[ অনলাইন ] 06/05/2024 |
|
|
|
বারবার বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, চাপে ভোক্তা |
|
|
নিত্যদিনের খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। মূল্যস্ফীতিতে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম, বেড়েছে বিদ্যুৎ ও ক্যাপটিভ খাতে গ্যাসের মূল্যও। চলতি মাসেই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ থেকে ৮ শতাংশ বাড়তে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ আরও চাপে পড়বে। বাড়বে শিল্পের উৎপাদন খরচ। কৃষি ও পরিবহন খাতের ব্যয়ও বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। বাধাগ্রস্ত হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে তারা উৎপাদন ধরে রাখতে পারছেন না। রপ্তানি আদেশ বাতিল হচ্ছে। এর মধ্যে কিছুদিন পরপর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ালে খরচ আরও বেড়ে যাবে। কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। নতুন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে।
গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ পৃথকভাবে তাদের ভর্তুকি পরিকল্পনা তুলে ধরে। জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম নির্ধারণ পদ্ধতি চালু হওয়ায় এ খাতে আর ভর্তুকি প্রয়োজন নেই। গ্যাস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ আর শিল্প খাতে। আমদানি করা এলএনজিসহ এখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে সরকারের খরচ ২৪-২৫ টাকা। শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। ফলে এ খাতের মূল ভর্তুকি এখন যাচ্ছে বিদ্যুতে সরবরাহ করা গ্যাসে। এখন বিদ্যুতে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ১৫ টাকা ৫০ পয়সা। সরকার এটাকে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ২৪ টাকায় নিতে চায়। তখন এ খাতে আর ভর্তুকির প্রয়োজন হবে না। সর্বশেষ দাম বাড়ার পর গ্যাস খাতে চলতি বছর সরকারের ভর্তুকি লাগবে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, সরকার আগামী তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুতের ভর্তুকি থেকে পুরো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পর্যালোচনা বলছে, ভর্তুকি তুলে দিলে বিদ্যুতের দাম ৭৮ শতাংশ বাড়তে পারে। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। ভর্তুকি না দিলে দাম বেড়ে হবে প্রতি ইউনিট প্রায় ১৫ টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবির লোকসান হয়েছে ৪৩ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে ভর্তুকি বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। এ বছরও ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম সমকালকে বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যামের দাম বাড়লে সবকিছুর দাম বাড়বে। ব্যবসায়ী, শিল্প মালিকসহ সাধারণ মানুষ কেউই এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে না।
বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিটিএমএর পরিচালক এবং লিটল গ্রুপের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, ঘন ঘন গ্যাস ও বিদ্যুতের দর বৃদ্ধিতে দু’দিক থেকে চাপে আছে শিল্প। একে তো হঠাৎ হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে দর বাড়ছে, আবার বর্ধিত দরেও প্রয়োজনীয় গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। এতে শিল্প উৎপাদন চরম সংকটে রয়েছে। বস্ত্র খাতের কোনো কারখানায় সক্ষমতার ৪০ শতাংশের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছেন তারা। সরকার যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ দিতে না পারে, তাহলে আগের দরে ফেরত যাক। কারণ, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাবেন– এমন নিশ্চয়তায় বর্ধিত দর মেনে নিয়েছিলেন তারা।
সর্বশেষ গত মার্চ মাসে ভোক্তা পর্যায়ে সাড়ে ৮ শতাংশ দাম বাড়ে বিদ্যুতের। আর গত ৩০ এপ্রিল এ মাসের জন্য ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি এক টাকা করে বেড়েছে। একই সঙ্গে অকটেন ও পেট্রোলের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা করে বাড়ানো হয়। একই দিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস ও শিল্পের ক্যাপটিভ বিদ্যুতের গ্যাসের দামও প্রতি ঘনমিটার ৭৫ পয়সা বাড়িয়েছে সরকার।
দাম না বাড়িয়েও ভর্তুকি কমানো সম্ভব
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাবের এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য না বাড়িয়েও ভর্তুকি প্রত্যাহার সম্ভব। এজন্য জ্বালানি খাতে অপব্যয় ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করা গেলে এবং ন্যূনতম ব্যয়ে জ্বালানি সরবরাহ করার নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা হলে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি সমন্বয় সম্ভব।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ভর্তুকি কমাতে দাম না বাড়িয়ে সরকারের উচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সিস্টেম লস কমানো। চাহিদার অতিরিক্ত যেসব বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন নেই, অলস বসিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা দিতে হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করে দিলে এ খাতের খরচ কমবে। তখন দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতাবিহীন যে কোনো ধরনের বিনিয়োগ বন্ধ করলে এই খাতের ব্যয় কমে আসবে। পাশাপাশি সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় এলএনজি, কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে।
|
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|