[ অনলাইন ] 07/05/2024 |
|
|
|
ব্যারিস্টার’ ভেক ধরে প্রণয়, পরে সর্বনাশ |
|
|
ব্যারিস্টার’ ভেক ধরে সালাউদ্দিন আতার আবির্ভাব। আলাপে আলাপে তরুণীর অন্তরে ঠাঁই। এর পর প্রণয়। দু’জনের প্রেম যখন অনন্য উচ্চতায়, তখন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে সালাউদ্দিন। টোপ দিল বিয়ের। এক পর্যায়ে দু’জন হয়ে যায় অতি ঘনিষ্ঠ! তরুণী যে সময় জানতে পারলেন সালাউদ্দিন প্রবঞ্চক, তখন সবই শেষ। থানায় ধর্ষণ মামলা ঠুকেও পড়েন গাড্ডায়। মামলা তুলে নিতে ওই তরুণী ও তাঁর পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েই যাচ্ছে এই ঠগবাজ।
সালাউদ্দিনের অপকর্ম এখানেই শেষ নয়; তরুণীর মামলায় কারাগারে গিয়ে পরে বিয়ের শর্তে জামিন নিয়ে ফের হাঁটে শঠতার পথে। ভুক্তভোগী তরুণীকে বিয়ে না করে গাঁটছড়া বাঁধে অন্য মেয়ের সঙ্গে। সালাউদ্দিন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার সৈয়দপুরের আবু তাহের বাচ্চুর ছেলে। নিজ গ্রামে প্রথম বিয়ে করে ২০১১ সালে। পরে আরও দুই বিয়ে। ‘ব্যারিস্টার’ পরিচয় দিয়ে বেড়ালেও সে আদতে রাজধানীতে একটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে।
ওই তরুণী জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ফেসবুকের মাধ্যমে সালাউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। পরে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে খুদেবার্তা পাঠায়। রাজি না হওয়ায় তরুণীর পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে সালাউদ্দিন যোগাযোগ করে। তাকে বিয়ে করতে ওই ব্যক্তি তরুণীকে উদ্বুদ্ধ করে। এক পর্যায়ে ওই বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে সালাউদ্দিনের সঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সাক্ষাৎ করেন তরুণী। এর পর দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা চলে নিয়মিত। একই বছরের ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় সালাউদ্দিন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলে তরুণীকে রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। রাত ৮টার দিকে সব স্বজন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে ওই তরুণী চলে যেতে চাইলে সালাউদ্দিন তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেবে বলে জানায়। বাসায় অন্য কেউ না থাকার সুযোগে তরুণীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করে সালাউদ্দিন। এর পর থেকে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তরুণী। তবু বিভিন্ন সময় ফোন করে ফের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ানোর প্রস্তাব দেয় সালাউদ্দিন। রাজি না হলে ‘গোপন ভিডিও’ ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
বারবার বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তরুণীর মন গলানোর চেষ্টা করে। বিয়ের তারিখও ঠিক করার নাটক সাজায়। দু’বার তারিখ বদলে তৃতীয়বার ২০২২ সালের ১০ আগস্ট বিয়ের তারিখ দেয়। তরুণীর পরিবার থেকে বিয়ের কার্ডও ছাপানো হয়। এক পর্যায়ে ৮ আগস্ট থেকে সালাউদ্দিনের ফোন নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। তরুণী ও তাঁর পরিবার সালাউদ্দিনের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, সে ‘অসুস্থ’। এর পর ১০ আগস্ট সকালে সালাউদ্দিন তরুণীর ভাইকে ফোন করে জানায়, তার আর্থিক অবস্থা ভালো না। পরে বিয়ে করবে। প্রথম দিনের অনৈতিক সম্পর্কের ছবি মোবাইল ফোনে গোপনে ভিডিও করে রেখেছিল সালাউদ্দিন। সেটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নভেম্বর পর্যন্ত আট মাসে অনেকবার অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া দিতে বাধ্য করা হয়।
নভেম্বরের শেষের দিকে তরুণী জানতে পারেন, নেত্রকোনায় আরেক তরুণীর সঙ্গে সালাউদ্দিনের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। এর পর তিনি ২৯ নভেম্বর পল্লবী থানায় সালাউদ্দিনের নামে মামলা করেন। মামলার পরদিনই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তরুণীর সঙ্গে বিয়ের শর্তে প্রায় দেড় মাস পর জামিন থেকে মুক্তি পায় সালাউদ্দিন। তবে জামিনে বেরিয়ে তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ না করে নেত্রকোনায় গিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করে।
ভুক্তভোগী তরুণী জানান, ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ধানমন্ডি এলাকায় রাস্তায় তাঁর ওপর সালাউদ্দিন হামলা চালায়। ওই দিনই তিনি ধানমন্ডি থানায় সালাউদ্দিনের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিটি তদন্ত করছেন ধানমন্ডি থানার এসআই সাইফুল আলম। তিনি বলেন, মেয়েটিকে কেউ একজন গলা টিপে ধরছে– এটি ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট। ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে।
এদিকে পল্লবী থানায় করা ধর্ষণ মামলাটির তদন্ত শেষে সালাউদ্দিনকে অভিযুক্ত করে ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়।
তরুণী সমকালকে বলেন, ‘মামলাটি তুলে নিতে দিনের পর দিন সালাউদ্দিন হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে সে। তার দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি চাই।’
অভিযুক্ত সালাউদ্দিনের চারটি নম্বরে ফোন দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে সমকাল। তবে সব ক’টিই বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার বাবা আবু তাহের বাচ্চুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ঢাকার তরুণীর সঙ্গে সালাউদ্দিনের বিয়ে ঠিক হওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
সালাউদ্দিনের প্রথম স্ত্রী বলেন, ‘প্রতারণা করে সালাউদ্দিন বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ২০১৮ সালে এটি জানার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। এর পর থেকে বাবার বাসায় আছি।’ |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|