুলিন চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এ সময় খুব দ্রুত পটাসিয়াম, লবণ কমে যেতে পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন
লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন আহমদ
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট
সিএমএইচ, বরিশাল।