[ অনলাইন ] 04/05/2024 |
|
|
|
অর্ধশত ক্যাসিনো কুশীলব হাওয়া |
|
|
আলোচিত ক্যাসিনো কারবারিরা ফের লাইমলাইটে আসার চেষ্টা করছে। এ খাতের রাঘববোয়ালরা জামিন নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অন্তত অর্ধশত রাঘববোয়াল বিভিন্ন দেশে চলে গেছে। সূত্র বলেছে, কেউ কেউ মাঝেমধ্যে চুপিসারে দেশে আসে।
যারা বিদেশে আছে তারা বিদেশ থেকেই বাংলাদেশে আবার ক্যাসিনো কারবার সক্রিয় করার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ দেশে থেকে নানা অপরাধে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে। যারা বিদেশে গেছে তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই গেছে বলে অভিযোগ। ক্যাসিনোকা-ে সহযোগী হিসেবে কিছু পুলিশ সদস্যের নামও এসেছে। আর দুদক কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।
ক্যাসিনোকা-ে জড়িত ২০ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সম্পৃক্ততা থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ঘটনার সময় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো-সরঞ্জাম আমদানি করার অভিযোগ ওঠায় তদন্ত করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ও পুলিশের কয়েকটি বিশেষ ইউনিট। তদন্তে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্সিগুলোকে দায়ী করা হয়। এদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং (অর্থ পাচার) আইনে মামলা করার নির্দেশও দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সে নির্দেশও আমলে নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, ক্যাসিনোজনক হিসেবে পরিচিতি সেলিম প্রধান আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের একজন প্রার্থী। ক্যাসিনোকা-ে চার বছর সাজা খেটেছেন তিনি। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের রায়ে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি দুই বছর কারাদণ্ড ভোগ করলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
সেলিম প্রধান দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলাটি ছিল ষড়যন্ত্রমূলক এবং তিনি এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। তার প্রার্থিতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন আলোচনামুখর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ক্যাসিনোবিরোধী বিশেষ অভিযান চালান। প্রথমে গুলশানে, পরে মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় এবং বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। আইনের আওতায় আনা হয় এতে সংশ্লিষ্ট রাঘববোয়ালদের।
দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্যাসিনো-কারবার চলছিল। আর এর পেছনে ছিল শক্তিশালী মহলের লোকজন। অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় শীর্ষ রাঘববোয়ালদের। কয়েক মাস কারাবাস করে জামিন নিয়ে বের হয়ে যায় অনেকেই। তাদের অনেকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেশের বাইরে চলে গেছে। তারা বিদেশ থেকে ক্যাসিনো-কারবার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ক্যাসিনোর অন্যতম গডফাদার ও সাবেক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ জামিন নিয়ে দেশের বাইরে আছেন। এখন তিনি সিঙ্গাপুরে। আরেক যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বিদেশে কিছুদিন থেকে বাংলাদেশে আসেন, আবার চলে যান। রামপুরার রইছ উদ্দিন, খিলগাঁওয়ের শাহাদত হোসেন সাধু, যুবলীগের নেতা কবির ওরফে গলাকাটা কবির, শাহজাহানপুরের রিপন, ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা কানা সেলিম, ১১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের শীর্ষ নেতা রিডি সামাদ, শাহজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের নেতা রাজু ওরফে ছোট মাস্তান, মাহবুবল হক হীরক, নেপালি নাগরিক বিনোদ মানাসি, দিনেশ, ছোট রাজকুমার, বড় রাজকুমার, অজয় পারকাল, হিলমি ও কৃঞ্চা, ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নেছার, জাতীয় পার্টি নেতা সফিকুল ইসলাম সেন্টু, মালিবাগ-মৌচাক এলাকার সৈনিক ক্লাবের কর্ণধার ও যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন এবং এটিএম গোলাম কিবরিয়া, বনানীর ঢাকা গোল্ডেন ক্লাবের সভাপতি আওয়াল পাটোয়ারী ও আবুল কাশেম, নূরুল ইসলাম, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আলী হোসেন প্রমুখ দেশের বাইরে আছেন।
পুলিশের কাছে তথ্য এসেছে, মাঝেমধ্যে তারা বাংলাদেশে এসে আবার বিদেশে চলে যান। তারা প্রভাবশালী, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা দেশের বাইরে থাকছেন। পুরান ঢাকার শীর্ষ ক্যাসিনো-কারবারি এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া নিজেদের রক্ষার্থে নানা মহলে তদবির করছেন। এখন তারা কারাগারে আছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, এএম ইসলাম অ্যান্ড সন্স, নিনাদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ, এথি ট্র্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জাহিন ইন্টেরিয়র কমপেন্টস, মেসার্স চৌধুরী ট্রেডার্স, এলিড রক ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স বিবি ইন্টারন্যাশনাল, এভারগ্রিন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি, নিউ হোপ অ্যাগ্রো বাংলাদেশ, মুন ট্রেডিং কোম্পানি, রিদিনাথ ইন্টারন্যাশনাল, আলিফ এন্টারপ্রাইজ, সুলডিয়ার গ্রেস, চীনা হোটেল স্পালাই, জান্নাত ট্রেডিং, বেস্ট তাইকন (বিডি) এন্টারপ্রাইজ, সিক্স সি করপোরেশন, মেসার্স এমআর ইন্টারন্যাশনাল ও ডংজিজিন লংবিস্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ক্যাসিনো-কারবারের সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের তদন্তে জানা গেছে। তারপরও এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তদন্তকারী সংস্থাগুলোও সে কথা জানে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চলছিল, তখন সরকারের নীতিনির্ধারকরা দেশবাসীকে আশ^স্ত করেছিলেন এসবের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হবে। ক্যাসিনোকাণ্ডের মুলোৎপাটন করা হবে। কিন্তু পাঁচ বছর পরও অধিকাংশ মামলার বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় এবং আসামিরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাওয়ায় অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। অনেক রাঘববোয়াল দেশের বাইরে। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রায় সবাই জামিনে রয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন যুবলীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনের তিন মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। যুবলীগের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কাজী আনিসুর রহমান, এ কে এম মমিনুল হকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলা করা হয়। বিচারিক আদালতে মাত্র পাঁচটি মামলার রায় হয়েছে। এতে সাজা হয়েছে প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীম, সেলিম প্রধান, গে-ারিয়া থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহসভাপতি এনামুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়াসহ বেশ কয়েকজনের।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলার মধ্যে পাঁচটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। যুবলীগ নেতা কাজী আনিসুর রহমান ও সাবেক কাউন্সিলর মমিনুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলাও ঝুলে আছে। মমিনুল এখন হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। ক্যাসিনো-কারবার চালিয়ে অনেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তারা ওই টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্যাসিনো-কারবারিদের তৎপর হতে দেওয়া হবে না। কেউ চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার আসামি দেশের বাইরে চলে গেলে তাকেও দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’
জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত নেই : ক্যাসিনো ও জুয়ার অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। কিন্তু সে তদন্ত এখন নেই বললেই চলে। অভিযানের পর ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও ডিএমপির ক্রাইম ডিভিশনের তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন সদস্যসহ চারজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তারা এখন বহাল তবিয়তে। র্যাবের হাতে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ হওয়ায় তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা বিব্রত হন। পুলিশের কতিপয় সদস্য ক্যাসিনোর আস্তানাগুলো থেকে নিয়মিত টাকা সংগ্রহ করত।
|
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|