দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র গরমের সঙ্গে
যুক্ত হয়েছে সীমাহীন লোডশেডিং। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিপাকে পড়েছেন
শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও শিক্ষার্থীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোটবড় কারখানার
মালিকরা।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, বিদ্যুতের ঘন ঘন
লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ভালুকার জনজীবন। এখানকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের
অভিযোগ ২৪ ঘণ্টায় তারা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। এতে
বিপাকে পড়েছেন শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও শিক্ষার্থীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন
পোলট্রি ব্যবসায়ী, মত্স্যচাষি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যানচালকসহ ছোট ও
মাঝারি সাইজের কারখানার মালিকগণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবড় কারখানার উৎপাদন হ্রাস
পাচ্ছে। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছে শিশুরা। ঘেমে জ্বর-কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে
আক্রান্ত হচ্ছে তারা। বাদ যাচ্ছেন না বয়স্করাও। এদিকে লোডশেডিংয়ে
ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও অটোচালকরা পড়েছেন আরও বেশি ভোগান্তিতে। রাত্রের
অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় গাড়িতে চার্জ দিতে না পেরে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে
নামতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতের অভাবে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে না
পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে।
ভালুকা পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী এ জে এম
আনোয়ারুজ্জামান জানান, তার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। বিদ্যুৎ চাহিদা
২২ মেগাওয়াট। তিনি পাচ্ছেন গড়ে ১০-১৫ মেগাওয়াট। ফলে, তাকে কিছুটা লোডশেডিং
করতে হচ্ছে।
অপরদিকে, ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল
ম্যানেজার মো. খালেকুজ্জামান জানান, তার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৭৬
হাজার। বিদ্যুৎ চাহিদা আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট। পাচ্ছেন ২৫ শতাংশ কম।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, ফুলবাড়ীতে
বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কৃষকদের বোরো আবাদের
খরচ বাড়ছে। তবে তাপপ্রবাহ বেশি থাকায় উপজেলার কিছু কিছু এলাকার জমিতে
রোগবালাইও দেখা দিয়েছে।
কৃষক সুভাস চন্দ্র রায় বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ
পাম্প দিয়ে পানির চাহিদা পূরণ না হওয়ায় কৃষকেরা ব্যক্তি উদ্যোগে ডিজেলচালিত
মেশিন দিয়ে এক দিন পর পর সেচ দিচ্ছেন। এতে বোর আবাদে খরচ বাড়ছে।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, শ্রেণিকক্ষে
ফ্যান থাকলেও বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে ঘুরছে না পাখা। ফলে
প্রচণ্ড গরমে বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বসেই ক্লাস করতে
হচ্ছে। তীব্র গরমে বাতাসের জন্য শিক্ষার্থীরা হাতপাখা ও পড়ার বই দিয়ে শরীরে
বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করছে। সরেজমিনে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা
শরিফুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
শুধু ফলদার শরিফুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ই নয়,
জেলার প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
শিক্ষার্থীদের গরম থেকে বাঁচতে ভরসা হাতপাখা ও পড়ার বই। প্রচণ্ড গরমে অনেক
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জিয়াসমিন জানায়, বিদ্যালয়ে
বিদ্যুতের অভাবে ফ্যানের পাখা ঘুরে না। তীব্র গরম থেকে বাঁচতে হাতপাখা দিয়ে
বাতাস দিতে হয়। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বলেন, গরমের কারণে
বিদ্যালয়গুলোতে যাতে অ্যাসেম্বলি না করা হয় সেটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও আরো কয়েকটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।