[ শেয়ারবাজার ] 24/03/2022
 
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে ৬১ ব্যাংককে বিএসইসির চিঠি
দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে ৬১টি ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মধ্যে যেসব ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেনি তাদের তহবিল গঠন করে বিনিয়োগ করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে যারা এরই মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠন করেছে তাদের নির্ধারিত সীমা অনুসারে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল বিএসইসির পক্ষ থেকে ৬১টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে এ-সংক্রান্ত দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আধিপত্য বেশি, যা মোট বিনিয়োগকারীর ৮০ শতাংশ। দেশের পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বাড়াতে লেনদেনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আধিপত্য থাকবে এটি প্রত্যাশিত। এ প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে এবং এ বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে ভূমিকা রাখবে এবং তাদের ব্যবসায়িক ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা।

বিশেষ তহবিল ছাড়াও ব্যাংক কোম্পানি আইনানুসারে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। এক্ষেত্রে মূলধনের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও সংরক্ষিত আয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে এখনো অনেক ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। এ অবস্থায় যেসব ব্যাংক এরই মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে এবং যাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ মূলধনের ২৫ শতাংশে কম রয়েছে তাদের নতুন করে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ করেছে বিএসইসি। এ ধরনের ব্যাংকের সংখ্যা বর্তমানে ৩৩টি। এর মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক, এআইবিএল, ব্যাংক এশিয়া, দ্য সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইবিএল, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এমটিবি, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল, সাউথইস্ট ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি, উত্তরা ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এখন পর্যন্ত ৩৩টি ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এদের মধ্যে অনেকেরই পুঁজিবাজার বিনিয়োগসীমা মূলধনের ২৫ শতাংশের কম রয়েছে। তাদের বিশেষ তহবিলের পাশাপাশি নির্ধারিত সীমা অনুসারে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশেষ তহবিল গঠন করেনি এ ধরনের ২৮টি ব্যাংককে তহবিল গঠনের পাশাপাশি বিদ্যমান বিনিয়োগ সীমা অনুযায়ী বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

এখনো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন না করা ২৮টি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, ডিবিবিএল, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনবিএল, পদ্মা ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ব্যাংক আল-ফালাহ, সিটিব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, হাবিব ব্যাংক, এইচএসবিসি, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ওরি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বিডিবিএল, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে এগিয়ে এলে ভালো মুনাফা করতে সক্ষম হবে। আশা করি ব্যাংকগুলো কমিশনের অনুরোধে সাড়া দিয়ে পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগ বাড়াবে।

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে গত ৯ মার্চ তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল বিএসইসি। বৈঠকে তিনটি বিষয়ে দুই পক্ষ একমত পোষণ করে। এগুলো হচ্ছে পুঁজিবাজারে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ এখনো তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশের নিচে রয়েছে, তারা সেটি দ্রুত ২ শতাংশ হারে বাড়াবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য যেসব ব্যাংক এখনো বিশেষ তহবিল গঠন করেনি, তারা দ্রুত সেটি গঠন করে বিনিয়োগ করবে। অন্যদিকে মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোর বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব বিএসইসি দ্রুত অনুমোদন করবে। যাতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে পারে।