[ শেষ পাতা ] 10/03/2022
 
রাশিয়ামুখী কন্টেনার আটকা ॥ বিপাকে রফতানিকারকরা
বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের বড় বাজার হয়ে উঠছিল রাশিয়া। দেশটির সঙ্গে বছরে বাণিজ্য ১১৪ কোটি মার্কিন ডলারের। এ রফতানির সিংহভাগই তৈরি পোশাক, যা ক্রমবর্ধমান। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। আন্তর্জাতিক লেনদেন সংস্থা সুইফট থেকে বাদ পড়ায় রফতানি পণ্যের মূল্য পাওয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। শিপিং কোম্পানিগুলোও ওই রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে। তবে রাশিয়া সরকারের প্রস্তুত করা অবন্ধু তালিকায় বাংলাদেশ না থাকায় একপ্রকার স্বস্তিও আছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। যুদ্ধ থেমে গেলেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ফিরবে আগের অবস্থায়, এমনই আশাবাদ আমদানি ও রফতানিকারকদের।

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই জাহাজ চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ওই রুট। কৃষ্ণসাগরের একটি এলাকাকে ওয়ার জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় কোন শিপিং সংস্থাই রাশিয়ার রুটে চলাচলের জন্য জাহাজ দিচ্ছে না। চারটি শিপিং লাইন ওই পথে জাহাজ পরিচালনা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন রফতানিকারকরা। বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় রফতানির জন্য পোশাক তৈরি করে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। কারণ, তৈরি পোশাক জাহাজীকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। রফতানি করা পণ্যের পেমেন্ট পাওয়া নিয়েও তারা রয়েছেন ঘোর অনিশ্চয়তায়।

পোশাক রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়ায় রফতানির জন্য প্রস্তুত অনেক কন্টেনার পড়ে আছে বেসরকারী আইসিডিগুলোতে। এছাড়া চলমান কাজগুলো নিয়ে চিন্তা আরও বেশি। অর্ডার পাওয়া পোশাকগুলো তৈরি করে কী করা হবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। যুদ্ধ কবে নাগাদ থামবে, তা পরিষ্কার নয়। সে কারণে এ অচলাবস্থাও কতটা দীর্ঘায়িত হবে সেটি অনিশ্চিত।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রাশিয়ায় পণ্য প্রেরণের ক্ষেত্রে উৎপাদক ও শিপিং এজেন্টদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত ১ মার্চ অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যায় রাশিয়া অভিমুখী জাহাজ চলাচল। ফলে ওই দেশের জন্য প্রস্তুত করা পোশাকের জাহাজীকরণও বন্ধ। ইউক্রেনে পণ্য রফতানি এবং সেখান থেকে আমদানির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। পোশাক শিল্প মালিকরা এরমধ্যে যে পণ্যগুলো জাহাজীকরণ করে ফেলেছেন সেগুলোর মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েসনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ আরিফ জনকণ্ঠকে বলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন রুটে বাংলাদেশের বাল্ক কার্গো এবং কন্টেনার উভয় ধরনের জাহাজই চলাচল করে। এরমধ্যে রফতানির পণ্য নিয়ে কন্টেনার শিপগুলো যায় সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হয়ে লোহিত সাগর এবং সুয়েজ খাল অতিক্রম করে। কার্গো জাহাজগুলো চলাচল করে সরাসরি। এ দুদেশ থেকে আমদানি হয় গম, ভুট্টা, ডাল, সরিষা এবং স্ক্র্যাপসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য। বিশে^র অন্যতম শস্যভা-ার ওই অঞ্চলের আমদানির ওপর পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও অনেকটা নির্ভর করে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ব্যস্ততম এ রুট এখন স্থবির।

অফডকে পড়ে আছে রফতানির কন্টেনার ॥ বেসরকারি কন্টেনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, গত শনিবার সকালে বিভিন্ন ডিপোতে ১৬৬টি কন্টেনার ছিল, যেগুলো রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য জাহাজীকরণ হবার কথা। এখনও সে কন্টেনারগুলো রয়েছে ৯টি ডিপোতে। জাহাজীকরণ না হওয়ায় নতুন পণ্য আর আসছে না। হয়ত বা উৎপাদিত পণ্যগুলো বিভিন্ন পোশাক কারখানার ওয়্যার হাউসে মজুদ আছে। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা পণ্য জাহাজীকরণে আগ্রহী নন। শুধু তাই নয়, এ রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। ফলে রাশিয়ার কন্টেনার আর শিপমেন্ট হচ্ছে না। তবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমুদ্রপথে বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স এ্যাসোসিয়েসনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন জনকণ্ঠকে জানান, রাশিয়ায় রফতানির পণ্য গত কয়েকবছর ধরেই উর্ধগামী। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রফতানিকারকরা পণ্য পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। শিপিং কোম্পানিগুলোও যুদ্ধ এলাকার রুটে জাহাজ পরিচালনা ঝুঁকি মনে করছেন। এতে করে রাশিয়ায় প্রেরণের জন্য অফডকে আসা পণ্যগুলোর আর জাহাজীকরণের সম্ভাবনা আপাতত নেই। ইউরোপের অন্য বন্দরে পাঠিয়ে স্থলপথে গন্তব্যে পৌঁছানোও সহজসাধ্য নয়। ফলে পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় না থেকে উপায় নেই।

রাশিয়ার অবন্ধু তালিকায় না পড়ায় স্বস্তি ॥ ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব এবং যুদ্ধ বন্ধের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। পক্ষে কিংবা বিপক্ষ কোনদিকেই ভোট দেয়নি বাংলাদেশ। এতে কিছু সমালোচিত হলেও বাংলাদেশ রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। রাশিয়া এরমধ্যেই তাদের অবন্ধু রাষ্ট্রের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে। এ দেশগুলোকে বাণিজ্য করতে হবে রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে। বাংলাদেশকে সেই ঝক্কিতে পড়তে হবে না। সুইফট থেকে রাশিয়া বাদ পড়লেও যুদ্ধ থামার পর বেশ দ্রুতই এ প্রতিকূল অবস্থা কেটে যাবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।