[ পাতা-১২ ] 08/06/2020
 
জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে আড়াই শতাংশ
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সংস্থাটি বলছে, প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হয় ১৫টি খাত থেকে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রধান পাঁচটি খাত ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে করোনাভাইরাসের কারণে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৩৫ শতাংশ হতে পারে।

সিপিডি অবশ্য বলেছে, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো। প্রবৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর না নিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় উদ্যোগ নিতে হবে। দারিদ্র্য, বৈষম্য ও কর্মসংস্থানের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

গতকাল রোববার 'চলতি অর্থবছরের অর্থনীতি ও বাজেট চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এক পর্যালোচনায় সংস্থাটি এমন মতামত তুলে ধরেছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ পর্যালোচনায় করোনাভাইরাস ও এর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন বাজেটে কী ধরনের উদ্যোগ থাকা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করেন সংস্থাটির গবেষকরা।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংক ২ থেকে ৩ শতাংশ, আইএমএফ ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ১ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে। গত অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে অনেক নিম্নবিত্ত মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। এ অবস্থায় আসন্ন অর্থবছরের বাজেট হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাজেট ঘাটতির বিষয়ে গোল্ডেন রুল ৫ শতাংশের মধ্যে থাকার চিন্তা বাদ দিতে হবে। প্রবৃদ্ধির মোহ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থায়ন সহজ করা, রাজস্ব আহরণ ও উৎপাদনশীল খাতে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়নের সমস্যা আছে। বরাদ্দ কম থাকে। বরাদ্দের ব্যবহারও অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় কম। কেনাকাটায় দুর্নীতির সুযোগ থাকে। এ অবস্থা থেকে বের না হলে লাভ হবে না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সংস্থাটির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করতে পারছে না। এর মাত্রা কতটুকু বাড়বে তা নির্ভর করছে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ওপর। বাজেট বাস্তবভিত্তিক কাঠামোর ওপর দাঁড় করাতে হবে। নতুবা বরাদ্দ থাকলেও তার সুফল পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব এখনও বাড়ছে। করোনার টেস্টিং সুবিধা বাড়ানো ও জোনিং বাস্তবায়ন জরুরি। প্রবৃদ্ধির চেয়ে সংকট মোকাবিলায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। ১২ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবহার করা গেল না। এই সামর্থ্য বাড়ানো দরকার।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়াবে। নতুন করে লকডাউন করা উচিত। নতুবা অর্থনীতি ঠিক হবে না। কেনাকাটায় দুর্নীতি রয়েছে। তা দূর করতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে দক্ষতার সঙ্গে বিনিয়োগ না হওয়ায় অতিরিক্ত সক্ষমতা দেখা দিয়েছে। সহসা বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে তা নয়, কুইক রেন্টালসহ অন্যান্য প্রকল্প ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।

সিপিডির পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। পর্যালোচনায় বলা হয়, বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৭ থেকে ৮ শতাংশ হলেও অসুবিধা নেই। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎসের সব কিছু ব্যবহার করতে হবে। চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংক ঋণ নিয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আগামীতেও থাকবে। তবে এজন্য ব্যাংক প্রস্তুত আছে কিনা তা দেখা দরকার। কালো টাকা অর্থায়নের সুযোগ দিলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকারক হবে। সৎ করদাতাদের মন খারাপ হবে।

পর্যালোচনায় বলা হয়, সাধারণ মানুষের জন্য কর ছাড় দিতে হবে। আড়াই লাখ থেকে করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা করা যেতে পারে। রাজস্ব নীতিতে প্রণোদনা থাকবে, আবার আদায় বাড়াতে হবে। এজন্য ভ্যাট আইন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুন প্রণোদনায় যাওয়ার আগে লাভ-ক্ষতি হিসাব করতে হবে। কর ফাঁকি রোধ, অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। ব্যয় কাঠামো বাস্তবসম্মত হতে হবে। এডিপির মধ্যে প্রাধিকার সৃষ্টি করতে হবে।