Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
পুলিশের তিন কর্মকর্তা ঘুষ নেন বাকিতে! [ অনলাইন ] 06/05/2024
পুলিশের তিন কর্মকর্তা ঘুষ নেন বাকিতে!

রাতে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন জুতার দোকানের কর্মচারী মো. ফরিদ। মাঝ রাস্তা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় শাহ আলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমাদুল। এরপর ফরিদের স্ত্রীকে ফোন করেন এসআই এমাদুল। দাবি করেন ৫০ হাজার টাকা। বলেন, এই টাকা না দিলে তার স্বামীকে মাদক মামলায় আসামি করা হবে। পরে স্বামীকে বাঁচাতে ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন ফরিদের স্ত্রী। এমাদুলের কথামতো রাতেই ২৫ হাজার টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে নেন তার স্ত্রী। আর ৫ হাজার টাকা বাকি রাখেন তিনি। বাকির ৫ হাজার টাকা ২ দিন পরে দেন এসআই এমাদুলকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহ আলী থানা এলাকার সাধারণ মানুষকে রাস্তাঘাট থেকে ধরে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে পকেটে থাকা সব টাকা বের করে নেন এসআই এমাদুল। তাতেও কম পড়লে সেই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ফোন করে ডেকে নিয়ে আদায় করেন আরও টাকা। তাৎক্ষণিক দাবিকৃত অর্থ দিতে না পারলে বাকিতে রেখে পরে সেই টাকা আদায় করা হয়। তার এসব অপকর্মের সঙ্গী একই থানার এএসআই কামরুজ্জামান এবং এএসআই বদরুজ্জামান।

ভুক্তভোগী মো. ফরিদ কালবেলাকে বলেন, ‘আমি শাহ আলী মার্কেটের একটি জুতার দোকানে কাজ করি। গত ১৪ রোজার দিনে আমি রাতে দোকান থেকে হাইটা আসিতেছিলাম। তখন সেখান থেকে এসআই এমাদুল আমাকে ধরে নিয়ে শাহ আলী থানার টিনশেডে নিয়ে যাইয়া আমারে আটকাইয়া ফালায়। এরপর আমারে কয় ফ্যামিলিরে ফোন দে। তারপর আমি আমার ওয়াইফরে ফোন দিছি। এরপর এসআই এমাদুল আমার স্ত্রীকে বলে ওনাকে ছাড়াতে হলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। ওনার কাছে মদের বোতল পাইছি। আসলে আমার কাছে কিছুই পায় নাই। আমি পান ছাড়া জীবনে কিছুই খাই নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসআই এমাদুল তখন হাতে লাঠি নিয়ে বলে তোকে হিরোইন মামলা দেব, মারব বলে বিভিন্নভাবে ভয় দেখায়। তখন আমার স্ত্রী ভয়ে বলে ঠিক আছে ২০ হাজার টাকা দেব; কিন্তু উনি তাতে রাজি হয় না। অনেক মারধর করছে আমারে। পরে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ছাড়ছে।’ স্বামীকে বাঁচাতে মাঝরাতে কোলের শিশুকে নিয়ে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না ফরিদের স্ত্রীর।

তাই বাধ্য হয়ে নিজের কানের দুল বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করেন তিনি।

ফরিদের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, ‘সেই রাতে এমাদুল স্যার আমার জামাইরে ধরে নিয়ে যায়। এরপর প্রথমে আমারে কয় ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি কই স্যার গরিব মানুষ এত টাকা কই পামু। তখন কয় টাকা না দিলে হিরোইন মামলা দিয়ে লাইফ শেষ করে দিমু। এটা শুনে তো আমি ভয় পাইয়া যাই। পরে আমি হাতে-পায়ে ধরে রাতেই ২৫ হাজার টাকা দিয়ে জামাইরে ছাড়াইয়া আনছি। বাকি ৫ হাজার টাকা পরে দিছি।’

