[ প্রথম পাতা ] 21/05/2022
 
সোমবার পাম অয়েল রফতানি শুরু করবে ইন্দোনেশিয়া
তিন সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ২৩ মে আবার পাম অয়েল রফতানি শুরু করবে ইন্দোনেশিয়া। দেশের অভ্যন্তরে রান্নার তেল সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো। এর আগে রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলনরত কৃষকরা সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বেশ খুশি।

রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক দেশটি গত ২৮ এপ্রিল দেশের বাইরে অপরিশোধিত পাম অয়েল সরবরাহ স্থগিত করে। সেই সঙ্গে এ সম্পর্কিত অন্যান্য পণ্য রফতানিও বন্ধ করে তারা। পূর্ববর্তী সরকারের নেয়া বেশকিছু পদক্ষেপের কারণে দেশটির বাজার ব্যবস্থা বেশ বিপর্যস্ত ছিল। তাই দেশের বাজারে পণ্যটির বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণ করতেই এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু তার বিরোধিতা শুরু করেন দেশের কৃষক।

এমন পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সরকার। গতকাল প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো বলেন, রান্নার এ তেল সরবরাহ এখন প্রয়োজনের তুলনায় ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে। যদিও দাম এখনো প্রতি লিটারে নির্ধারিত ১৪ হাজার রুপিয়ায় পৌঁছেনি। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, বেশকিছু অঞ্চলে এখনো দাম তুলনামূলকভাবে বেশি রয়ে গিয়েছে। প্রত্যাশা করি, সামনের দিনগুলোয় তা আরো নাগালের মধ্যে চলে আসবে। যদিও রফতানি আবার শুরু হচ্ছে, কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী সুলভ মূল্যে যেন পণ্য সরবরাহ করা যায়, সেজন্য সরকার সবকিছু খুব গভীরভাবে তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ করবে।

শিল্প গ্রুপগুলো বলছে, পাম অয়েলের ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকলে এ খাত বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সরকার ১ কোটি ৭০ লাখ শ্রমিকের ভালো-মন্দের কথা বিবেচনা করেছে।

সংসদ সদস্যদের বাজেট কমিটি এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অর্থমন্ত্রীর কাছে রফতানি নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে আহ্বান জানান। ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে সূর্যমুখী তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় যখন বিশ্বব্যাপী উদ্ভিজ্জ তেলের বাজারে সংকট তৈরি হয়, সে সময়ই এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইন্দোনেশিয়া সরকার। বিশ্বের উদ্ভিজ্জ তেলের বাজারের তিন ভাগ পাম অয়েলের দখলে।  এ চাহিদার ৬০ ভাগ আসে ইন্দোনেশিয়া থেকেই।

দেশের বাজারে রান্নার তেলের ওপর অসন্তোষ মোকাবেলায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ইন্দোনেশিয়ার কৃষকরা দেখেন পাম ফলের চাহিদাও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তার পরই তারা সেটা তুলে দেয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। দেশজুড়ে পাম ফলের দাম নাটকীয়ভাবে কমে গেলে এ সপ্তাহের শুরুতে রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য শোভাযাত্রাও করেন কৃষকরা।

প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে পাম অয়েল ফার্মার ইউনিয়ন এসপিকেএস বলে, প্রত্যাশা করি গাছের পরিচর্যা কার্যক্রম আবার আগের অবস্থায় ফিরবে এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

ইন্দোনেশিয়া ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সাহাত সিনাগা বলেন, ইন্দোনেশিয়ার ৬০ লাখ টন সংরক্ষণ সক্ষমতা রয়েছে। মে মাসের শুরুতেই সেখানকার পাম অয়েলের মজুদ ৫৮ লাখ টনে পৌঁছে।

এখনো বিক্রির অনিশ্চয়তার অজুহাতে বড় বড় পামচাষী প্রতিষ্ঠান চাষাবাদের বিরতিকে আরো বেশি দীর্ঘ করছে আর ছোট ছোট কৃষক পাম অয়েল মিলের বাইরে লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন নিজেদের উৎপাদিত ফল বিক্রির জন্য। আশা করা যায়, রফতানি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাম অয়েল উৎপাদনও নতুন করে শুরু হবে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ, চাষাবাদ কমে যাওয়া এবং কভিড-১৯ মহামারীর কারণে পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধি আরো ত্বরান্বিত হয়। পরে ঈদুল ফিতরের সময়েও দাম বাড়তির দিকেই ছিল। এ সময়ে সমাধান হিসেবে পাম অয়েল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন প্রেসিডেন্ট। ইন্দোনেশিয়ায় ২৭ কোটি জনগণের বাস। বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক ও রফতানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া। ২০২১ সালে দেশটির মোট রফতানির ১৩ শতাংশই ছিল এ ভোজ্যতেল। খাত হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় তৃতীয় বৃহত্তম অবস্থানে রয়েছে এটি।

গত মাসে জোকো উইডোডো পাম অয়েল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে সে ঘোষণায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ে গোটা বিশ্ববাজারে। সরকারের দেয়া এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন ইন্দোনেশিয়ার ১ কোটি ৬০ লাখ ক্ষুদ্র পামচাষী। কেবল ভোজ্যতেলের দামই নয়, বাড়তে থাকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের দামও। এ পরিস্থিতিতে রফতানি শুরু করতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও পড়ে দেশটি। এমনকি সরকারি এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে দাঁড়ান ইন্দোনেশিয়ার কৃষকও। তারা বাজারের জন্য শক থেরাপি হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞাকে বেছে নেয়ার বিপক্ষে ছিলেন, যেটা তাদের জীবিকার ক্ষতি করছে। তাই এমন নিষেধাজ্ঞার তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন কৃষকরা।