[ পাতা ৪ ] 07/05/2024 |
|
|
|
শেয়ারবাজারের সরিষায় ভূত? |
|
|
ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে কোনো কোম্পানি বা শিল্পগোষ্ঠী তালিকাভুক্ত হয় ব্যবসায় সহায়ক পুঁজি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যেন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয় বিভিন্ন ছলছুতায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদিগের অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে। গবেষণার প্রয়োজন নাই, দেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান বেহাল দশার কারণ অনুসন্ধান করিলেই উহা স্পষ্ট বোঝা যায়। এইখানে শিল্প মালিকরূপী একাধিক কারসাজি চক্র সক্রিয়, যাহারা স্বীয় কোম্পানির শেয়ার বিক্রয়ের নামে লক্ষ লক্ষ সাধারণ বিনিয়োগকারীর অর্থ হাতাইয়া পকেটস্থ করেন, অপর দিকে বাজারের অন্য কোম্পানির শেয়ার নাড়াচাড়া করিয়াও কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ উপার্জন করেন। এমনই এক জালিয়াত চক্রের স্বরূপ তুলিয়া ধরিয়াছে সোমবারের সমকাল। ঐ প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির মালিক ‘ফার’ গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের ফারুক তাঁহার দুই ভ্রাতা– একজন পুলিশের ডিআইজি, অন্যজন ব্যারিস্টার ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী লইয়া এক যুগেরও অধিক সময় ধরিয়া শেয়ারবাজারে ‘ভেলকি’ দেখাইয়া চলিয়াছেন। তিনি কোম্পানির আইপিও তথা প্রাথমিক শেয়ার ইস্যুর পূর্বে এক পয়সাও লগ্নি না করিয়া জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া শেয়ার ইস্যু করেন। বাজারে আসিবার পূর্বেই প্রথমে এই শেয়ারের কিছু অংশ প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় বিক্রয় করিয়া নগদ অর্থ লুটের পর ঐ কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত করিয়া অবশিষ্ট শেয়ার বিক্রয় বাবদ শত শত কোটি টাকা হাতাইয়া লন। কখনও তালিকাভুক্ত চালু কোম্পানিকে লোকসানি সাজাইয়া উক্ত প্রতিষ্ঠানের টাকা ও সম্পদ স্বীয় নামে অপর ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিতে হস্তান্তর করেন। পরে কৌশলে ঐ কোম্পানি তালিকাভুক্ত করিয়া নিজে টাকার শীর্ষে আরোহণ করিয়া অপর সাধারণ বিনিয়োগকারীকে পথে বসাইয়া দেন ।
যাহা রহস্যজনক, এহেন কারসাজির অকাট্য প্রমাণ থাকিলেও ফারুক ও তাঁহার দলবলের বিরুদ্ধে বিএসইসি অদ্যাবধি কঠোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। শুধু আলোচনা-সমালোচনায় মুখ বন্ধের চেষ্টায় পৃথক সাত ঘটনায় জনদর্শানো আর্থিক জরিমানা ধার্য করিয়াছে। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্বীয় দুই কোম্পানির একীভূতকরণ সংক্রান্ত ফারুকের জালিয়াতির প্রমাণসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করিবার পরও বিএসইসি উহা আদালতে পেশ করে নাই। অর্থাৎ গলদটা খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থারই মধ্যে। এই কারণেই ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের ঘটনায় কৃষি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুসারে কমিশন পুনর্গঠন, অনেক আইনের সংশোধনসহ নূতন আইন প্রণয়ন এবং শেয়ার কারসাজি শনাক্তে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থা প্রবর্তনের পরও পুঁজিবাজার যেই তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রহিয়াছে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইতোমধ্যে বহু সাধারণ বিনিয়োগকারী হতাশ হইয়া শেয়ারবাজার ত্যাগ করিয়াছেন; এমনকি বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারীও একই পন্থা অনুসরণ করিয়াছেন।
আমরা জ্ঞাত, সরিষার অভ্যন্তরেই ভূত লুক্কায়িত থাকিলে উক্ত সরিষা দিয়া ভূত বিতাড়ন দুঃসাধ্য। অনুরূপ বর্তমান কমিশনের পক্ষে শেয়ারবাজার দুষ্টচক্রমুক্ত করা সম্ভব নহে। সুতরাং বিএসইসিকেও যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন।
|
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|