[ শেষের পাতা ] 27/05/2022
 
দৌলতদিয়ায় জুয়াড়ি দালাল ও প্রতারকের দৌরাত্ম্য
দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে জুয়াড়ি, দালাল ও প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সময় পুলিশের অভিযানে এদের অনেককে গ্রেফতার করা হলেও কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না চক্রটির কার্যক্রম। ছাড়া পেয়ে অথবা জামিনে বেরিয়ে এসে তারা আবারো এসব অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। আর এ কারণে প্রতিনিয়ত এ রুটের সাধারণ যাত্রী, চালক ও হেলপাররা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। মাঝে মধ্যেই এদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে বিআইডব্লিøউটিসির লোক সেজে জালিয়াতির মাধ্যমে ফেরির পুরনো টিকিট বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ছয় হাজার টাকা। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে সোহেল রানা চৌধুরী (২৮) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ট্রাকচালক। সোহেল রানা দৌলতদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর ছেলে।

এ ছাড়া ঘাটে মাছ, ফল, কাঠ, পান, সবজি ও চালসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ি পারাপারে দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের ছাড়া পরিবহন চালকরা নিজ হাতে নায্যমূল্যে ফেরির টিকিট কাটতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে তাদের গুনতে হয় বাড়তি টাকা।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, টিকিট নিয়ে প্রতারণার বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্ত সোহেল রানা চৌধুরীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে তিনি পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া দালালদের বিরুদ্ধে তাদের নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। অভিযানে মাঝে মধ্যেই দালাল চক্রের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়।

অপর দিকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার এ নৌরুটে চলাচলকারী ফেরিতে জুয়াড়ি চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত ২০ মে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া রো রো (বড়) ফেরি কেরামত আলী মাঝ নদীতে পৌঁছলে যাত্রীবেশে থাকা নৌ পুলিশের একটি দল চার জুয়াড়িকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া সিদ্দিক কাজীপাড়ার বরকত মোল্লা (৪২), উত্তর দৌলতদিয়া ঢল্লা পাড়ার নুরু খাঁ (৫৩), বাহির চর দৌলতদিয়া শাহাদৎ মেম্বার পাড়ার উসমান মোল্লা (৫৪) ও একই গ্রামের সাগর হোসেন (৩৭)। এ সময় রেজাউল শিকদার (৩০) নামের একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পুলিশ তাদের কাছ থেকে তাস, কুপি বাতি, জুয়া খেলার একটি বোর্ড এবং নগদ ৫০০ টাকা জব্দ করে। গ্রেফতারকৃতদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুল হক খান। ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়ার উভয় ঘাট থেকে রাতে ছেড়ে যাওয়া বেশির ভাগ ফেরি মাঝ নদীতে পৌঁছলে জুয়াড়ি চক্র ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ফেরিতে উঠে পড়ে। এরপর তারা ফেরির এক কোনায় কুপি বাতি জ্বালিয়ে প্রথমে নিজেরা চার-পঁপচজন বসে তাস নিয়ে খেলা শুরু করে। এ সময় কোনো যাত্রী বা গাড়িচালক খেলায় আগ্রহ দেখিয়ে বসলে সঙ্ঘবদ্ধ সদস্যরা তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। কেউ এগিয়ে গেলে ধারালো ছুরি বা চাকু দিয়ে আঘাত করে দ্রুত নৌকা নিয়ে সটকে পড়ে। ঘাট সৃষ্টির শুরু থেকেই জুয়াড়িরা তাদের এ পেশা চালিয়ে যাচ্ছে।

দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ওসি) সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, এসব জুয়াড়িরা নেশার সাথে জড়িত। আমরা তাদের দমনে সর্বদা সতর্ক থাকি। তবে প্রতিটি ফেরিতে পুলিশ দেয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে ফেরি কর্তৃপক্ষ, সাধারণ যাত্রী, চালক ও অন্যদের সতর্ক থাকতে হবে।