[ ১ম পাতা ] 15/03/2022
 
ঢাকা বিমানবন্দর থেকে সারাদেশে নেই সরাসরি গণপরিবহন
দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালের বয়স ৩৮ বছর পেরিয়েছে। তবে এ বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশের কোনো প্রান্ত থেকে সরাসরি এ বিমানবন্দরে আসার কোনো উপায় নেই। আবার বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি যাওয়া যাবে না দেশের কোনো জেলাতেই। এমনকি রাজধানীর কোনো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সঙ্গেও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। গড়ে ওঠেনি বিমানবন্দরকেন্দ্রিক সরাসরি গণপরিবহন ব্যবস্থা।

টার্মিনালের সামনে জায়গা দখল করে কিছু প্রাইভেটকার তথা রেন্ট-এ-কার ও সিএনজি অটোরিকশা থাকলেও সেগুলোর ভাড়া নির্ধারিত নয়। এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করে চালকরা। এতে হয়রানির শেষ নেই বিমানবন্দরের যাত্রীদের।

দীর্ঘ সময় উড়োজাহাজে জার্নি করে বিমানবন্দরে নেমে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এরপর ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় যেতে সেখান থেকে গাবতলী, মহাখালী বা অন্য কোনো বাসস্ট্যান্ডে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য যেমন ঝুঁকির তেমনি ঝামেলার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্বের বহু দেশে বিমানবন্দর থেকে গণপরিবহনে সরাসরি যে কোনো গন্তব্যে পৌঁছানোর সুবিধা রয়েছে। এজন্য বিমানবন্দরকেন্দ্রিক মেট্রোরেল, উন্নত বাস সার্ভিস ও ট্যাক্সি সার্ভিস গড়ে তোলা হলে বিদেশফেরত যাত্রীদের বিমানবন্দরের বাইরেও বের হওয়ার প্রয়োজন হয় না। নির্ধারিত সময় পরপর আসতে থাকে মেট্রোরেল বা বাস। আবার বিমানবন্দরের সামনে ট্যাক্সিক্যাব চক্রাকারে ঘুরতে থাকে, যার দরকার সে ইশারা করে সার্ভিস নেয়। ভাড়ার হার সরকার নির্ধারণ করে দেয়, ফলে সেখানে প্রতারিত হওয়ারও সুযোগ নেই। এতে একদিকে যাত্রীদেরও যেমন ভোগান্তি হয় না, অন্যদিকে বিদেশি ট্যুরিস্টরাও যোগাযোগের সুবিধা পায়। আমাদের এয়ারপোর্টের সামনে ডানে-বাঁয়ে সব জায়গায় সিএনজি ও প্রাইভেটকার রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক দেশে এয়ারপোর্টের সামনে এভাবে পার্কিং করা নিষিদ্ধ।

সম্প্রতি ২ নম্বর টার্মিনালে সৌদিফেরত ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বরিশাল থেকে আসা আজগর হোসেন। তিনি জানান, ‘আমি নিজেও দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। অনেক দেশে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি যে কোনো জায়গায় বাসে যাওয়া যায়। প্রাইভেট কারও পাওয়া যায়। অন্যদিকে আমাদের দেশে প্রবাসীরা ভাড়া নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। বিদেশে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই।’

এদিকে ইতালি থেকে আসা সাকিল মিয়া জানান, ‘১২ বছর ইতালিতে বসবাস করছি। চার বছর পর দেশে ছুটিতে এলাম। এখন নোয়াখালীতে যেতে হবে। ছোট ভাইয়ের গাড়ি নিয়ে আসার কথা ছিল। ড্রাইভার অসুস্থ থাকায় গাড়ি আনতে পারেনি। এখানে গাড়িভাড়া চাচ্ছে অনেক বেশি। তাই বাসে নোয়াখালী যেতে হবে। তাই বাসের জন্য এসব ব্যাগেজ নিয়ে গাবতলী অথবা মহাখালী যেতে হবে। আর সিএনজিতে এখান থেকে গাবতলীতে যেতে ৬০০ টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। আর মহাখালীতে ৪০০ টাকা। কী করব নিরুপায়, যেতে তো হবে।’

দুবাই থেকে আসা আরেক প্রবাসী সাহিদুর রহমান বলেন, ‘অনেক দেশে বিমানবন্দর থেকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দর থেকে বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বিমানবন্দর থেকেই মেট্রোরেল, প্রাইভেটকার ও বাস পাওয়া যায়। আমাদের দেশে কোনো কিছু ভালো সিস্টেমে চলে না। এখানে অহরহ সিএনজি ও প্রাইভেটকার পাওয়া গেলেও ভাড়া বেশি। আবার বাসে যাওয়ার কোনো সিস্টেম নেই। সিএনজি ও প্রাইভেটকারে অনেক সময় চুরি-ছিনতাইয়ের ভয় থাকে। বাংলাদেশে বিমানবন্দর থেকে বের হতেই মাছের বাজারের মতো সিএনজি ও প্রাইভেটকারের চালকরা ডাকাডাকি শুরু করে, যা চরম অসভ্যতা। অনেক দেশে এয়ারপোর্টের সামনে সিএনজি ও প্রাইভেটকার এভাবে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে না, রানিংয়ের ওপর ঘুরতে থাকে। যার প্রয়োজন ইশারা করে গাড়ির সার্ভিস নিচ্ছে। সব গাড়িতে কার্ড আর মিটার সিস্টেম থাকায় প্রতারিত হওয়ারও সুযোগ নেই।’

নগর পরিকল্পনাবিদ ও নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শাহজালাল বিমানবন্দরে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিটির বা সারাদেশের কানেক্টিভিটির ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম খুবই বাজে। পরিকল্পনার ঘাটতি আছে। এ বিষয়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে একটা সংবাদ সম্মেলন করেছিল ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। সেই সংবাদ সম্মেলনে এয়ারপোর্টে সংযোগ স্থাপন করে বাসস্টেশন করা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সংযোগ স্থাপন করা ও রেলের সঙ্গে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করার কথা বলা হয়, যাতে যাত্রী বা প্রবাসীরা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রলিতে ব্যাগেজ নিয়ে বাসস্টেশন, রেলস্টেশন বা এলিডেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে সরাসরি ঢাকা সিটিসহ দেশের যে কোনো জেলায় যেতে পারেন। এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে অনেক দিন এটি নিয়ে আর কোনো আলোচনা শুনছি না। বর্তমানে এয়ারপোর্টের যে অবস্থা, এটি কোনো সভ্য দেশের পরিচয় বহন করে না।’ 

এ প্রসঙ্গে ডিটিসিএর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরকে ঘিরে যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বিআরটি-৩, মেট্রোরেল লাইন-১ ও লাইন-৫ বিমানবন্দরকে কানেক্ট করবে। এগুলো মাল্টিমোডাল হাবের সঙ্গেও সংযুক্ত হবে। আবার মেট্রোরেল লাইন-৫ ঢাকার অন্যান্য মেট্রোরেলকে সংযুক্ত করবে। এতে যাত্রীদের মেট্রোরেল দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যাতায়াত করা সহজ হবে। তবে এগুলো নির্মাণে কয়েক বছর সময় লাগবে।