[ প্রথম পাতা ] 05/02/2020
 
আকাশ প্রদীপের পাইলট কেবিন ক্রুরা বাসায় কোয়ারিন্টাইনে!
আজাদ সুলায়মান ॥

করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে চীন থেকে বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশীদের নিয়ে দেশে ফেরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট কেবিন ক্রুসহ ২০ জন এখন নিজ নিজ বাসায়ই কোয়ারিন্টাইনে। আর্তমানবতার সেবায় সব ধরনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তারা স্বতঃস্ফূর্ত দায়িত্ব পালন করে এখন মেনে চলছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম কানুন। দুসপ্তাহ তাদের এমন বিধিনিষেধের মধ্যে কাটাতে হবে। বিমান সূত্র জানায়, টানা ১৪ দিন তারা ডিউটি করতে না পারায় বিমানের আর্থিক ও সেবায় ঘাটতি দেখা দেবে। এ সম্পর্কে বিমান এমডি মোকাব্বির হোসেন বলেন, তারা ডব্লিউএইচওর গাইড মেনে বাসাতে নিরাপদে আছেন। সময় হলে তারা নিয়মিত ফ্লাইট চালাবেন, এ নিয়ে কোন সমস্যা দেখছি না। আমরা ওই চার্টার্ড ফ্লাইটের জন্য পাওনা চেয়ে চিঠি লিখেছি। কেননা বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

ওই ফ্লাইটের চার পাইলট কেবিন ক্রুসহ মোট ২০ জন দায়িত্ব পালন করেন। ফ্লাইটটি নিরাপদে গত শনিবার ঢাকায় ফেরার পর তাদের সবাইকে অফিস না করে যার যার বাসাতেই মাস্ক পরে একাকী থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা তাদের আনুষ্ঠানিক কিছু দিকনির্দেশনা দেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন এ বিষয়ে বলেন, চীন থেকে সেদিনের ফ্লাইটে যাত্রী নিয়ে দেশে ফেরাদের মধ্যে ছিলেন বিমানের চার পাইলট, ১১ কেবিন ক্রু ও গ্রাউন্ড সার্ভিসের পাঁচ স্টাফ। আমার এক পাইলটের সিমুলেশন ট্রেনিং ছিল সিঙ্গাপুরে। এজন্য রবিবার ভিসার জন্য গিয়েছিল, তারা চীনের এক্সিট এন্ট্রির সিল দেখে তাকে ভিসা দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে এর মধ্যে এক ক্যাপ্টেন সিঙ্গাপুর এম্বাসিতে গিয়েছিলেন। তার প্রশিক্ষণ আছে সিঙ্গাপুরে। এজন্য সিঙ্গাপুর এম্বাসিতে ভিসা নিতে গেলে তাকেও ভিসা হয়নি।

ফ্লাইট নিয়ে দেশে আসা ক্যাপ্টেন, কেবিন ক্রু ও গ্রাউন্ড সার্ভিস সদস্যদের বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে কী ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের প্রসিডিউর অনুযায়ী চলতে বলা হয়েছিল সেই অনুযায়ীই তারা চলছেন। এটা আমাদের জন্য বড় কোন সমস্যা নয়। কারণ ইতোমধ্যে আমাদের এয়ারলাইন্সে নতুন ৩৭ ক্রু যোগ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, চীনের উহান থেকে বাংলাদেশীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ উড়োজাহাজ (বোয়িং-৭৭৭-৩০০) ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় শাহজালাল বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। বিমানটি সে দিনই রাত দুটোয় ঢাকায় ফেরার সময় নির্ধারণ থাকলেও ১০ ঘণ্টা বিলম্বে ১ জানুয়ারি দুপুর বারোটায় ঢাকায় অবতরণ করে। পাইলট, কেবিন ক্রুরা কবে নাগাদ ফ্লাই করতে পারবে- প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডিজি হেলথ যেভাবে বলছে সেভাবে প্রসিডিউর মেনে যান তারা। ডব্লিউএইচওর গাইডলাইন অনুযায়ী সবকিছু করা হচ্ছে। আইকাও বিষয়টি এপ্রুভ করেছে, আমরাও সেভাবে করছি। এ কারণে অন্য ফ্লাইটে কোন সমস্যা হচ্ছে না।

এদিকে বিমানের ওই উড়োজাহাজ ‘আকাশ প্রদীপ’ নিয়মিত ফ্লাইট শুরু করেছে। টানা বারো ঘণ্টার চেষ্টায় জীবাণুমুক্ত করা হয় আকাশ প্রদীপ। বিমানের বোয়িং ৭৭৭ আকাশ প্রদীপের সাধারণ বর্জ্যও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ধ্বংস করা হয়েছে।

আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, উহান থেকে বাংলাদেশীদের নিয়ে বিমানের যেসব পাইলট কেবিন ক্রু এসেছেন তাদের প্রত্যেককে ১৪ দিন নিজ বাসায় মাস্ক পরে থাকতে বলা হয়েছিল, বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, তারা সেভাবেই চলছেন।