ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সি খুলে বিমানের টিকেট বিক্রি ও
রিফান্ড করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেত একটি চক্র। পরে ওই
যাত্রী ফ্লাইটের তারিখে বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারতেন তার টিকেট বাতিল
হয়েছে। তখন চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকত না। এয়ারলাইন্সের
টিকেটের নামে অহরহ মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতানো এই চক্রটির মূল টার্গেট
ছিল সামনের হজ মৌসুম। এ চক্রের মূলহোতা মাহবুবুর রশিদ নামে এক প্রতারককে
গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের
প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
গতকাল
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে
তিনি বলেন, গত বুধবার রাজধানী গ্রিনরোড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়
তার কাছ থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ৮১টি টিকেট উদ্ধার করা হয়, প্রতারণার
কাজে ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন, দুইটি কম্পিউটার, একটি প্রেস লেখা জিপ
গাড়ি, ১২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, একটি ডাচ-বাংলা এটিএম কার্ড উদ্ধার করা
হয়েছে।
প্রাথমিক
জিজ্ঞাসাবাদে মাহবুব জানিয়েছেন, বিমানের টিকেট আগাম বিক্রি করে নির্দিষ্ট
ফি জমা নেয়ার পরে যাত্রীদের ই-টিকেটের পূর্ণ ভ্রমণ বৃত্তান্ত দেয়া হতো। পরে
ই-টিকেট বুকিংয়ের টাকা রিফান্ড করে তুলে নেয়া হতো। এমতাবস্থায় ফ্লাইটের
দিন যাত্রীরা বিমানবন্দরে গিয়ে টিকেট বাতিল ও পেমেন্টকৃত টাকা রিফান্ড করে
তুলে নেয়া হয়েছে বলে জানতে পারতেন। পরবর্তী সময়ে যাত্রীরা ওই ট্রাভেল
এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করলে আবার ৫০ হাজার অথবা এক লাখ টাকা ফি নিয়ে একই
রকম টিকেট দিত। এভাবে একপর্যায়ে টিকেট এজেন্সির লোকরা মোবাইল বন্ধ করে অফিস
বদল করে লাপাত্তা হয়ে যেত।
ডিবিপ্রধান
বলেন, এখন পর্যন্ত চক্রটি বেশ কয়েকটি অফিস বদল করেছে। সর্বশেষ বসুন্ধরায়
অফিস ছিল তাদের। মাহবুবকে আটক করার পর ২৭ জন ভুক্তভোগী ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে
প্রতারণার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। মাহবুবের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দায়ের
করা হয়েছে। পুরনো আরো তিনটি মামলা পাওয়া গেছে।
এক
প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রতারক মাহবুব এমকিউ ট্রেড এন্ড
ট্রাভেল কনসালটেন্সির প্রধান নির্বাহী (সিইও) বলে দাবি করে প্রতারণা করে
আসছিল। তার সহযোগী জাহাঙ্গীর বিভিন্ন ক্লায়েন্ট সংগ্রহ, তাদের সঙ্গে
যোগাযোগ রাখা ও বিভিন্ন ট্রাভেলিং এন্ড ট্যুর এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয়ের
মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত টাকা নিয়ে বণ্টন করত।
এ
কাজে তাকে আরো সহযোগিতা করত দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিক সাদ। দুবাই ও
পাকিস্তানের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স থেকে টিকেট সংগ্রহ করে মাহবুবকে পাঠাতো
সাদ। পরে প্রতারণার টাকা সাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে তার আত্মীয়স্বজনকে
পাঠিয়ে দিত মাহবুব।
এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, শুধু এয়ারলাইন্সের
টিকেট বিক্রি নয়, কানাডায় লোক পাঠানো, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চালের বড় চালান
সরবরাহ, নদী ড্রেজিংয়ের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে
প্রতারণা করেছেন মাহবুব। এই চক্রটির অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে,
পাশাপাশি আর কোনো চক্র এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা
হচ্ছে।