হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লায় বহুপ্রতীক্ষিত দেশের ২৪তম স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ সমাপ্তির পথে। প্রায় ৪৯ কোটি টাকা খরচ করে উপজেলার সীমান্তবর্তী কেদারাকোর্ট এলাকায় বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। একটি আদর্শ স্থলবন্দরে যা কিছু দরকার (ইয়ার্ড, ওজন মাপার যন্ত্র, অফিস ভবন, ডরমিটরি, সীমানাপ্রাচীর, সড়ক, বিভিন্ন পরিষেবা) সব কিছুই এখানে আছে।
স্থানীয় লোকজন বলছে, ব্রিটিশ আমল থেকে বাল্লায় যে শুল্ক স্টেশন আছে, সেটি অনিয়মিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাল্লা স্থলবন্দর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বাল্লা-খোয়াই নদীপথে অনিয়মিতভাবে কিছু আমদানি-রপ্তানি হয়। কোনো অবকাঠামো ও খোয়াই নদীর ওপর ব্রিজ না থাকায় বর্ষায় নদী দিয়ে নৌকায় করে মালপত্র পারাপার করা হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে কোমরপানিতে ডুবে শ্রমিকরা মালপত্র পারাপার করেন। সময়ের প্রয়োজনে বর্তমান শুল্ক স্টেশনের পূর্ব-দক্ষিণে নতুন স্থলবন্দরটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আশা করা যাচ্ছে, বাল্লা স্থলবন্দর চালু হলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্প সম্প্রসারিত হবে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ বাল্লা শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি পাস হয়।
গত বৃহস্পতিবার বাল্লা স্থলবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। চলছে ধোয়া-মোছা ও রঙের কাজ। বাংলাদেশ থেকে বাল্লা স্থলবন্দর ব্যবহার করে সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অংশের পাহাড়মুড়া এলাকা দিয়ে আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম চলবে।
এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারাকোর্ট এলাকার জমিজমার দাম বেড়ে যাচ্ছে। দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্দর এলাকার পাশে উসমাপুর গ্রামে তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে।
এলাকার মানুষ মনে করছে, বন্দর চালু হলে এ অঞ্চলের শত শত মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তারা বন্দর চালু করার দাবি জানিয়েছে। এরই মধ্যে বাল্লা স্থলবন্দরে একজন সহকারী পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরো কিছু জনবল আছে। বাল্লা স্থলবন্দরের অবস্থান চুনারুঘাট উপজেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার ও ঢাকা থেকে মাত্র ১৫১ কিলোমিটার দূরে।
চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর বলেন, বাল্লা শুল্ক স্টেশন দিয়ে ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। বন্দর চালু হলে এলাকার বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে। চুনারুঘাটে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বন্দর চালুর যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’