[ অনলাইন ] 07/05/2024 |
|
|
|
এমপিদের সম্পদ বেড়েছে ৩০৬৫% উপজেলা চেয়ারম্যানদের ৪২০০ |
|
|
পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে সংসদ সদস্যদের (এমপি) পেছনে ফেলেছেন উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। এমপিদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ হলেও একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্পদ বেড়েছে ৪ হাজার ২০০ শতাংশেরও বেশি। এ সময়ে একজন চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩১৯ শতাংশ, ১০ বছরে এ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ২৩৩ শতাংশ। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২৫১ শতাংশ এবং স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ।
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। হলফনামা বিশ্লেষণের তথ্য জানাতে গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর ধানম-ির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটি।
টিআইবি বলছে, প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলার মধ্যে ১৪৪টির প্রার্থীদের হলফনামা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে, বাকি আটটি করেনি। ১৫২টি উপজেলার তিনটি নির্বাচনের প্রায় ৪ হাজার ৮০০টি হলফনামায় দেওয়া আট ধরনের তথ্যের বহুমাত্রিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের দাপট বাড়ছে, অনেকেরই অবিশ্বাস্য হারে আয় ও সম্পদের বিকাশ ঘটেছে, ফলে জনস্বার্থ থেকে বিচ্যুত হয়ে ব্যক্তিস্বার্থ বা মুনাফাকেন্দ্রিক রাজনীতি প্রাধান্য পাচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়েও এখন জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নির্বাচনকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি দেখিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা চতুর্থ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশ। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৬৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ৬৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশের পেশা ব্যবসা। আবার গৃহিণী/গৃহস্থালিকে পেশা হিসেবে দেখানো প্রার্থীদের সাড়ে ১৯ শতাংশের আয় আসে ব্যবসা থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিত্ব ক্ষমতাকেন্দ্রিক। জনস্বার্থ নয় বরং ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। আবার দলীয় শৃঙ্খলা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা কিংবা দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত মেনে চলার যে ধরনের আচরণ রাজনৈতিক দলের মতো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রত্যাশিত, তা ক্ষমতার রাজনীতির কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। যেহেতু ক্ষমতায় যেতে পারলে সম্পদ বিকাশের সীমাহীন সুযোগ তৈরি হয়, আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়, ফলে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা যেরূপ আগ্রাসীভাবে রাজনীতিতে আসছেন, তারা কি সুস্থ বা যথাযথ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আসছেন কি না। যেসব রাজনীতিবিদ এরূপ প্রতিকূল অবস্থায়ও সুস্থ ও জনকল্যাণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চায় আগ্রহী, তারা প্রায় বিলুপ্ত বা ক্ষমতার রাজনীতিতে তারা কোণঠাসা। নির্বাচন হবে, হচ্ছে, তবে বাস্তবে জনগণের জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেয় এমন নির্বাচন কতটুকু হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।’
স্থানীয় নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণে প্রাপ্ত ফলকে বিস্ময়কর উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘হলফনামা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, অনেক জনপ্রতিনিধির আয় অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির হার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের চেয়েও বেশি। হলফনামায় যথাযথ কিংবা পর্যাপ্ত ও সঠিক তথ্য দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কোনো কোনো প্রার্থীর আয় খুবই কম দেখানো হয়েছে, যার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। আবার প্রার্থীদের যাদের আয় ও সম্পদ গগনচুম্বীহারে বৃদ্ধি পেয়েছে বা তাদের নির্ভরশীলদের আয়-সম্পদের যে বিপুল বিকাশ ঘটেছে, বৈধ সূত্রের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না এ প্রশ্নও অত্যন্ত যৌক্তিক। এ হলফনামার সত্যতা ও যথার্থতা নিশ্চিতের দায়িত্ব যাদের সেই নির্বাচন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশন স্বপ্রণোদিতভাবে খতিয়ে দেখার দায়িত্বটি পালন করছে না, যা হতাশাজনক।’
হলফনামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি বলেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫৬০, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬১১ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথম ধাপের ভোট হবে ৮ মে। তাছাড়া আইনি সীমা অর্থাৎ ১০০ বিঘা বা ৩৩ একর-এর বেশি জমি আছে কমপক্ষে আটজন প্রার্থীর। ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রার্থীর ঋণ/দায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ/দায় রয়েছে ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকার।
টিআইবি বলছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত। অন্যদিকে অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে নির্বাচনের প্রথম ধাপের প্রার্থীদের মাত্র ৭ শতাংশ কোটিপতি। বাকি প্রায় ৯ শতাংশ প্রার্থীর সম্পদ কোটি টাকার নিচে। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মধ্যে ৯৪ জন কোটিপতি। আগের নির্বাচনের তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ (পঞ্চম নির্বাচনে ছিল ৩৭ জন)। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ১৭ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৬ জন কোটিপতি। এ ছাড়া চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে বছরে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা আয় করেন এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৯৮ জন; যা মোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীর ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ, যা পাঁচ বছর আগের নির্বাচনের তুলনায় প্রায় আড়াইগুণ। সমপরিমাণ আয় করেন এমন ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দুই ক্ষেত্রেই সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণের কাছাকাছি।
হলফনামা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ জাতীয় নির্বাচনের তুলনায়ও কম। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে নারী প্রার্থী আছেন মাত্র ২৫ জন। অন্যদিকে সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪০ শতাংশই আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে। অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ প্রার্থী। প্রায় ৯৩ শতাংশ প্রার্থীর সম্পদ কোটি টাকার নিচে, বাকি ৭ শতাংশ প্রার্থীর সম্পদ কোটি টাকার বেশি। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|