Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
অদক্ষ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে দ্বিগুণ ব্যয়ে চলছে উৎপাদন! [ অনলাইন ] 06/05/2024
উচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ ও জ্বালানি ব্যয়
অদক্ষ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে দ্বিগুণ ব্যয়ে চলছে উৎপাদন!
২০০৯ সাল থেকে বেসরকারি খাতে একের পর এক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয় সরকার। কয়েক বছর পর রেন্টালের আদলে আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়। এতে দেড় দশকে বেসরকারি খাতে প্রায় ১০০ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। তবে এসব কেন্দ্রের বেশিরভাগই অদক্ষ। এছাড়া বসিয়ে রেখে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দিতে হয় ক্যাপাসিটি চার্জ। এতে সরকারি কেন্দ্রের তুলনায় দ্বিগুণ ব্যয়ে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নিজস্ব কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গত অর্থবছর গড়ে ব্যয় পড়েছে সাত টাকা ৬৪ পয়সা। অন্য সরকারি কোম্পানির কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়েছে ছয় টাকা ৮৫ পয়সা। তবে বেসরকারি খাতে এর প্রায় দ্বিগুণ ব্যয়ে ১৪ টাকা ৪৯ পয়সায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। অথচ ভারত থেকেও বিদ্যুৎ আমদানিতে গড়ে ব্যয় পড়ছে তুলনামূলক অনেক কম, মাত্র আট টাকা ৭৭ পয়সা।

পিডিবির তথ্যমতে, গত অর্থবছর পিডিবির কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে এক হাজার ৭৪৩ কোটি ২৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে গড় জ্বালানি ব্যয় চার টাকা ৪৬ পয়সা এবং পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওঅ্যান্ডএম) ব্যয় ছিল ২১ পয়সা। এছাড়া বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল দুই টাকা ৯৭ টাকা। অর্থাৎ পিডিবির কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে সাত টাকা ৬৪ পয়সা।

পিডিবি ছাড়া অন্য সরকারি কোম্পানির কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে এক হাজার ৫৭৪ কোটি ২৩ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে জ্বালানি ব্যয় পড়ে গড়ে তিন টাকা ৬০ পয়সা এবং ওঅ্যান্ডএম ব্যয় ২১ পয়সা। আর বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল তিন টাকা চার পয়সা। অর্থাৎ গড় ব্যয় পড়েছে ছয় টাকা ৮৫ পয়সা।

এদিকে বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলোয় গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে চার হাজার ৩৩৪ কোটি ৯৪ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে জ্বালানি ব্যয় পড়ে গড়ে ৯ টাকা ৯৪ পয়সা এবং ওঅ্যান্ডএম ব্যয় সরকারি কেন্দ্রের প্রায় পাঁচগুণ তথা ৫৯ পয়সা। আর স্থায়ী ব্যয় তথা ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল গড়ে তিন টাকা ৯৬। এতে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ব্যয় পড়েছে ১৪ টাকা ৪৯ পয়সা।

অন্যদিকে ভারত থেকে (আদানিসহ) গত অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৫১ কোটি ৫৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে গড় জ্বালানি ব্যয় পড়েছে চার টাকা ৫৮ পয়সা এবং ওঅ্যান্ডএম এক টাকা আট পয়সা। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে গড়ে তিন টাকা ১১ পয়সা। এতে বিদ্যুৎ আমদানিতে গড় ব্যয় পড়েছে আট টাকা ৭৭ পয়সা।

এ প্রসঙ্গে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় বেশিরভাগ নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এগুলোর দক্ষতা অনেক কম। আবার ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোয় জ্বালানি ব্যবহার করতে হয় বেশি। ফলে গড়ে জ্বালানি ব্যয় পড়ছে অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এগুলোর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বেশি। অল্প কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ভালো মানের। সেগুলোয় গড় ব্যয় পিডিবির চেয়েও কম পড়ে। তবে বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থাই খারাপ। তার ওপর রয়েছে উচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ। এসব কারণে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়ছে।

সূত্রমতে, বিদ্যুৎ খাতে উচ্চ ব্যয়ের চাপ সামাল দিতে কয়েক বছর ধরে ভর্তুকি বাড়াতে হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছিল আট হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয় ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছর তা এক লাফে দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হয় ২৭ হাজার কোটি টাকা। যদিও তা দিয়ে ঘাটতি পুরোটা মেটানো যায়নি। চলতি অর্থবছর ভর্তুকি আরও বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে ভর্তুকির চাপ সামলাতে বছরে চারবার বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে আগামী তিন বছরে বিদ্যুৎ খাতে মোট ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে। এই সময়ে মোট ১২ দফা বাড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যুতের দামকে উৎপাদন খরচের সমান বা কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে। সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ ঢাকা সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলকে এ কথা জানিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের বিষয়টি বৈঠক উঠে আসে। এ সময় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়, তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে আইএমএফ। প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করুক বা না করুক, চুক্তি অনুসারে প্রতিটি বেসরকারি কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। গত অর্থবছর বেসরকারি খাতে ৬২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বসে ছিল। এতে অলস বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ আইএমএফকে জানিয়েছে, চুক্তি থাকায় ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হবে। তবে সরকার এরই মধ্যে ‘বিদ্যুৎ নেই, বিলও নেই’ পদ্ধতি চালু করেছে। নতুন করে চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দেয়ার সুযোগ আছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাতে সরকার কীভাবে এবং কতটা ভর্তুকি কমাবে, তা জানতে চায় আইএমএফ প্রতিনিধিদল। বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, বিদ্যুতের দাম প্রতি বছর চার দফা সমন্বয় করা হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিকদের একই ধরনের আভাস দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে এখন অনেক কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। ঘাটতি মেটাতে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আগামী তিন বছর ধরে ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করা হবে। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে।

এর অংশ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতেই সরকার বিদ্যুতের দাম একবার বাড়ায়। এর আগে গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে তিন দফায় বাড়ানো হয়েছিল বিদ্যুতের দাম। গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরায় ১৪ দফা বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এছাড়া চলতি মাসে বা জুনে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানো হতে পারে বলে পিডিবি সূত্রে জানা গেছে।

 

News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• আশা জাগাচ্ছে বায়ুবিদ্যুৎ
• বিদ্যুতের ইউনিট ৩ টাকার বেশি হতে পারে না- বিডি রহমতুল্লাহ
• পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের দাবি
• পিছিয়ে গেল রূপপুরের বিদ্যুৎ উৎপাদন
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved