ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, শ্রমিক অধিকার এবং কাজের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের কারণে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বিনিয়োগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঢাকায় ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম : বন্ধুত্বের ৫০ বছর’ শীর্ষক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপনের এই সময়ে আমি ভবিষ্যতের কথা ভেবে আনন্দিত। আগেও বলেছি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় এবং সম্প্রসারিত করতে চায়। আমি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সদস্যদের স্বাগত জানাতে পেরে বিশেষভাবে আনন্দিত। আমি নিশ্চিত তারা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণে ইচ্ছুক। সত্যি বলতে কী, আমি বুঝতে পারছি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো সবচেয়ে সম্ভাবনাময়।
মার্কিন দূত বলেন, এটা শুধু কথার কথা নয়। আমরা আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়াতে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি এর প্রমাণ হিসাবে এই গ্রীষ্মে বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ থেকে প্রথমবারের মতো একজন পূর্ণকালীন অ্যাটাশেকে স্বাগত জানানো হবে। এর ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গড়ে তুলবেন, সত্যি বলতে যা আরও আগেই হওয়া দরকার ছিল। এছাড়াও আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বাধীন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলকে আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় উচ্চস্তরের অর্থনৈতিক ফোরামে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছি। সেখানে উভয় দেশ বিভিন্ন খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবে। এককথায় বলতে পারি-আমরা একত্রিতভাবে যে ভিত্তি গড়ে তুলেছি, সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। তবে সম্পর্কের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় অবশ্যই ঘটতে হবে। প্রথমত, আমেরিকান কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের আরও ভালোভাবে জানতে হবে তাদের জন্য বাংলাদেশে কী ধরনের সুযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশকে অবশ্যই আমেরিকান ব্যবসায়ীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাংলাদেশের ব্যবসার বেশকিছু পয়েন্ট তুলে ধরে মার্কিন দূত বলেন, প্রথমত বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতির অগ্রগতির গল্পটা দারুণ। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের দ্রুততম সময়ে বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই দেশের জিডিপি এমনকি কোভিড-১৯ লকডাউনের সময়েও বেড়েছে এবং অর্থনীতি এই বছর ৬.৯ শতাংশ এবং পরের বছর ৭.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে একটি বিশাল এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনসংখ্যা রয়েছে। ১৯৭১ সালে পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোর কাতারে থাকা বাংলাদেশের জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটবে ২০২৬ সালে। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি এখন ভারতের তুলনায় বেশি। ১৬ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে দেশটি এখন বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ, যেখানে যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি এবং কানাডার চেয়ে চারগুণ বেশি জনসংখ্যা রয়েছে। যে কোনো কোম্পানি এখন বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারলে তাদের জন্য প্রজন্মান্তরে বিনিয়োগের লাভ ফেরত পাওয়া নিশ্চিত।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে কর্মে আগ্রহী ও ইচ্ছুক জনবল রয়েছে। বাংলাদেশ এখন তাদের জনমিতিক সুবিধা নেওয়ার অবস্থানে রয়েছে। এই দেশের জনবল তরুণ এবং এখানে সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।
চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানির জন্য বাংলাদেশ একটি অজানা অঞ্চল। যে কারণে তারা জানে না বাংলাদেশ তাদের কী দিতে পারে। এর মানে এখানে এই বাজারে যে কোম্পানিগুলো শুরুর দিকে প্রবেশ করবে তারা পরিপক্ব বিনিয়োগ গন্তব্যগুলোর তুলনায় কম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে। যে কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল গঠন করেছে তারা বাংলাদেশে কী ধরনের ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা আছে সে সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে সচেতন রয়েছে। প্রশ্ন হলো-বাংলাদেশ কি তাদের জন্য প্রস্তুত? উল্লেখ্য, শ্রমিকের অধিকার এবং কাজের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের কারণে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জেনারাইলজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স ট্রেড বেনিফিট বা জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।