[ শেষের পাতা ] 11/02/2021
 
জেএমবির ১৪ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড
সাতক্ষীরার পাঁচটি স্থানে জেএমবির বোমা হামলা মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে তিন থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ সময় একজনকে খালাস দেয়া হয়। অপর এক আসামি আগেই মারা যান। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক শরিফুল ইসলাম বুধবার এক জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে নাঈমউদ্দিন ওরফে নাঈম (পলাতক), ফকরুদ্দিন আল রাজী (পলাতক), মো: মনিরুজ্জামান মুন্না, ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিন সরদার, বেল্লাল হোসেন ওরফে আব্দুল্লাহ, হাবিবুর রহমান ওরফে ইসমাইল ও মাহাবুবর রহমানকে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ও ৪ ধারায় ১৩ বছর করে, নূর আলী মেম্বার ও মনোয়র হোসেন উজ্জলকে ১০ বছর করে, মো: মন্তাজ ওরফে মমতাজ, মো: রাকিব হাসান ওরফে রাসেলকে ৯ বছর করে, আসাদুল হক, আনিছুর রহমান খোকন, আসাদুজ্জামান ওরফে সাঈদ ওরফে হাজারী প্রত্যেককে তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে আসামিদের হাজতবাসের মেয়াদ মূল সাজা থেকে বাদ যাবে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৫-এর ১৭ আগস্ট শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্ক, জেলা জজ আদালত চত্বর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্বর, বাস টার্মিনাল ও খুলনা মোড়সহ পাঁচটি স্থানে একযোগে এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বোমা হামলাকারী শহরতলীর বাঁকালের দলিল উদ্দিন দফাদারের ছেলে নাসিরুদ্দিন দফাদার প্রত্যক্ষদর্শী বাকাল ইসলামপুর চরের রওশানের দেয়া বিবরণ মতে ধরা পড়ে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাতক্ষীরার রসুলপুরে জেএমবির ঘাঁটি চিহ্নিত করা হয়। এই সূত্র ধরে ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিনসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ঢাকায় জেআইসিতে (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়া ছাড়াও জেএমবির বহু গোপন তথ্য জানায় তারা। পরে তাদের ফিরিয়ে আনা হয় সাতক্ষীরায়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরও দেশজুড়ে বোমা হামলা চালানোর অভিযোগে তৎকালীন সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ বাদি হয়ে ২০০৫ সালের পয়লা অক্টোবর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৯(৮) ও ২০(৩) ধারায় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বাংলাদেশের অন্য জেলে থাকা শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানিসহ কয়েকজনকে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

২০০৬ সালের ১৩ মার্চ সিআইডি সব মামলায় ১৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। সে বছরই মামলাগুলো খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো হয়। যথা সময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৭-এর ২৫ জুন মামলাগুলো খুলনা থেকে ফেরত আসে সাতক্ষীরায়। ২০০৮ সালের ১৪ ফেরুয়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে মামলাগুলোর বিচারকাজ শুরু করেন। সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত মামলাটিও ২০০৮ সালে বিচার শুরু হয়। এ সব মামলায় ১৪ জনের সাক্ষী গ্রহণ করা হয়। তবে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদের দায়েরকৃত মামলায় কেবল দু’জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়।

মামলার নথি ও সাক্ষীদের জবানবন্দী পর্যালোচনা শেষে বিচারক ১৪ জন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। একই সাথে পলাতক আসামি আবুল খায়েরকে বেকসুর খালাস দেন। তবে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদের দায়েরকৃত মামলার সব আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে শায়খ রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের এসব মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বাঁকাল ইসলামপুরের নাসিরুদ্দিন দফাদার ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে সাতক্ষীরা কারাগারে মারা যান। আসামিরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করায় মামলার রায় হতে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর লেগে যায়।