মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় প্রায় ৩০০ ব্যক্তির কাছ থেকে আমানত সংগ্রহের পর ২ কোটি টাকা নিয়ে একটি সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিষয়টি জানাজানি হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার তিল্লি ইউনিয়নের পারতিল্লি বাজারে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই বাজারে ২০১৮ সালে মায়ের দোয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন ওই এলাকার মো. ফরহাদ হোসেন, আজম খান, মো. হানিফ মিয়া, মো. রহিম, আইনুদ্দিন ও জিন্নত আলী। তারা মাঠকর্মী নিয়োগ দিয়ে এলাকায় ঋণ বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেন। শুরুতেই কিছু গ্রাহককে ঋণ দিয়ে লোভের ফাঁদে ফেলেন তাঁরা। পর্যায়ক্রমে তিন শতাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করেন। তাদের কাছ থেকে নানা অঙ্কের আমানত সংগ্রহ করেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পালিয়ে যান।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, ঈদের ছুটির পর ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় খোলা হয়নি। ঋণ কার্যক্রমও বন্ধ। ফলে আমানতকারীদের সন্দেহ হয়। তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সমিতি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। গতকাল রোববার দুপুরে আমানতকারীরা জমা টাকা পাওয়ার আশায় সেখানে উপস্থিত হন। তাদের হাতে ছিল স্ট্যাম্প ও পাসবই।
ফুকুরহাটির আইরমারা গ্রামের শের আলীর ভাষ্য, মায়ের দোয়া সমিতির সভাপতি মো. ফরহাদ হোসেনের কথায় এফডিআর খোলেন। যত টাকা আমানত রাখবেন, এর দ্বিগুণ টাকা পাবেন– এমন আশ্বাসে ৪ লাখ টাকা দিয়ে এফডিআর করেন তিনি।
একই এলাকার মতিয়ার রহমান বলেন, সমিতির সহসভাপতি মো. জিন্নত আলীর কথায় ১ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন। আর সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজম খানের কথায় ২ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন বলে জানান উত্তর পারতিল্লি গ্রামের আসমা বেগম।
এ ছাড়া মুন্নু মিয়া ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, রোমেজা বেগম ও হোসেন আলী ২ লাখ টাকা করে, শিল্পী বেগম ৩ লাখ টাকা আমানত রাখেন।
তাদের সবাই জানিয়েছেন, আজম খানের কথায় টাকা জমা দিয়েছিলেন।
ওই সমিতির কর্মকর্তা হানিফ আলী লাভের আশা দেখিয়ে রাজিয়া বেগমের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা, লাবলু মিয়ার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ও রানু বেগমের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করেন।
ওই গ্রাহকদের ভাষ্য, সমিতির সভাপতি ফরহাদ এক সময় স্বর্ণের দোকানে কাজ করতেন। আর সাধারণ সম্পাদক আজম খান ট্রাক্টর চালাতেন। আমানতকারীদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারা সমিতির নামে ৫৫ শতাংশ জমি, দুটি ড্রাম ট্রাক ও পারতিল্লি বাজারে জমি কিনে বিল্ডিং করেন। পরে সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে নিজেরা বাড়িঘর করেছেন বলে তাদের অভিযোগ।
তবে গ্রাহকদের বক্তব্য অস্বীকার করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আজম খান। তাঁর দাবি, তাদের ঋণের টাকা মাঠে পড়ে আছে। টাকা আদায় হলেই আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া হবে।
সাটুরিয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ফিরোজুল আলম বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ঋণ কার্যক্রমের অডিট রিপোর্টে ৩৭ জন গ্রাহকের হিসাব দিয়েছে। এর আড়ালে আমানত সংগ্রহের বিষয়ে তাদের জানা নেই। কোনো গ্রাহকও বিষয়টি জানাননি।
সাটুরিয়ার ইউএনও শান্তা রহমান বলেন, এ বিষয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে রোববার একটি অভিযোগ পেয়েছেন। দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করতে চান। আমানতকারীদের টাকা ফেরত না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।