যশোরের চৌগাছায় জমি রেজিস্ট্রি করতে
সরকার নির্ধারিত ফিয়ের সঙ্গে শতকরা ৫ টাকা হারে অফিস রেট দেয়া বাধ্যতামূলক।
দলিলের মূল্যভেদে এই রেট সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর দলিল লেখকদের
কাছ থেকে এই অফিস রেটের টাকা চৌগাছা উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসের চতুর্থ
শ্রেণীর কর্মচারি (মোহরার) শহিদুল ইসলাম আদায় করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর
দীর্ঘ দিন এভাবেই সাধারণ মানুষের টাকায় অবৈধ এই অফিস রেট দিয়েই দলিল
রেজিস্ট্রি করছেন চৌগাছার দলিল লেখকরা।
গত
বৃহস্পতিবার (২ মে) বাদল মৃধা নামে একজন ব্যবসায়ির জমি রেজিস্ট্রির সময়
ঘটনাটি এই প্রতিবেদকের দৃষ্টিগোচর হয়। তখন অফিস রেটের বিষয়টি জানতে সরেজমিন
ও মোবাইল ফোনে যশোর সদর ও চৌগাছা উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক
সমিতির সাবেক ও বর্তমান একাধিক নেতাসহ দলিল লেখকদের সঙ্গে কথা হয়। তারাই
বললেন, ঘুষের অফিসিয়াল নামই “রেট”। এই রেট আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়ে
অফিসকে দিয়ে থাকি। আর এই অফিস রেটের টাকা সাব-রেজিস্ট্রার থেকে শুরু করে সব
অফিস স্টাফদের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ভাগ হয় বলে জানিয়েছেন দলিল লেখকরা। তবে
সংবাদে তাদের নাম প্রকাশ করলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন দলিল
লেখকরা।
এদিকে
মোবাইল ফোনে অফিস রেটের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহরার শহিদ তাকে দেখা করতে
অনুরোধ করেন। তখন সাংবাদিক হয়ে কেনো দেখা করবো প্রশ্নের উত্তরে শহিদ বলেন
ওসব বাদ দেনতো ভাই। আপনি না আসলে আমি আপনার সঙ্গে দেখা করবো। এক পর্যায়ে
তিনি বলেন অনেকে দলিলতো ফ্রি করে নিয়ে যায়। ফ্রি মানে কি উত্তরে কোনো কিছু
না বলে বার বার দেখা করার অনুরোধ করতে থাকেন। সর্বশেষ কোনোভাবে রাজি করাতে
না পেরে শহিদ বলেন আমি কোনো টাকা পয়সা নিই না। আপনি যা পারেন করেন।
তবে
দীর্ঘদিনের এই অফিসিয়াল রেট বা ঘুষের বিষয়টি জানেন না চৌগাছা রেজিস্ট্রি
অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার অমায়িক বাবুু। তিনি বলেন,
আপনার এ ধরনের কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিত দেন। সাংবাদিক কেনো লিখিত অভিযোগ
করবে জানতে চাইলে তিনি কথা ঘুরিয়ে বলেন তাহলে তথ্য চাইলে নিয়ম মেনে দরখাস্ত
করেন।
তবে সাব রেজিস্ট্রার না জানলেও
বর্তমানে (প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার) ১ দিনের রেজিস্ট্রি কার্যক্রমে
মোহরার শহিদ প্রায় ৩ লাখ টাকার উর্ধ্বে অফিস রেট আদায় করেন বলেও অভিযোগ
উঠেছে। শুধু গত ২৫ এপ্রিল একদিনেই ১৫৭ টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে বলে মোহরার
শহিদ জানিয়েছিলেন। সে হিসেবে যদি দলিল প্রতি গড়ে ৩ হাজার টাকা করেও অফিস
রেট হয় তাহলে একদিনেই অবৈধ আয় ৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে বছরের পর বছর উপজেলাবাসির টাকা অবৈধভাবে চুষে নেয়া রক্তচোষা শহিদদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই?