বেনাপোল কাস্টমস হাউজে চলছে অনিয়ম দুর্নীতি ও তুঘলোকি কারবার। প্রতিবাদ
করলেই তার বিরুদ্ধে নেয়া হয় আইনি ব্যবস্থা। প্রতিটি গ্র“পের প্র“প সুপারের
মাধ্যমে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। এর মধ্যে নিলাম শাখা একটি গ্র“প।
আমদানিকারক কর্তৃক আমদানিকৃত যেকোনো পণ্য বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছানোর পর
৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারক তার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে কাস্টমস শুল্ক
ও করাদি পরিশোধ সাপেক্ষে ছাড়ের বিধান বিদ্যমান।
স্থলবন্দরের শেডে
আমদানিকৃত পণ্য ৩০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরপরই নিলাম তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা।
একাধিক আমদানিকারক নিলাম তালিকা থেকে নিয়ম অনুযায়ী নাম কাটিয়ে জরিমানা
প্রদান সাপেক্ষে ছাড় করিয়ে নিলাম তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে নিলেও হাজার হাজার
পণ্যের চালান নিলামের তালিকায় থেকে যায়। বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সংশ্লিষ্ট
শাখার নিলাম কমিটির মাধ্যমে কিছু কিছু কন্সাইনম্যান্ট নিলামে বিক্রয়ের
সিদ্ধান্তপূর্বক নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি লট বা
কন্সাইনমেন্ট নিলামে বিক্রয় না হলে তা পুনরায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের
মাধ্যমে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেন।
বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দরের শেডে রক্ষিত ১১৬টি পণ্য চালানের প্রতিটি
পণ্যের ধ্বংসযোগ্য তালিকা করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক
সিঅ্যান্ডএফ মালিক ও প্রতিনিধিরা জানান, বেনাপেল কাস্টমস নিয়মিত প্রতি মাসে
নিলাম বিক্রয়ের ব্যবস্থা করলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হতো না
বরং শত কোটি টাকা রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হতো। তা না করে ব্যক্তিগত
লাভের আসায় স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নিলামযোগ্য পণ্য সময় মতো নিলাম তালিকা
প্রস্তুত না করে ধ্বংসযোগ্য তালিকা প্রস্তুত করেছে। একাধিক সূত্র থেকে জানা
যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ধ্বংসযোগ্য মালামাল ধ্বংস করার আগে নিয়োজিত
দালালদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে গোপনে বিক্রয়ের
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দু-একটি পণ্য চালান ছাড়া প্রত্যেকটি পণ্য চালান
বিক্রয়যোগ্য ও রাজস্ব আহরণ হওয়ার কথা।
অথচ তা না করে অহেতেুক ইচ্ছামাফিক
পণ্যগুলো আমদানির ৩০ দিন পর নিলাম তালিকাভুক্ত করে বিক্রয়ের ব্যবস্থা না
করে ধ্বংসযোগ্য চূড়ান্ত তালিকা করেছে। চূড়ান্ত তালিকার মধ্যে ১৬, ১০৪, ২২,
২৭, ২৯, ৩৪, ৩৭, ৩৯, ২১, ৩০, ১৪, ৩৬, ১৮, ২৫, ১৩, ৩২, ৩৪, ৩৫, ০৯, ১০, ২৪,
২৮, ৪১, ০২, ৩৭, ১০, ০৯ ও ৪২ নং শেডে রক্ষিত আছে। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী
দেখা যায়, ম্যানিফেস্টো নম্বর ও তালিকা আমদানিকারকের নাম, পণ্যের বিবরণ,
পরিমাণ, ম্যানুফেস্টো অনুযায়ী পণ্যের মূল্য, মামলা আছে কি না, বাণিজ্যিক
মূল্য আছে কি না, বন্দর ও কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষের মন্তব্য। সর্বমোট
ধ্বংসযোগ্য পণ্যের পরিমাণ এক লাখ পাঁচ হাজার ২২৯ কেজি এবং পার্টস জাতীয়
১৫৬৯ ভিন্ন প্রকার বীজ ২০ হাজার ৪৩৭ কেজি, কাপড়জাতীয় পণ্য ৯ হাজার ৩৭৯ কেজি
এবং অন্যান্য পণ্যের মধ্যে এক লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ কেজি পণ্য। তিল ধারণের
ঠাঁই নেই শেডের মধ্যে। অথচ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ শেড ভাড়া পান না।
কাস্টমস
রাজস্ব হারাচ্ছে। তাতেও কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি
করার পর শেডে পণ্য রাখার জায়গা সঙ্কুলান দেখানো হয়। বেনাপোল স্থলবন্দর এবং
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতার কারণেই নিয়মিত নিলাম
তালিকা প্রস্তুত না করার কারণে পণ্যজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের
কমিশনার আব্দুল হাকিমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি তার
মুঠোফোনটি রিসভ করেননি। এ ব্যাপারে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রিজাউল
করিম তালিকা ও নিলামযোগ্য পণ্য বিক্রয়ের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা
প্রতিটি শেডের পণ্যের নিলাম তালিকা প্রস্তুত করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে
পাঠিয়ে দিই, সেখান থেকে নিলামের চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়া হয়।