[ অনলাইন ] 28/04/2022
 
গ্যাসের দাম ০.১৭ টাকা কমানোর প্রস্তাব
গ্যাসের দাম ০ দশমিক ১৭ টাকা কমানোর প্রস্তাব করেছে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) । পাশাপাশি গ্যাস সেবাকে স্বার্থ সংঘাত মুক্ত করার লক্ষ্যে লাইসেন্সিদের পরিচালনা বোর্ডকে আমলামুক্ত করারও প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় অসাধু ব্যবসা প্রতিরোধের লক্ষ্যে ক্যাব ২৫ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) ক্যাবের উদ্যোগে ‘ন্যায্যতা উপেক্ষা করে গ্যাস বাণিজ্য কার স্বার্থে’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান, সহ-সভাপতি শামসুল আলম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। মূল বক্তব্যে শামসুল আলম এ প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেন।

ক্যাবের ২৫ দফা প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হচ্ছে—যেহেতু ১ টাকায় যে গ্যাস পাওয়া সম্ভব সে গ্যাসের অভাব মেটাতে স্পটমার্কেট থেকে ৮৩.৪৭ টাকা মূল্যহারে এলএনজির আমদানির কারণে উদ্ভূত রাজস্ব ঘাটতি ভোক্তা পর্যায়ের গ্যাসের মূল্যহারে সমন্বয়ে ভোক্তাদের আপত্তি রয়েছে। যেহেতু ওপরে বর্ণিত অসংগতির কারণে লুণ্ঠনমূলক ব্যয়বৃদ্ধিতে মূল্যবৃদ্ধি, সেহেতু মূল্যবৃদ্ধি ব্যতীত গ্যাস সরবরাহের নানা পর্যায়ের অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং ট্যাক্স-ভ্যাট ও মুনাফার অংশ বিশেষ সমন্বয় করে ঘাটতি সমন্বয়ের প্রস্তাব করেছে ক্যাব।

বিদ্যমান ভর্তুকি ১০ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা ও উদ্বৃত্ত রাজস্ব ২৫৩৭.৯১ কোটি টাকার এলএনজি আমদানি পর্যায়ে সমন্বয় করে বিদ্যমান মূল্যহার অপেক্ষা গ্যাসের মূল্যহার ০.১৭ টাকা কমানোর প্রস্তাব করছে ক্যাব। তবে এ ক্ষেত্রে সব শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাসের বিদ্যমান মূল্যহার বলবৎ রেখে গ্যাস তছরুপ প্রতিরোধের লক্ষ্যে কেবল আবাসিক গ্রাহকদের চুলায় মাসিক ৭৭ ঘনমিটারের পরিবর্তে ৪০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার ধরে চুলা প্রতি গ্যাসের বিদ্যমান মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করেছে তারা।

এদিকে বিইআরসি’র আদেশ প্রতিপালনে ছাড় দিয়ে গ্যাস তছরুপ ও অবৈধ সংযোগের সুযোগ বজায় রাখার দায়ে তিতাসকে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কস্টপ্লাসের পরিবর্তে শুধু কস্ট বেসিসে পরিচালনার আদেশ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিতাসের বিরুদ্ধে বিইআরসি আইনের ৪৩ ও ৪৬ ধারা মতে ব্যবস্থা গ্রহণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

সঞ্চালনের ক্ষেত্রেও অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত জিটিসিএল’র মুনাফার মার্জিন স্থগিত রেখে ব্রেক ইভেনে পরিচালনার আদেশ প্রদানের প্রস্তাব করেছে ক্যাব। মিটারযুক্ত গ্রাহকদের মিটার ভাড়া আলাদাভাবে আদায়ের পরিবর্তে গ্যাস বিতরণ লাইসেন্সিদের স্ব-স্ব রাজস্ব চাহিদায় সমন্বয় করে বিতরণ চার্জ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে বিইআরসি’র নিয়ন্ত্রণে পক্ষসমূহের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দ্বারা ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’ পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই তহবিলের অর্থ বিইআরসির কর্তৃত্বে এসওসির গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন প্রকল্পসমূহে বিইআরসি অনুমোদিত ৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী সরাসরি ভোক্তা পক্ষের ইক্যুইটি বিনিয়োগ হিসেবে বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিইআরসি অনুমোদিত কৌশলগত পরিকল্পনা ব্যতীত অর্থাৎ বিইআরসি'র আদেশ ও আইন লঙ্ঘন করে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’র অর্থ ব্যয়ের দায়ে পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে বিইআরসি আইনের ৪২, ৪৩ ও ৪৬ ধারা মতে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মূল্যহার বৃদ্ধি না করে গ্যাসের বিদ্যমান মূল্যহার বহাল রেখে সব পর্যায়ের ট্যাক্স-ভ্যাট, লাইসেন্সিদের মুনাফা এবং অযৌক্তিক (লুণ্ঠনমূলক) ব্যয় কমিয়ে ভর্তুকি কমানোর কৌশল গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সে জন্য পক্ষসমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্যাস খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য পক্ষসমূহের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিতাসে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের শনাক্ত করার জন্য সিআইডি, ডিজিএফআই ও এনএসআই'কে দায়িত্ব প্রদানের জন্য তিতাসকে আদেশ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বশেষ এসব প্রস্তাব গণশুনানির প্রস্তাব হিসেবে সরকারের কাছে প্রেরণেরও কথা জানিয়েছে ক্যাব।