[ শেষের পাতা ] 16/03/2022
 
সূচকের সামান্য উত্থান বেড়েছে লেনদেন
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস গতকাল মঙ্গলবার দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের চমক দেখিয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমলেও বেড়েছে প্রায় সব কয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের দাম। এতে প্রধান মূল্যসূচকের সামান্য উত্থান হয়েছে। সেইসাথে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের প্রথম আট মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

তবে, কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার তালিকায় নাম লেখাতে থাকে, যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। অবশ্য ব্যতিক্রম থাকে মিউচুয়াল ফান্ড। একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমলেও বাড়তে থাকে মিউচুয়াল ফান্ডের দাম। দিনের লেনদেন শেষে ৩৩ মিউচুয়াল ফান্ড দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। বিপরীতে দাম কমেছে মাত্র একটির। অপর দিকে, সব খাত মিলে ১৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে এবং কমেছে ১৯৯টির। আর ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এরপরও দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় এক পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৭৬৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৪৫৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৪৫৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

দিনভার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২১৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৮টির। আর ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৯৮৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১০৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ড্রাগন সোয়েটারের ৩৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমরা নেটওয়ার্ক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ আমরা টেকনোলজি, অগ্নি সিস্টেম, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম, বিডিকম, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, অ্যাডভেন্ট ফার্মা এবং ওরিয়ন ফার্মা।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩২টির এবং ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

জমা হওয়া অবণ্টিত মুনাফার হিসাব নেয়া হবে : শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসার পর থেকে জমা হওয়া অবণ্টিত লভ্যাংশ কোথায় রাখা হয়েছে বা কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, নাকি কেউ নিয়ে গেছে, তা খুঁজে বের করা হবে। এই অর্থ খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক মানের নিরীক্ষক কাজে লাগানো হবে। এর মাধ্যমে ওই টাকা কোথায় গেছে, তা খুঁজে বের করব। যে টাকা নিজের না, তা আপনারা (কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট) নিলেন কেন? অন্যের টাকা নিয়ে নিজেদের বিল্ডিং-বাড়ি বানানোর অধিকার কেউ দেয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি মীমাংসা’-কে কেন্দ্র করে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ ও বিএপিএলসির সদ্যবিদায়ী সভাপতি আজম জে চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সিএমএসএফের সিওও মনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমএসএফের চেয়ারম্যান মো: নজিবুর রহমান।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগকারীদের দাবি মেটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিনিয়োগকারীরা হয়তো অনেক বছর জানতোই না তাদের পাওনা টাকার বিষয়ে। আজকে পাওয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব আসবে। এই বাজারে বিনিয়োগ করলে যে রিটার্ন পাওয়া যায়, তা আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে বাইরে মেসেজ চলে যাবে। এছাড়া তাদের পাওনা আদায় করে দেয়ার জন্য যে রেগুলেটর আছে, সেটা তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে।

তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ জমে থাকার বিষয়টি যখন আমরা তুলে নিয়ে এলাম, তখন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই লভ্যাংশের পাওনাদার বিনিয়োগকারীদের খুঁজে পাচ্ছে। ঠিক আছে পাক। আমাদের উদ্যোগের ফলে যদি বিনিয়োগকারীরা তাদের পাওনা ফেরত পায়, সেটাও ভালো।