তাসলিমা নামের এক নারী কালবেলাকে বলেন, ‘আমার স্বামী মুরগির গাড়িতে ডিউটি করে। যেহেতু গাড়িতে থাকে তাই হালকা পাতলা নেশা করেই। সে জন্য এসআই এমাদুল বার বার আমার বাসায় গিয়ে টাকা নিয়ে আসে। এ পর্যন্ত দফায় দফায় অন্তত ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। একদিন আমার ঘরে গিয়ে বলে তল্লাশি করবে। তল্লাশি করে কিছুই পায় নাই। তখন আমার ড্রয়ারে কিস্তির বইয়ের মধ্যে টাকা ছিল, সেই টাকাগুলোও নিয়ে যায়।’

গত বছরের ১৬ অক্টোবর রাতে রিজন নামের এক ছেলেকে গুদারা ঘাটের ৮ নম্বর রোডের একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যান এসআই এমাদুল। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এএসআই কামরুজ্জামান এবং এএসআই বদরুজ্জামান। আটকের খবর পেয়ে ভাইকে বাঁচাতে থানায় যান রিজনের ভাই সোহাগ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বন্ধু আলামিন। তাদের কাছে এসআই এমাদুল ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোহাগ ও আলামিনের হাতে হ্যান্ডকাফ লাগায় এএসআই কামরুজ্জামান। পরে সোহাগের পকেটে থাকা ৮ হাজার টাকা এবং আলামিনের পকেটে থাকা ৫ হাজার টাকা বের করেন এই পুলিশ সদস্যরা। তবুও মেলেনি রক্ষা। তাদের হাজতে ঢুকিয়ে রেখে বিকাশে আরও ১০ হাজার টাকা আদায় করেন এই তিন পুলিশ কর্মকর্তা। সেই তিনজনকে থানায় আটক রাখার ভিডিও এবং টাকা লেনদেনের অডিও রয়েছে কালবেলার হাতে।

সেই রাতের পুলিশের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সোহাগ; কিন্তু অভিযোগ করার পরই তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এই পুলিশ সদস্যরা।

সোহাগ কালবেলাকে বলেন, তিন পুলিশের নামে অভিযোগ করার পর থেকেই অনেক চাপে আছি। নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে তারা। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাহ আলী থানায় গিয়েও পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত ৩ পুলিশের কাউকেই। পরে তাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। এরপর তাদের মোবাইল ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠালেও কোনো উত্তর মেলেনি।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অল্পসংখ্যক এমন কিছু পুলিশ সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীর সুনাম নষ্ট হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক কালবেলাকে বলেন, শাহ আলী থানা এলাকার ৩ পুলিশ সদস্য সেখানকার মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। পুলিশের এই দু-একজন কর্মকর্তার অপেশাদার আচরণের কারণে মানুষের মনে অনেক অবিশ্বাস তৈরি হয়। প্রশ্ন হলো এই তিন পুলিশ যা করছেন, তা কি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখেন না। যদি দেখেও না দেখার মতো থাকেন, তাহলে এটাও অপরাধ।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. ফারুক হোসেন কালবেলাকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আমাদের ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে একটি শাখা রয়েছে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি এ ধরনের বিচ্যুতিমূলক কাজ করে থাকে, তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাটি অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হয়। তদন্তে যদি সত্যতা প্রমাণ হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অপরাধ বিবেচনায় চাকরিচ্যুতও হতে পারে। আমরা বলতে চাই, একজন ব্যক্তি পুলিশের অপরাধের দায় শুধুই তার। ডিপার্টমেন্ট তার অপরাধের দায়ভার বহন করবে না।

News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের শত শত বাড়ি হলো কীভাবে?
• মোবাইল জুয়া ও মাদক সেবনে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ
• ৯৭ লাখ টাকা জালিয়াতি, সাত কর্মকর্তা অধরা
• শাহজালালে যাত্রীর শরীরে সাড়ে ৪ কেজি স্বর্ণ
• প্রশ্ন ফাঁসকাণ্ডে অধ্যক্ষ বরখাস্ত, নিয়োগ স্থগিত
• বাংলাদেশি দুই চাকমা যুবককে নাফ নদী থেকে অপহরণ
• অভিভাবক হয়ে ছিলেন ভক্ষকের ভূমিকায়
• লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বিদ্যুৎ খাত
• চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব বহু তরুণ-তরুণী
• স্পর্শকাতর তথ্য বিক্রি করেন র‌্যাব-এটিইউর দুই কর্মকর্তা
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved